ঢাকার অতিরিক্ত জনসংখ্যা, যানজট, বায়ু দূষণ এবং বাসস্থানের সংকটের কারণে রাজধানী হিসেবে শহরটির উপর চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। তাই বিশেষজ্ঞরা এবং নীতি নির্ধারকরা প্রশ্ন তুলছেন—ঢাকার বিকল্প কোথায় হতে পারে? বিশ্লেষণে উঠে এসেছে পাঁচটি সম্ভাব্য শহরের নাম, যেখানে ঢাকার তুলনায় সুবিধাজনক পরিবেশ এবং উন্নয়ন সম্ভাবনা রয়েছে।

১. চট্টগ্রাম: দেশের প্রধান বাণিজ্যিক শহর, যেখানে উন্নত বন্দর এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকার বিকল্প হিসেবে চট্টগ্রাম শক্তিশালী প্রার্থী হতে পারে, বিশেষত এর সমুদ্রপথ এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্ব।

২. রাজশাহী: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি সহ রাজশাহী কৃষি এবং শিল্পের ক্ষেত্রে বিশাল সম্ভাবনা রাখে।

৩. সিলেট: পাহাড় এবং হাওরের সৌন্দর্যে ভরপুর সিলেটের পরিবেশ ঢাকার তুলনায় অনেক ভালো। এটি আন্তর্জাতিক যোগাযোগের সুবিধা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের কারণে সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে।

৪. খুলনা: বন্দর নগরী খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন এবং শিল্প খাতের বিকাশে বড় ভূমিকা রাখতে পারে, যেখানে পরিবেশগত মানও তুলনামূলকভাবে ভালো।

৫. বরিশাল: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং কৃষি খাতে গুরুত্ব থাকা বরিশাল তার জলবায়ু এবং শিল্পের উন্নতির মাধ্যমে বিকল্প রাজধানী হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

বিশ্লেষণ থেকে এসব শহরের বিভিন্ন শক্তি উঠে এসেছে, যা ভবিষ্যতে ঢাকার চাপ কমানোর জন্য কার্যকরী হতে পারে।

এক ভদ্রলোক আছেন যিনি ঢাকা শহরের অস্তিত্ব নিয়ে বেশ চমৎকার সব লেকচার দিয়ে বেড়ান। উদ্দেশ্য ঢাকাকে রক্ষা করা। তাঁর বক্তব্য থেকে জানতে পারলাম আগামী দশ বছরের ভেতরে ঢাকার স্যুয়ারেজ লাইন কলাপস করবে।

দুঃখজনক এই ঘটনা যদি ঘটেই যায় কি হতে পারে? আজকে সামান্য বৃষ্টির কারণে যে জলাবদ্ধতা আপনি দেখতে পাচ্ছেন এরচাইতেও ভয়াভয় অবস্থা সৃষ্টি হবে না? কল্পনা করুন দৃশ্যটা, ঢাকার শহরের সকল রাস্তা ডুবে যাচ্ছে স্যুয়ারেজ আবর্জনাতে। পানি তাও ধীরে ধীরে নেমে যাবে.. কিন্তু সেই আবর্জনা? অবশ্য সেই ভয়াভয় আবর্জনা ঢাকা বাসী দেখে যাওয়ার আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে।

স্যুয়ারেজ সিস্টেম কলাপস করার পর আবর্জনা রাস্তার উপর আসার আগেই ওয়াসার পানি বণ্টন সিস্টেমটাকে ধ্বংস করে দিবে। রাতারাতি ভয়াভয় সব ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে নগরবাসী। পরিনতি স্রেফ মৃত্যু! স্যুয়ারেজ সিস্টেম কলাপস্‌ হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে যদি এখনি পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তা হলে মৃত্যুর আগেই একবার নরক দর্শন হয়ে যাবে ঢাকাবাসীর।

আমাদের ভাগ্য যদি খুব ভাল হয় তা হলে সরকার হয়তোো এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে। কিন্তু এক স্যুয়ারেজই আমাদের জন্য হুমকি নয়। আরো বহুবিধ হুমকি রয়েছে। এরভেতরে সবচাইতে ভয়াভয়টি হচ্ছে ভূমিকম্প।

ঢাকার শহরে যেভাবে অপরিকল্পিত নগরায়ন হয়েছে এবং বিল্ডিং কোড না মেনে স্থাপনা তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে তাতে করে ভূমিকম্পের ক্ষতি আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অনেকের মতে মাঝারী মানের একটা ভূমিকম্পই ঢাকা শহরের ৬০ ভাগ বিল্ডিং ধ্বসে ফেলার জন্য যথেষ্ঠ।

বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানা যায় ঢাকা শহরের ঠিক মাঝ বরাবর টেকটোনিক প্লেটের একটি সংযোগস্থল আছে। মানে দুই প্লেটের মাঝের ফাটলটা আমাদের শাহবাগের নিচ দিয়ে ঢাকা শহরকে আড়াআড়ি ভাগ করে দিয়ে গিয়েছে। যার ফলে ভূমিকম্প হলে সেটার ধ্বংসের পরিমাণও অনেক বেশি হবে।

আবার ঢাকা শহরের বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য অতিরিক্ত পানি পাম্প করার কারণে ভূ-গর্ভস্থ যে শূন্যতা তৈরি হচ্ছে তাতে করে পুরো শহর রাতারাতি ডেবে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এই এলাকায় প্রতি ১১০ বছর পরপর বড়ধরনের একটা ভূমিকম্প হওয়ার কথা। শেষবার এখানে এরকম বড় ভূমিকম্প হয়েছে ১৮৯৭ সালে তথা ১১২ বছর আগে। সুতরাং যেকোন সময় এই এলাকায় বড় একটি ভূমিকম্প হওয়ার কথা।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ডেটা এনালাইসিস করেও জানা যায় তেমন একটি ভূমিকম্প আমাদের এখানে হতে যাচ্ছে। অথচ অপেক্ষমাণ এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন প্রস্তুতি আমাদের নেই।

এছাড়াও আরো অনেক বিষয় আছে যাতে বুঝা যায় পরিত্যক্ত নগরী হওয়ার পথে আছে আমাদের প্রিয় ঢাকা নগরী। তেমনটিই যদি হয়, তা হলে বিকল্প রাজধানী নিয়ে এখনি ভাবা উচিত। একই সাথে এই বিষয়টি নিয়ে জনসেতনতা তৈরিতে সবার এগিয়ে আসতে হবে। তাতে হয়তো ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কম হবে, রক্ষা পাবে অনেক জীবন।