স্টাফ রিপোর্টারঃ সিলেট জেলার সদর উপজেলাধীন আল আমীন জামেয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সিলেট ইসলামিক সোসাইটির নাম ভাঙ্গিয়ে চলছে অনিয়মের হরিলুট। অনূসন্ধ্যান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর ভয়াবহ তথ্য।দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটির ওয়াকফ নামা পত্র সদর উপজেলার মানীকপীর রোড,নয়া সড়ক এলাকার মরহুম আব্দুল মন্নানের ছেলে অধ্যাপক মোঃ ফজলুর রহমান দি সিলেট ইসলামিক সোসাইটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৩ খ্রিঃ ২৪৮৮০নং-ওয়াকফ নামা দলিল আছাদ উদ্দিন আহমদ ছিদ্দিকি হইতে ইসলামপুর আল আমীন জামেয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য অত্র সোসাইটির চেয়ারম্যান বরাবর সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করে দেন।পরবর্তীতে নামজারী করে শুরু হয় পাঠদানের কাজ।তখন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সুবিধার্থে ওয়াকফ নামায় উল্লেখ করা হয় নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের যিনি প্রধান শিক্ষক থাকবেন তিনি সকল রক্ষনাবেক্ষন করবেন এতে কাহারো কোন দাবী দাওয়া থাকবে না।প্রয়োজনে আইনগত আগ্রাহ্য থাকিবে। কিন্তু রহস্যজনক হলেও সত্য যে সেই ওয়াকফ নামায় উল্লেখ করা হয়নি যদি অদূর ভবিষ্যতে কোনদিন প্রতিষ্ঠানটি সরকারী অর্থাৎ এমপিওভূক্ত হয় তাহলে প্রতিষ্ঠানটি কোন রুপরেখায় চলবে।এসময় উনু পঞ্চাঁশ শতক পঁচাত্তুর পয়েন্ট যায়গার উপরে গড়ে উঠে প্রতিষ্টানটি।এরপর যে যার মতো করে সোসাইটির নাম ব্যবহার করিয়ে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।অবশেষে ২০০২ ইং-তারিখের মে মাসে এসে নিম্ন মাধ্যমিক থাকাবস্থায় এমপিওভূক্ত হয়ে আলোর মূখ দেখে প্রতিষ্ঠানটি।একপর্যায় মাধ্যমিক পর্যন্ত্য গড়ায় সরকারীকরণ।শুরু হয় সোসাইটির নেতৃত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিদের দৌড়ঝাপ। কারন ওয়াকফ হলফ নামায় এরকম কোন আলামত বা নির্দেশনা দেওয়া ছিলো না। কৌশল অবলম্বন করতে থাকেন দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের সভাপতিসহ অন্যান্যরাও।তদন্তে দেখা যায় আজো তারা সেই সোসাইটির নাম বিক্রয় করে বিশাল তবিয়তে রয়েছেন।

এদিকে বিগত ২৮/০৩/২০২৩ ইং- তারিখের মাউশি’র তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়,অত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগকৃত প্রধান শিক্ষক জসীম উদ্দিন ইনডেক্স ও অভিজ্ঞতা না থাকায়(স্কুল ও কলেজ)জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি বলে নির্দেশ প্রদান করা হয়।তার পরিবর্তে সহকারী প্রধান শিক্ষক বিধি মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়।অথচ কথিত শিক্ষক জসীম উদ্দিন মাউশি’র নির্দেশকে উপেক্ষা করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট’র হাইকোর্ট ডিভিশন আদালতে গিয়ে সংবিধানের ১০২-এ একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। যাহার রিট পিটিশন নং-৪৩১৬/২৩ সেই পিটিশনে জসীম উদ্দিন স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করলেও রহস্যজনক কারনে বর্তমান ঠিকানা এড়িয়ে গেছেন।কিন্তু ওই পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ পেয়ে যান।পরে আরো ৬ মাসের মেয়াদ বাড়িয়ে নিলেও এখন সেই মেয়াদও ঘুরেবালি।এমনি অবস্থায় অ্যাপিলেট ডিভিশনে এসে রাষ্ট্র পক্ষ মাউশি সিভিল পিটিশনের জন্য লিভ টু আপিল করে।লিভ টু আপিল নং-১৮৭০/২৩ ইং

