যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ৮ নং হরিহরনগর ইউনিয়নের মধুপুরে ভূমিহীন পরিবারের মাঝে আশ্রয় প্রকল্পের ঘর বন্টনে সিমাহীন দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জানাযায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের খাস জমিতে গৃহ নির্মান করে বরাদ্দ দেন আশ্রয়ন প্রকল্পের অধিনে দেশব্যাপী ভূমিহীন পরিবারের মাঝে।

তারই ধারাবাহিকতায় মণিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণ করেন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর। সেই খাস জমির উপর নির্মিত ২২ টি ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার কথা হলেও দুইটি পরিবারের মধ্যে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয় উল্লেখ যোগ্য একাধিক সংখ্যক ঘর।
সরেজমিনে দেখা যায় ইজাজুল হক (মধু) ও আলতাফ হোসেন নামের এই দুই পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবং যাদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তারা কেউ অত্র ইউনিয়নের বাসিন্দা না। এবং ঐ দুই পরিবারের যে নারী সদস্যদের নামে ঘর বরাদ্দ তারা সবাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের সাথে বিবাহ করে শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছে। এবং তাদের প্রত্যেকে একতলা, দ্বিতলা বিশিষ্ট বাড়ীর গৃহবধূ। আদেও তারা কখনো এই আশ্রয় প্রকল্পে এসে বসবাস করবে না বলে স্থানীয় অনেক মন্তব্য করেন।

এবিষয়ে নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ইজাজুল হক (মধু) নামের একজন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব কে ম্যানেজ করে,, জরিনা, মমতাজ, পারভিনা, রায়া আক্তার, সুমি খাতুন, সোমা, নামে ঘর বরাদ্দ নিয়েছে এবং নিজে ইজাজুল হক নামে ঘর বরাদ্দ নিয়ে তা বাতিল করেছেন।

একই ভাবে আলতাফ হোসেন নামের এক ব্যাক্তি , নিজ নাম আলতাপ,আব্দুল্লাহ, আবু শ্যামা উসমান, চায়না, সাবানা, নামে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নেন। এদিকে আলতাফ হোসেনের নামে বাংলাদেশে কোন জমির মৌজায় এক শতক জমি নাই বলে অত্র ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জহুরুল হক প্রত্যায়ন পত্র প্রদান করেন।
তবে ইজাজুল হক( মধু) আর্থিক অবস্থার দিকে বিবেচনা করলে দেখা যায় তিনি বর্তমান একতলা বিশিষ্ট বাড়ীতে বসবাস করেন এবং খাঠুরা বাজারে একটি ভালো মুদি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার ।তিনি যে নাম ব্যাবহার করে ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন সবাই তার নিকট আত্মীয় এবং নিজের মেয়ে এবং ভাইদের মেয়ের নাম রয়েছে। তারা সবাই বিবাহিত এবং স্বামীর বাড়িতে বসবাসরত। তাদের স্বামী প্রবাসে আছেন এবং সবাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান।

অভিযোগ উঠেছে ইজাজুল হক মধু প্রকল্পের ঘরগুলো বরাদ্দ নিয়েছে এর মধ্যে সোমা নামে বরাদ্দকৃত ঘরটি জৈনক এক ব্যক্তির কাছে লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছেন। বর্তমানে ঐ ঘরে অবস্থানরত ব্যক্তি টাকা দিতে ব্যার্থ হলে মাসিক ঘর ভাড়া দিতে চাপ প্রয়োগ করেছেন ইজাজুল হক মধু। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঘর বিক্রয়ের অভিযোগের সত্যতা প্রকাশ করে “মধু” নিউজ না করার অনুরোধ করে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করবেন বলে প্রস্তাব দেন। এবং নিজের নামে হওয়া ঘর বালিত হয়েছে বলে জানান। বাকি ঘরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, একজনের নিকট সোমার নামে বরাদ্দের ঘরটির জন্য একলক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছি। অত্র ঘরটির জন্য নগতে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছি বাকি টাকা চাইলে সে ঘর নেবে না বলে জানান এবং তার দেওয়া ৫০ হাজার টাকা ফেরত চেয়েছে। এছাড়াও এখনো যে ঘর গুলো বিক্রি বা ভাড়া দিতে পারেনি সেগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

একই অভিযোগ আলতাফ হোসেনকে নিয়ে, আলতাফ হোসেন বর্তমানে স্থানীয় বাওড়ের ইজারাদার এবং অত্র বাওড়ের ম্যানেজার। ছেলে, শালী ও নিজ নামে ঘর বরাদ্দ নিয়ে ব্যাবহার করছেন। রুপদিয়া থেকে নিজের শালীকে মণিরামপুর উপজেলায় এনে ঘর বরাদ্দ দেওয়া সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন বলে জানান আলতাফ হোসেন নিজে। এবিষয়ে আরো তথ্য সংগ্রহের জন্য আবারও আলতাফ হোসেনের নিকট গত শুক্রবার ফোন দিলে ফোন রিসিভ না করে পরদিন শনিবার ভোরে ইজাজুল হক ও আলতাফ হোসেন অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দিতে সাংবাদিকের বাসায় চলে আসেন। সাংবাদিক তাদের দাবী প্রত্যাখান করে এবং প্রকৃত ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ঘর বরাদ্দের জন্য তাদের সহোযোগিতায় চেয়ে ফেরত পাঠান।

এদিকে মধুপুর গ্রামের অনেক ভূমিহীন পরিবারের সদস্য থাকলেও তারা আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জহুরুল ইসলাম এর সাথে তিনি বলেন আলতাফ এবং মধু দু’জে ভূমিহীন এবং তারা মূলত আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের আগে থেকে এই স্থানে বসবাস করে আসছে সেই সুবাদে তারা হয়তো ঘর পেয়েছে। তবে ঘর বিক্রি এমন কোন তথ্য আমি জানি না।
এবিষয়ে অত্র ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব শহিদুল ইসলামের নিকট যোগাযোগ করা হলে তিনি শুরুতে জানান,উদ্ধতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া তিনি কিছু বলতে পারবেন না।এরপর একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
হরিহরনগর মধুপুর গ্রামের এই আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বিক্রয় এবং ঘর বন্টনে সিমাহীন দূর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান বলেন এমন কোন অভিযোগ আমার জানা নেই তবে অভিযোগ সত্য হলে তদন্ত সাপেক্ষ সচ্ছল পরিবারের নামে বরাদ্দকৃত ঘর বাতিল করা হবে।

কলমকথা/𝙷𝙺𝚂