বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে উচ্চ শিক্ষার একমাত্র নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরিদ আহমেদ তার অধীনস্থ এক প্রভাষককে কলেজ প্রদত্ত বেতনের অংশ থেকে বঞ্চিত করায় ওই প্রভাষক স্ট্রোক করেছেন বলে জানা গেছে।
তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। নন এমপিও ওই প্রভাষকের নাম রনজিৎ কুমার মন্ডল। তিনি বোয়ালমারী পৌরসভার কামারগ্রামে অবস্থিত কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের সমাজকর্ম বিষয়ের অনার্সের প্রভাষক।
তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে প্রথমে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নেয়া হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রভাষক রনজিৎ কুমার মণ্ডলের বর্তমান অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজটির একাধিক শিক্ষক জানান, গত ১৯ এপ্রিল কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের সভাপতি সাবেক সাংসদ কাজী সিরাজুল ইসলাম নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজটিতে যান।
তখন কলেজে কর্মরত উপস্থিত শিক্ষকদের সাথে সভাপতি মতবিনিময় করেন। এক পর্যায়ে কলেজের অনার্স শাখার নন এমপিও শিক্ষক রনজিৎ কুমার মণ্ডল কলেজ প্রদত্ত তাদের আঠারো মাসের বেতন বকেয়া থাকার বিষয়টি সভাপতিকে অবহিত করেন।
পরে সভাপতি কলেজ ত্যাগ করলে বেতন বকেয়ার বিষয়টি সভাপতিকে অবহিত করায় অধ্যক্ষ মো. ফরিদ আহমেদ ওই শিক্ষককে ডেকে মানসিক নিপীড়ন করেন। এর দুই দিন পর কলেজ সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম অনার্স শাখার নন এমপিও শিক্ষকদের বেতন বাবদ নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করেন।
সভাপতি প্রদত্ত ওই টাকা থেকে কলেজের নন এমপিও শিক্ষকদের তিন মাসের বেতন বাবদ ৫৪ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। কিন্তু বেতন বকেয়ার বিষয়টি সভাপতিকে অবহিত করার অপরাধে রনজিৎ কুমার মণ্ডলের বেতনের প্রাপ্য অংশ আটকে দেন অধ্যক্ষ। এ সময় রনজিৎ কুমার মণ্ডল তার বেতনের অংশ প্রদান না করার বিষয়ে অধ্যক্ষের নিকট জানতে চাইলে অধ্যক্ষ তাকে জানান, সভাপতিকে বকেয়া বেতনের বিষয়ে জানানোয় তার বেতন দেয়া হবে না।
অধ্যক্ষ এ সময় দুর্ব্যবহার করে ওই শিক্ষককে কক্ষ থেকে বের করে দেন। এ ঘটনায় শিক্ষক রনজিৎ কুমার মণ্ডল মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তিনি শিক্ষক মিলনায়তনে এসে স্ট্রোক করেন।
শিক্ষক রনজিৎ কুমার মন্ডলের স্ত্রী শিরগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হীরা সরকার বলেন, আমি শিক্ষকদের মাধ্যমে জেনেছি সবাইকে ওই দিন বেতন দেয়া হলেও তাকে (রনজিৎ) বেতন দেয়া হয়নি। অধ্যক্ষের সাথে আলোচনা না করে সভাপতির কাছে বেতনের বিষয়ে বলায় বেতন না দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জেনেছি। পরে অধ্যক্ষর নিকট এ বিষয়ে আমার স্বামী মাফ চাইলেও তিনি মাফ না করে তাকে কক্ষ থেকে বের করে দেন। এরপর কলেজে তার ডিপার্টমেন্টে এসে স্ট্রোক করেন।
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ মো. ফরিদ আহমেদ বলেন, ওই শিক্ষককে বেতন দেয়া হবে না, তা বলিনি। তিনি এক বছর ছুটিতে থাকায় বেতন দেয়া হয়নি। অধ্যক্ষের মানসিক চাপের কারণে রনজিৎ কুমার মণ্ডল স্ট্রোক করেছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাকে মানসিক চাপ দেয়া হয়নি, তবে বেতনের বিষয়টি সভাপতিকে বলা তার উচিত হয়নি-এটা বলেছি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।