অন্যদিকে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোজ নিয়ে দেখা যায়,মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় দুই হাজারের উর্ধ্বে শিক্ষার্থী রয়েছেন।শিক্ষার্থী প্রতি সেশন ফি ৪,৫০০ টাকা, মাসিক ফি ১০৫০ টাকা ও প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৭৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।এরমধ্যে শিক্ষক কর্মচারীসহ রয়েছেন মোট প্রায় ৮০জনের মতো। লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো এমপিওভূক্ত মাত্র ১৩জন। একজন কথিত প্রধান শিক্ষক জসীম অপরজন গণীতের শিক্ষীকা তার আপন স্ত্রী। তাদের এই দুইজনের দাপুটের কারনে অন্যান্য শিক্ষকরাও মূখ খুলতে নারাজ।অনেকক্ষেত্রে অনাকাঙ্খিত ঘটনায় নিরপরাধ শিক্ষকদেরও তারা বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন। সম্প্রতি বিদ্যালয় নির্মাণকাজের অজুহাতে মাউশি’কে অবহিত বা সদর উপজেলা-জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে না জানিয়ে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে প্রায় দশ কোটি টাকা ব্যায়ে বালক-বালিকাদের জন্য বিভিন্ন ফাউন্ডেশন গড়ে তোলা হচ্ছে।ইতোমধ্যে বালিকাদের জন্য ১০তলা ফাউন্ডেশনের ৫ম তলা, বালকদের ৬ষ্ট তলা’র মধ্যে ৫ম তলা,আরেকটি শাখা চতুর্থ তলা থাকা সত্বেও ৫ম তলায় রুপান্তর,প্রশাসনিক ভবন তিন তলা বিশিষ্ট থাকলেও আরো দুই তলা বৃদ্ধি সহ মসজিদ কমপ্লেক্স নিচতলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত্য ওয়াশজুন সম্পন্ন করা হচ্ছে।এসকল নির্মাণকাজে মাউশি’র বিষয়টি থেকে যাচ্ছে আইনের ধরাচোয়ার বাইরে।এনিয়ে সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে জল্পনা-কল্পনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অত্র প্রতিষ্ঠানের একটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে কোন পরিকল্পনা ছাড়াই অনায়াসে গড়ে তোলা হচ্ছে এসব ভবণ। এই কোটি কোটি টাকার হিসেব-নিকাশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ক্ষুদে শিক্ষক জসীম উদ্দিন ও জামায়াত(শিবির) নেতা সভাপতি আব্দুস শাকুর।তারা আরো জানিয়েছেন জসীম উদ্দিন পরিবারের সদস্য ও তার একাধিক ট্রাষ্ট দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যায় করে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানের পাশেই ১০ (দশ) শতক যায়গার মালিক বনে গেছেন।এখন তারা জিরো থেকে হিরো।

অপরদিকে বিগত ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ইং- তারিখে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এক স্বাক্ষরিত নির্দেশনা প্রেরণ করে।সেখানে স্পষ্ট চুক্তিভিত্তিক প্রধান শিক্ষক-অধ্যক্ষ নিয়োগ স্থগিতের কথা বলা হয়েছে। যদিও নির্দেশনা রয়েছে এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক হতে হলে নিম্নে ১২ (বারো)বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে ও সহকারী ভারপ্রাপ্ত হতে গেলে ৮ বছরের সময়সীমার প্রয়োজন। এতকিছুর পরেও আইন অমান্য করে চলছে আল-আমীন জামেয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুস শাকুর ও প্রধান শিক্ষক জসীম উদ্দিন।

