দেশের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে শুরু করে বিদেশে যাওয়া এবং দেশের বাইরেও বিভিন্ন কাজে সবচেয়ে অবধারিত বস্তুটির নাম পাসপোর্ট। বিভিন্ন প্রয়োজনে এই অতি মূল্যবান কাগজটিকে প্রায় ক্ষেত্রেই সাথে নিয়ে চলতে হয়। এই চলাফেরার মাঝেই হঠাৎ ভুলবশত হারিয়ে যেতে পারে পাসপোর্টটি। টাকার ব্যাগের ভেতর পাসপোর্ট বহন করাটা খুব একটা দুর্লভ ব্যাপার নয়। তাই ছিনতাই বা চুরির সময় টাকার সাথে সাথে হারাতে হয় পাসপোর্টটিও। এ সময় নানারকম ঝামেলার পাশাপাশি কখনো কখনো পড়তে হয় আইনি সমস্যাতেও। তাই পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয় সম্পর্কে জানা থাকা আবশ্যক।
দেশে পাসপোর্ট হারালে করণীয়
১। পাসপোর্ট হারানোর সাথে সাথেই খবর দিতে হবে থানাতে। পাসপোর্ট হারানো সময় পাসপোর্টধারী যে এলাকায় অবস্থান করছিলেন সে স্থানটি যে থানার অন্তর্গত সেখানে একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করতে হবে। এ সময় জিডিতে পাসপোর্টে যদি কোনো দেশের ভিসা সংযুক্ত থাকে সে কথাটি অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। সাথে হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্টের ফটোকপি দেয়া ভালো।
২। পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে বিশেষ করে চুরি বা ছিনতাই হলে পুলিশ ইমিগ্রেশন ডাটাবেজে পাসপোর্টটিকে কালো তালিকাভুক্ত (ব্ল্যাক লিস্টেড) করা হবে। এর ফলে সেই পাসপোর্ট ব্যবহার করে অন্য কেউ বিদেশে যেতে পারবে না।
৩। হারানো বা চুরি হওয়া পাসপোর্টটি পাওয়া গেলে ইমিগ্রেশন ডাটাবেজের কালো তালিকা থেকে পাসপোর্টটিকে মুক্ত করতে হবে। এর জন্যে সংশ্লিষ্ট থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তার নিকট আবেদন করতে হবে।
৪। আর যদি পাসপোর্টটি পাওয়া না যায় তাহলে জিডির কপিসহ পুনরায় আবেদন করতে হবে। অতঃপর আবেদনটি যাচাই করে পাসপোর্ট অফিস নতুন পাসপোর্ট সরবরাহ করবে।
সাধারণত পুরোনো রেকর্ড কিংবা পুলিশি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পাসপোর্টটি ইস্যু করা হয়ে থাকে। তাই পুরো কার্যক্রমটি সম্পন্ন হয়ে পাসপোর্ট হাতে পেতে বিলম্ব হতে পারে।
বিদেশে পাসপোর্ট হারালে করণীয়
১। দেশের বাইরে পাসপোর্ট হারালে সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে সেই দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস খুঁজে বের করা। ওরা এ ধরনের জটিলতা থেকে উত্তরণের জন্য সম্ভাব্য সব দিক থেকে সহায়তা দিয়ে থাকে।
২। দেশের মত ওখানেও পাসপোর্ট হারানো জায়গার নিকটস্থ থানায় রিপোর্ট করে একটি জিডি করতে হবে।
৩। তারপর সি-ফর্ম পূরণপূর্বক মিনিস্টার কাউন্সিলর বরাবর ট্রাভেল পারমিট ইস্যুর জন্য আবেদন করতে হবে। সি-ফর্মটি সাধারণত দেয়া হয় বিদেশ গমনের পর যে হোটেলে ওঠা হয় সেখান থেকে। আবেদনের সাথে যে কাগজগুলো লাগবে সেগুলো হলো-
জিডির কপি
হারানো পাসপোর্টের ফটোকপি
হারানো পাসপোর্টের ভিসা
এরাইভাল ভিসা কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
পাসপোর্ট সাইজের ছবি
৪। অতঃপর দুই দিনের ভেতরেই ট্রাভেল পারমিট পাওয়া যেতে পারে। আর এটিই সে সময়ের জন্য পাসপোর্টের কাজ করবে।
ভারতে পাসপোর্ট হারালে ভারতের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পারমিট এবং ট্রাভেল ইন্সুরেন্স নিয়ে অনলাইনে এক্সিট পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। এই এক্সিট পারমিটটি এফআরআরও (ফরেন রেজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস) ইস্যু করে থাকে। এ সময় আবেদনের সাথে উপরোক্ত কাগজপত্রগুলোর প্রয়োজন হয়।
কোন ট্রাভেল এজেন্সির সাথে বিদেশ ভ্রমণকালে এজেন্সি থেকেই এই পুরো কার্যকলাপে সহায়তা প্রদান করতে পারে। বিদেশে ভ্রমণকারিদের জন্য বাংলাদেশের পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অফিস ভ্রমণকারির সকল তথ্য যাচাই করে বাংলাদেশ হাই কমিশনকে রিপোর্ট করে একটি বিবৃতিপত্র প্রেরণ করে। আর এই পত্রটিই ভ্রমণকারিদের দেশে ফিরে আসতে সহায়তা করে।
শেষাংশ
পাসপোর্ট চুরি, ছিনতাই বা অসাবধানতা বশত হারানোর হাত থেকে বাঁচতে হলে পূর্ব সতর্কতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পাসপোর্টটি প্রথম হাতে পাওয়ার সাথে সাথেই সেটার কয়েকটি রঙিন ফটোকপি এবং স্ক্যান করে গুগল ড্রাইভে রেখে দিতে হবে। অন্ততপক্ষে মোবাইলে ছবি তুলে সেভ করে ভালো। কোন দেশের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রেও একই সতর্কতা প্রযোজ্য। এমনকি অ্যারাইভাল ভিসার বেলায়ও সীল দেয়া পৃষ্ঠাগুলো সহ ফটোকপি করে রাখতে হবে। জীবনে চলতে ফিরতে অপরিহার্য এই পরিচয়পত্রটির জন্য এই বাড়তি সতর্কতাটুকু অনস্বীকার্য।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।