ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অপার লীলাভূমি সাতক্ষীরা জেলা। জেলাটি বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক দিয়ে দেখলে সাতক্ষীরা জেলার উত্তরে যশোর জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে খুলনা জেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। অবস্থানগত দিক দিয়ে সাতক্ষীরা জেলার অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তে। উচ্চতার দিকে বিবেচনা করলে এ অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ১৬ ফুট উচুঁতে। সাতক্ষীরার মোট আয়তন ৩৮৫৮.৩৩ বর্গ কিলোমিটার।
জেলার সীমানা যেভাবে নির্ধারিত হয়েছে তাতে উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ। তবে এ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সব অংশে জনবসতি নেই। এর মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ বনাঞ্চল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনের (সুন্দরবন) ১৪৪৫.১৮ বর্গ কিলোমিটার সাতক্ষীরার অন্তর্গত। আর এ ঐতিহ্যবাহী পুরো সাতক্ষীরা জেলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন যার মধ্যে অন্যতম সোনাবাড়িয়া মন্দির। প্রায় ১৮ শতকের মাঝামাঝির দিকে নির্মিত এই মন্দির ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ধীরেধীরে হারাচ্ছে এর ঐশ্বর্য।
স্থানীয়দের কাছে এটি নানা নামে পরিচিত। কারো কাছে শিব মন্দির, কেউ বলেন দুর্গা মন্দির,আবার কেউ নবরত্ন মন্দির বলে চেনেন। দেখতে তিনতলা বিশিষ্ট হলেও এটি প্রায় ৬০ ফুট উঁচু একটি মঠ। ইটের গায়ে পলেস্তার খসে পড়ছে প্রায়। সে সময়ের ইটের ওপর কারুকাজ লক্ষ্য করা যায়। প্রধান ফটকে চোখ রাখলেই অসমীয়া লেখা চোখে পড়ে। ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে হরিরাম দাস নামক ব্যক্তি এটি নির্মাণ করেছিলেন। স্থানীয়দের মধ্যে এই নবরত্ন মন্দির নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে কেউ কেউ বলেন এই মঠ এক রাতে মাটি ফুঁড়ে বের হয়,যদিও এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এই মন্দির বেশ কিছুদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল পরবর্তীতে উনিশ শতকের শেষের দিকে স্থানীয় হিন্দুরা এটিকে সংস্কার করে পূজা অর্চনা শুরু করে। মোট ৪৫ বিঘা জায়গার উপর এই মন্দির নির্মিত। নানা ফলের গাছ রয়েছে এখানে । মন্দিরের পাশেই ভাঙা বারটি ঘর রয়েছে। ঘরগুলোতে ১২ টি শিব মন্দির ছিল যা চুরি হয়ে গেছে। মন্দিরের সামনে একটি পুকুর রয়েছে। উত্তর-দক্ষিণে এই মন্দির ২০×১৫ ফুট। অনেকে মনে করেন এটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোক তৈরি করেছিল পরে সুবিধা না করতে পেরে এই অঞ্চল ত্যাগ করে। স্থানীয়দের দাবি সরকার এই মন্দিরের দিকে সুদৃষ্টি দিলে পর্যটকদের কাছে এটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
কলারোয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী সোনাবাড়িয়ায় আম, কাঠাল, নারিকেল, মেহগনি, সেগুন ও দেবদারু গাছের বাগান দিয়ে ঘেরা ১৫ একর জমির ওপর অবস্থিত মন্দিরটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট চওড়া। মন্দিরের সামনে একটি বড় পুকুর। মন্দিরের পূর্ব পাশ দিয়ে উত্তর- দক্ষিণে লম্বা ১২টি ঘরে ছিল ১২টি শিবলিঙ্গ।এছাড়াও মূল মঠ মন্দিরের দোতলায় ঝুলন্ত দোলনায় থাকত সোনার রাধাকৃষ্ণ মূর্তি। মন্দিরের পুকুরের পাশ দিয়ে ঢুকতেই ছিল বড় তোরণ। তার ওপর ছিল নহবতখানা। প্রবীণদের কাছ থেকে এ মঠ মন্দির সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
প্রাচীনকালে বৌদ্ধধর্ম প্রচারকালে গৌতম বুদ্ধের অনুসারীরা এখানে মঠ মন্দির তৈরি করে। বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসারে সুবিধা করতে না পেরে বুদ্ধের অনুসারীরা সোনাবাড়িয়া ত্যাগ করে। এরপর মঠ মন্দিরটি কিছুকাল পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। পরে মঠ মন্দিরটি পুনরায় নির্মাণ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এটিকে মন্দিরে রূপান্তরিত করে।
কিভাবে যাবেনঃ
কলারোয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি জনপদ সোনাবাড়িয়া। ২শ’ বছর আগের গোটা সোনাবাড়িয়াজুড়ে জমিদার শাসনের নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। এমনই এক প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক সোনাবাড়িয়া মঠ মন্দির। প্রায় ৬০ ফুট উঁচু টেরাকোটা ফলক খচিত শ্যামসুন্দর মন্দিরটি আজও দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন স্থাপত্যের অনুরূপ নিদর্শন হয়ে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।