সিলেট ইসলামিক সোসাইটির নিবন্ধন বিষয়ে জানতে বিশেষ একটি গোয়েন্দা শাখা (সংস্থায়)মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ওই শাখার দায়িত্বে থাকা একজন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ প্রতিবেদক’কে জানিয়েছেন এরকম সোসাইটি তাদের তালিকায় নেই,তবে খুব দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে বের করার চেষ্টা করবেন।এসময় তিনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে হোক আর যে কোনো ক্ষেত্রেই অনিয়ম-দুর্নীতি কখনো রাষ্ট্রের সফল বয়ে আনবে না। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও আমরা এবিষয়ে কঠোর সজাগ রয়েছি।

এ ব্যাপারে মুঠাফোনে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলতে চাইলে বেশ কয়েকবার কর দিলে তার মুঠোফোন রিসিভ না হওয়ায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।সভাপতি আব্দুস শাকুরের মুঠোফোনে কথা বললে তিনি সাংবাদিক পরিচয় শোনার পরেই বলেন, না আমার শরীর খারাপ কৈ লাউক্কা সংক্ষেপে কিতা, এসময় তিনি সিলেট ইসলামিক সোসাইটি নামে ট্রাষ্ট আছে বলে দাবী করেন। পরে প্রত্যেকবছর নির্বাচনের মাধ্যমে কমিঠি নির্বাচিত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,না নির্বাচন নায়, এটা হইলো কি অমোমনোনীত ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান যাকে দিবা তাইন ওইবা।তখন তিনি ডিটেইল জানতে হলে তাদের ট্রাষ্ট্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ ফজলুর রহমানের কাছে যাওয়ার অনুরোধ করেন।দশ কোটি টাকার নির্মাণকাজের ব্যাপারে তিনি বলেন,না না সরকারের কোনো টাকা দিয়ে আমরা বিল্ডিং মানাইছি না, ইগুলা আমরার ছাত্র হকলের বেতন প্লাস হইলো আমরা কিছু কালেকশন করা হইছে। টেন্ডার ড্রপের বিষয়ে বলেন, সবতা আছে,সবতা আছে, নিয়ম অনুযায়ী করা হইছে আইন না মানলে তো মিনিষ্ট্রি থাকি অডিট হয় হেরাউ ধরলো ওনে ইতা আপনারে কে কইছে,ভূল ইনফরমেশন দিছে,জসীম উদ্দিনের নামে কোন যায়গা নেই,প্রতিষ্ঠানের নামে যে যায়গা আছে তা প্রতিষ্ঠানের নামেই আছে। ইতা যারা কইবো প্রতিষ্ঠানের নামে লাগা ঠিক নায়,না না আপনার কথা কইরাম না আপনারারে তো কেউ কিছু দিছে তথ্য বুইচ্ছননি, আপনারা যাছিয়া লাগার কিতা আছে আপনারা সাংবাদিক।না ইকানো দুর্নীতির একফাই পাইতা নায় আপনে,ইকানো ইনশাহআল্ল্যাহ,আল্ল্যাহ হাজির নাজির রাখিয়া খরচ করা হয়,একটাকারো দুর্নীতির কোনো প্রশ্রয় নাই।অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার উনি নয়া আইসে এর আগে তো কেউ আসলাইনা,আগে শুধু ডিও আছিল।
অধ্যাপক ফজলুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন,আপনি কাইন্ডলি এই প্রতিষ্ঠানের গভর্ণং বডি আছে এই গভর্ণীং বডির সাথে আমি এটাষ্ট নায় আপনে গভর্ণীং বডির সাথে কথা বলতে পারেন বলেই আবার সাফাই দিতে থাকেন একপর্যায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলে বসেন আমি কোনো ডকুমেন্ট ছাড়া কথা বলতে রাজি না,পারলে আপনে আমার বাসায় আসেন। এসময় তিনি প্রতিবেদক’কে সরাসরি বাসায় বা অফিসে যেতে বলেই সংযোগ কেটে দেন।