এস এম তাজাম্মুল,মণিরামপুরঃ চলতি জুন মাসের আসছে ২৯ তারিখে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা।পবিত্র কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে যশোরের মণিরামপুরে এবার এখনো পর্যন্ত জমে ওঠেনি পশু ক্রয় বিক্রয়ের হাট।মণিরামপুর ছাড়াও এই ঐতিহ্যবাহী পশুর হাটে কোরবানির পশু ক্রয় ওবিক্রয়ের উদ্দেশ্যে যশোর,খুলনা,কেশবপুর,বেনাপোল,ঝিকরগাছা,অভয়নগরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ আসে এই হাটে।তবে এবার কোরবানির হাটে পর্যাপ্ত পরিমানে গরু-ছাগল উঠলেউ মিলছেনা ক্রেতা।এদিকে বাজারে গরু-ছাগলের খাদ্যের প্রতিটি পন্যের দাম বাড়াতে পালিত পশু বিক্রির সময় সঠিক দাম পাচ্ছেনা বিক্রেতারা।
যশোর জেলার ঐতিহ্যবাহী মণিরামপুরের কোরবানির হাটে ঘুরে দেখা যায়,ছোট বড় বিভিন্ন দামের ও সাইজের প্রচুর গরু এনেছেন বিক্রেতা বিক্রি করতে।সকালে সর্বোচ্চ একটি গরু নিয়ে আসেন মণিরামপুর পৌরসভার হাকোবা গ্রামের রজব আলী।তিনি গরুটির দাম ৮লক্ষ টাকা হাকালেও শেষ পর্যন্ত সেটা ৭লক্ষ ৬৫হাজার টাকায় বিক্রি হয়।এদিকে হাাটে বিক্রয়ের জন্য প্রচুর পরিমানে গরু ও ছাগল নিয়ে এসেছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।তবে ক্রেতার আগমন কম ও দামের সাথে না পড়াতে অনেক খামারি ও ব্যবসায়ী বিক্রি করতে নিয়ে আসা পশু আবারো ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।কোরবানির ঈদের আর মাত্র ৪দিন বাকি এমন সময়ে গরু হাটের এই মন্দা অবস্থাকে ভাবিয়ে তুলেছে খামারি ও ব্যবসায়ীদের।তবে মণিরামপুর গরু হাটের পাশেই ছাগলের হাটে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ছাগলের কেনাবেচা ভালো বলছে হাট কর্তৃপক্ষ ও বিক্রেতারা।মুলত অল্প টাকায় কোরবানি সম্পন্ন করার জন্য ছাগলের প্রতি বেশি চাহিদা সাধারন মানুষের বলে ধারনা করছেন হাট কর্তৃপক্ষ।
গতকাল শনিবার ঐতিহ্যবাহী মণিরামপুর পশুরহাটে মিলেছে এমনই চিত্র।কাক্ষিত ক্রেতা না থাকায় গল্প করে, চা-পান খেয়ে সময় পার করতে দেখা গেছে মণিরামপুর কোরবানির পশুর হাটের কর্তৃপক্ষ, খামারী ও ব্যবসায়ীদের।
খুলনা বাগেরহাট থেকে গরু বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ী মোঃ রফিক শেখ জানান,আমি খুব সকালে ৬টি গরু এনেছি বিক্রি করতে।এখনো পর্যন্ত একটি গরুও দরদামে ঠিক করে বিক্রি করতে পারিনি।এই হাটে এর আগেও আমি প্রতি বছরে গরু বিক্রি করে গেছি কিন্তু এবারের মতো ক্রেতা শূন্য কোনবার দেখিনি।
মণিরামপুর কোরবানির হাটে গরু কিনতে আসেন যশোর শহরের আর এন রোডের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন ফ্রেস ও ভালো কোরবানির গরু কিনতে প্রতি বছরেই আমি ও আমার পরিবারের লোক এই মণিরামপুর হাটে আসি।তবে আজ (শনিবার) দুপুরের দিকে হাটে এসে এখনো পর্যন্ত গরু কিনতে পারিনাই।গরু পছন্দ হচ্ছে ও দামে পড়ছেনা।গরু লালনপালন করা খামারিরা ও আমরা ক্রেতারা ব্যবসায়ীদের জন্য গরু কিনতে যেয়ে বিপদে পড়ছি।মধ্যস্ততাকারী হয়ে ব্যবসায়ীরা গরুর দাম বাড়িয়ে দেওয়াতে আমরা ক্রেতারা ন্যায্যমূল্যে কাক্ষিত পশু ক্রয় করতে হিমশিম খাচ্ছি।
সতীঘাটা থেকে একটি গরু নিয়ে আসা খামারি মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন খৈল,ভূসি,ভুট্টার গুড়ো ও কাঁচা ঘাস খাওয়ায়ে গরু বড় করি কোরবানিতে বিক্রি করার আসায়।বর্তমানে গরুর খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়ে এক কেজি খৈলের দাম ৬০টাকা,এক কেজি ভূসির দাম ৫৫টাকা সব মিলিয়ে একটি গরুর পিছনে দৈনিক ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা খরচ হয়।সারা বছর এত খরচ করে গরু পালন করে বিক্রির সময় সঠিক দাম পাচ্ছি না।এমন ভাবে চলতে থাকলে গরুর খামারিরা তাদের পেশা থেকে দূরে সরে আসবে।
মণিরামপুর কোরবানির হাট কর্তৃপক্ষ ও মণিরামপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ ফারুক আহমেদ লিটন বলেন,অন্যবারের তুলনায় হাটে গরু আছে ক্রেতা খুবই কম।হাসতে হাসতে হাতে থাকা স্মার্ট ফোনের ডিসপ্লে দেখিয়ে বলেন,ক্রেতা নাই তাই হাটের পাশকারির কাজও কম,কি করব চা খাচ্ছি আর বসে বসে ফোনে লুডু খেলছি।সর্বোচ্চ কতদামে আজ গরু বিক্রি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন সকালে হাকোবার রজব আলীর একটি গরু সর্বোচ্চ ৭ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।এখনো পর্যন্ত এটাই মণিরামপুর কোরবানির পশুর হাটের বিক্রিত সেরা গরু।
তবে কোরবানির হাটকে ঘিরে মণিরামপুর থানা প্রশাসন ও মণিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তৎপরতা ছিলো চোখে পড়ার মতো।কোরবানির পশু মনিটরিং এর জন্য ও আগত পশুর অসুস্থ্যতার প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার দায়িত্বে ক্যাম্পে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাণী কর্মকর্তা ডাঃ পার্থ প্রতীম রায়।মণিরামপুর থানা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোরবানির হাটের নিরাপত্তার জন্য এ এস আই কাজলের নেতৃত্বে পুলিশের টহল ছিলো জোরদার।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।