জেমস আব্দুর রহিম রানা | স্টাফ রিপোর্টার : গ্রামের অজ পাড়াগাঁয়ে বেড়ে ওঠা অতি সাধারন পরিবারের সন্তান লেখক ভট্টাচার্য্য। যিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় এই সময়ে একটি আলোচিত নাম। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন হিসেবে বিবেচিত ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদকের নেতৃত্ব দিচ্ছেন লেখক ভট্টাচার্য্য।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে কারও অনুকম্পা ও বদান্যতায় তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত হননি । নিজ মেধা, প্রজ্ঞা,দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা ও সাংগাঠনিক বিচক্ষনতার সাথে ছাত্রলীগের কর্মী হয়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েই তিনি এ নেতৃত্বভার পেয়েছেন।

ইতোমধ্যে সারা বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটকে ঢেলে সাজানোর কাজে তিনি দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে চলেছেন। পাশাপাশি বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ (নভেল করোনা) মোকাবেলায় কখনও নিজে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে আবার সংগঠনের দেশের প্রতিটি ইউনিটকে নির্দেশনা দিয়ে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করছেন ও বিভিন্ন কল্যানমূখি কাজে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

তাঁর এ সব কর্মকান্ড দেশব্যাপি সমাদৃত হয়েছে। তিনিও হয়েছেন প্রশংসিত। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ঘুঘুদহ গ্রামের একটি অতি সাধারন পরিবারে জন্ম লেখক ভট্টাচার্য্যের। তাঁর বাবা দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য ওরফে মাখন ভট্টাচার্য্য যাত্রাভিনেতা হিসেবে এলাকায় সমধিক পরিচিত।

মা শিপ্রা ভট্টাচার্য্য অত্যান্ত ভদ্র,অমায়িক ও মিষ্টভাষী একজন গৃহিনী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে লেখক সবার ছোট। স্থানীয় প্রাইমারী স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ন হয়ে স্থানীয় গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে লেখক যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইসএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যাালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তি হন। তাঁর বাল্য বন্ধু মেহেদি হাসান ও প্রতিবেশী গোপালপুর হাইস্কুলের শিক্ষক কাঞ্চন ঘোষাল জানান, লেখক ভট্টাচার্য্য ছোট বেলা থেকেই অত্যান্ত মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের ছিলেন।

স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি, বক্তৃতা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় খুবই পারদর্শী ছিলেন। স্কুলে বিভিন্ন দিবস উদযাপন ও স্কাউটিংয়ে লেখকের নেতৃত্ব ছিলো অগ্রভাগের। এমন নেতৃত্ব গুনাবলীর প্রতিফলন দেশের সেরা বিদ্যাপিঠ হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে বিভিন্ন সাংগাঠনিক কর্মসূচি ও কর্মকান্ড পালনের মাধ্যমে তিনি আজ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষপদে আসীন হতে পেরেছেন। তাঁর আজকের এই অবস্থানের জন্য তাঁর বন্ধু-বান্ধব,আত্বীয়-পরিজন, প্রতিবেশী,শিক্ষকবৃন্দ তথা মণিরামপুরের আপামর জনগন ও ছাত্রসমাজ গর্বিত। সবার মুখে শোনা যায়, মণিরামপুরের এক গ্রাম্য নিভৃত পল্লীর সরল শান্ত স্বভাবের লেখক আজ কেন্দ্রীয় রাজনীতির ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

এ যেন মণিরামপুরবাসীর এক স্বপ্নে পাওয়া রাজপুত্র! লেখকের মা শিপ্রা ভট্টাচার্য্য জানান, আমার লেখক অনেক কষ্ট করে আজ এই পর্যন্ত পৌছেছে। তাদের সহায় সম্বল যা ছিলো তার বেশিরভাগ বাবার চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয়েছে। তবুও তাঁর বাবাকে সুস্থ্য করে তুলতে পারিনি। ২০০৮ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে টানা ৪ বছর শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তার বাবা। ভারতসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার পরও ২০১২ সালের ২৭ মার্চ তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।

এরপর দুই ছেলের পড়ালেখার খরচ ও তাদের ভবিষ্যত নিয়ে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। ছেলেদের পড়াশুনা চালাতে গিয়ে বাড়ির গাছ-গাছালি বিক্রি করেছেন। টিউশনি করেও ছেলেরা পড়া-লেখার খরচ যুগিয়েছে। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমার লেখককে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক করার পর খুব খুশী হয়েছিলাম শেখ হাসিনার প্রতি। আর আজ আমার লেখক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছে। এটি একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনারই অবদান।

জীবনের দুরন্ত শৈশব-কৈশরের অধিকাংশ সময় যার গ্রামে কেটেছে সেই গ্রাম্য বালক লেখক ছাত্রলীগের ন্যায় বৃহৎ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার পর গত ২৮ ও ২৯ মার্চ মাত্র দু’দিনের জন্য প্রথম নিজ এলাকায় এসেছিলেন। গ্রামে এসেই পুরোনো দিনের সেই মধুর দিনগুলির স্মৃতি কথা সে ভুলতে পারেনি। তাইতো বাল্যবন্ধুদের ফোন করে ডেকে নিয়ে গ্রামের মেঠো পথে আড্ডা দিয়েছেন, জাল নিয়ে পুকুরে মাছ ধরেছেন। গ্রামবাসী ও প্রতিবেশীদের সাথে সঙ্গ দিয়ে আবার ফিরে যান ঢাকাতে।

রোজা শুরুর পর থেকে ঢাকা ও ঢাকা শহরের আশেপাশে পথচারীসহ খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে ইফতারি বিতরণের দৃশ্য দেখেও অনেকে তার সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্যও করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশসংসার জোয়ারে ভাসছেন তিনি। এসব কর্মকান্ডের চিত্র দেখে নিজ এলাকার সর্বস্তরের জনতা তাকে নিয়ে এখন গর্ব করছেন।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আতিয়ার রহমান বলেন, স্কুলে পড়াকালিন থেকেই লেখক শান্তশিষ্ট, নম্র-ভদ্র স্বভাবের ছিলো। ছিলো তার ভিতর নেতৃত্বের অনেক শুনাবলী।

নেতৃত্ব ও মানবিক গুণাবলির কারণে মণিরামপুরের অতি সাধারন পরিবারের সন্তান লেখক ভট্টাচার্য্য আগামীতে রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে পৌছে যাবে এলাকার অনেকেই এমনটি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।