মোঃ আমিনুল ইসলাম জুয়েল,নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার নন্দীগ্রামে পৌনে ১৬ লক্ষ টাকা ছিনতাই নাটকের রহস্য উন্মোচন করেছে নন্দীগ্রাম থানা পুলিশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক ধান ব্যবসায়ীর পাঠানো পৌনে ১৬ লাখ টাকা ইসলামী ব্যাংক থেকে উত্তোলনের পর আত্মসাতের জন্য বগুড়ার নন্দীগ্রামে ডাকাতির নাটক সাজিয়েছিলো উপজেলার বিলশা বেলঘড়িয়া গ্রামের জিয়া ও তার বন্ধু সোহেল। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে তারা থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগও দেয়। অবশেষে নিজেদের সাজানো নাটকে নিজেরাই ফেঁসে গেল। পুলিশের কৌসুলি তদন্ত ও পৌরসভার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে গত বৃহস্পতিবার দুইজনকে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টাকা উদ্ধার অভিযানে নামে পুলিশ। টাকা উধাও হওয়ার ৩০ঘন্টার ব্যবধানে পৌরসভার ওমরপুর এলাকার জনৈক ব্যক্তির বাড়ি থেকে পৌনে ১৫লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। বাকি এক লাখ টাকা উদ্ধার করা যায়নি।

আটককৃতরা হলো- উপজেলার বিলশা গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে জিয়াউল হক জিয়া (৩৩) ও বেলঘড়িয়া গ্রামের মকবুল হোসেন মেম্বারের ছেলে সোহেল রানা (৩০)। তাদের বিরুদ্ধে শুক্রবার থানায় মামলা দায়ের করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থানার ষাঁড়বুরুজ গ্রামের তাইজুল ইসলামের ছেলে ধান ব্যবসায়ী মিনার আলী।

শুক্রবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে নন্দীগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিনার আলীর সঙ্গে নন্দীগ্রামের বিলশার জিয়া ও তার বন্ধু বেলঘড়িয়ার সোহেলের দীর্ঘদিনের ধান ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসা সংক্রান্তে সম্পর্ক। এ উপজেলা থেকে ধান ক্রয় করে তারা বিভিন্ন কোম্পানীতে সরবরাহ করতো। ব্যবসার লেনদেনের টাকা সোহেলের ইসলামী ব্যাংক নন্দীগ্রাম শাখার একাউন্টে পাঠানো হতো। একপর্যায়ে টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করে দুই বন্ধু জিয়া ও সোহেল। গত বুধবার মিনার আলীর কথামতো সোহেলের একাউন্টে ২১ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন এরোমেটিক এগ্রো এন্ড ফুড লিমিটেডের মালিক। মিনারের কথা মতো ৫ লাখ ২৫হাজার টাকা দুটি একাউন্টে পাঠায় সোহেল। ধান ক্রয়ের জন্য বাকি ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নিয়ে যায় জিয়া ও তার বন্ধু সোহেল। সন্ধ্যায় মিনারকে ফোন করে সোহেল জানায়, ব্যাংক থেকে ফেরার পথে টাকাগুলো ছিনতাই হয়ে গেছে। ভাটরা ইউনিয়নের মকবুল মেম্বার থানায় ফোন করে জানায়, উপজেলার সিমলা বাজার থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিমে ঢাকারগাড়ী ব্রিজ এলাকায় তার ছেলের ব্যবসায়ী পার্টনার জিয়া ডাকাতির কবলে পড়েছে এবং টাকা ছিনতাই হয়েছে।

ওসি আনোয়ার আরও জানান, সংবাদ পেয়ে পুলিশের চৌকস টিম তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি সাজানো নাটক হিসেবে সন্দেহ করে পুলিশ। টাকা ছিনতাই অভিযোগ নিয়ে বুধবার রাতেই থানায় আসে বেলঘড়িয়া গ্রামের জিয়া ও সোহেল।

অভিযোগে লিখেছিলো, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে জিয়াউল হক জিয়া মোটরসাইকেল যোগে ফেরার পথে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তার পথরোধ করে টাকার ব্যাগ ছিনতাই হয়। জিয়া ও সোহেল ভেবেছিলো, থানায় অভিযোগ করলেই পুলিশ তাদেরকে সন্দেহ করবে না। পৌরসভার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে টাকা ছিনতাই নাটকের রহস্য উন্মোচন হয়েছে। পুরো পৌরসভা এলাকা সিসিটিভির আওতায় রাখার এজন্য মেয়রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন থানার ওসি।