মোঃ আকাশ রহমান, স্টাফ রিপোর্টার ঠাকুরগাঁও:-

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২১ নং ঢোলারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন ওই ইউনিয়নের ১২ জন ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের মেম্বারগণ।মেম্বারদের মতামতের তোয়াক্কা না করে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত ছাড়াই সব কাজ নিজে করায় এবং তাদের মূল্যায়ন না করায় ইউপি সদস্যগণ বেশ কিছুদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম বর্জন করে আসছিলেন।

অভিযোগে জানা যায়,ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় ওই ইউনিয়নে বয়স্কভাতা ,বিধবা ভাতা ,প্রতিবন্ধি ভাতা ,ভিজিডি , ভিজিএফের খাদ্য বিতরণ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় ওই ইউনিয়নের ৯জন ইউপি সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনের ৩ নারী মেম্বারকে বাদ দিয়ে নিজেই সবকিছু স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সম্পাদন করে আসছেন।ক্ষমতা গ্রহনের পরপরই সাব রেজিষ্টি হতে জমিজমা বিক্রির কমিশন ১% হিসেবে ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়ে নলক’ল স্থাপনের প্রকল্প গ্রহন করলেও অদ্যাবধি কোথাও একটিও নলক’প বসানো হয়নি।

ইউপি সদস্য কার্তিক চন্দ্র ,ঈমান আলী অভিযোগ করে বলেন,চেয়ারম্যান ওই টাকার বিষয়ে কোন কিছু বলতে রাজি নন ,সেটি তার ব্যক্তিগত দাবি করে মেম্বারদের প্রত্যাখান করে আসছেন।

সম্প্রতি ওই ইউনিয়নে এডিবির ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়ে চেয়ারম্যান মেম্বারদের না জানিয়ে নিজের পছন্দের লোকজনের মাঝে ৩০টি স্প্রে মেশিন বিতরণ করেন। কাবিখা (টিআর) প্রকল্পের ৪৭ হাজার টাকা বঙ্গবন্ধুর মূরালের বাউন্ডারী করার প্রকল্প গ্রহন করলেও অদ্যাবধি তা করা বাস্তবায়ন করা হয়নি।বরাদ্দের অর্থ ইউপি চেয়ারম্যান আত্বসাৎ করেন।দরিদ্র লোকজনের মাঝে ১ হাজার ৫০টি টিসিবির কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হলেও মালামাল উত্তোলনের সময় উপকারভোগীর কার্ড চেয়ারম্যান তার নিজ হেফাজতে রেখে দেন।খবর না পাওয়ায় যারা মালামাল উত্তোলন করতে পারে না চেয়ারম্যান তাদের বরাদ্দের মালামাল উত্তোলন করে ব্যবসায়ীদের মাঝে বিক্রি করে দেন।এরুপ ৫৫টি প্যাকেজ অন্যত্র বিক্রির সময় ধরা হলেও চেয়ারম্যান বিষয়টি ধামাচাপা দেয়।কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নে ননওয়েজ হিসেবে ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়ে সন্নাসীপাড়া এলাকায় একটি ইউড্রেন নির্মানের প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে পাইপ দিয়ে নামকাওয়াস্তে কাজ সম্পাদন দেখিয়ে সমুদয় অর্থ আত্বসাৎ করেন।

এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় বোনাস হিসেবে ওই ইউনিয়নে ২ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়।কিন্তু চেয়ারম্যান কোন মেম্বারকে কোন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এদিকে ওই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মাঝে হোল্ডিং নাম্বার বিতরণ করা হয়।হোল্ডিং প্রতি ১শ টাকা করে আদায় করা হয়।মোট টাকার শতকরা ২০ শতাংশ টাকা ইউপি চেয়ারম্যান হাতিয়ে নিয়ে পকেটস্থ করেন।কতটি হোল্ডিং খোলা হয়েছে তার হিসেব নেই ইউপি সচিবের কাছে।ইউপি সচিব হরিগোপাল সেন বলেন,সারা ইউনিয়নে কতটি হোল্ডিং খোলা হয়েছে তার কোন হিসেব নেই আমার কাছে।আর আদায়কৃত অর্থের হিসেবও নেই।

খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ঢোলারহাট ইউনিয়নে ১ হাজার ৬৫টি কার্ড রয়েছে।অতিদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষদের ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে চাল দেওয়া হয়।মৃত ও এলাকায় থাকেন না এরুপ প্রায় শতাধিক কার্ড পরিবর্তন করা হলেও কোন মেম্বারকে স্ব স্ব ওয়ার্ডের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।

ফলে নির্বাচিত ইউপি সদস্য ও মেম্বারগণ স্ব স্ব ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কোন কাজে ভ’মিকা রাখতে পারছেন না।এ অবস্থায় বেশ কিছুদিন ধরে মেম্বারগণ ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম বর্জন করে আসছেন।তারপরও চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায়ের বোধোদয় না হওয়ায় ৯ ইউপি সদস্য ও ৩ নারী সদস্য শুক্রবার (১৯ আগষ্ট) জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

এ ব্যপারে ইউপি চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,কতিপয় মেম্বার বিভিন্ন কাজ কর্মে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করলে আমি প্রতিবাদ করায় কয়েকজন মেম্বার আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।