ডেঙ্গু নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। নানা কারণে প্রতিবছর একটি সুনির্দিষ্ট সময়ে আমাদের দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব হওয়াটাই এখন নিয়তি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ধারায় মৃত্যু আমরা কমিয়ে আনতে পেরেছি এই রোগে তবুও একেবারে শূন্যের কোটায় আনা সম্ভব হয়নি। ডেঙ্গু রোগের জীবনচক্রকে আমরা মোটা দাগে ১০ দিনের হিসাবে ফেলতে পারি। প্রথম তিন দিন তাপমাত্রা বেশি থাকে, রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ বলতে গেলে স্বাভাবিক থাকে, পানি শূন্যতা দেখা যায় শরীরে।
তৃতীয় দিন থেকে ষষ্ঠ দিন সবচেয়ে দুর্যোগপূর্ণ। শরীরের তাপমাত্রা কমে অনেকটাই স্বাভাবিক শয়ে যায়, রক্তের প্লাটিলেট কমতে শুরু করে ফলে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়, গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন কিডনি ধীরে ধীরে কাজ করা কমিয়ে দেয় ফলে প্রস্রাবের পরিমান কমে যায়, রক্তের হেমাটোক্রিট বাড়তে থাকে। এই সময়টিতে উপযুক্ত চিকিৎসা পেলে রোগী পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। আর উল্টোটা হলে অর্থাৎ, চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুবরণ করতেও পারে অথবা দীর্ঘদিনের শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়ে যায়। সমস্যা এবার হয়েছে করোনা আর ডেঙ্গু একই সঙ্গে আঘাত করেছে। দুইটিতেই জ্বর আসে বলে পার্থক্য করা প্রথমে কঠিন হয়ে যায়। আমরা করোনাকে এত ভয় পাই যে, পরীক্ষা করতেও কুণ্ঠাবোধ করি। ডেঙ্গু হলে যেহেতু অনেক ক্ষেত্রেই তৃতীয় দিনের পর থেকে জ্বর কমে যায় ফলে আমরা নিশ্চিন্ত হয়ে যাই বড় কিছু হবে না আমার। আর করোনা হলে জ্বর মোটামুটি এর বেশি দিন থাকে।
এখন দেশজুড়ে টিকার কার্যক্রম চলছে। একেবারে প্রথম দিকে টিকা নিয়ে আমাদের মাঝে আগ্রহ বলতে গেলে ছিলই না। পাশের দেশে করোনা তাণ্ডবের পর আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে করোনা ছড়িয়ে যাওয়াতে টিকার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। এতে গণমাধ্যমের ভূমিকাও অনেক। সঠিক প্রচারের ফলে টিকার কার্যক্রম গতিশীল হয়। গণটিকার কার্যক্রমও শুরু হয় ফলশ্রুতিতে। আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় মানুষ এখন অনেক ক্ষেত্রেই রোগের ইতিহাস লুকিয়ে রাখছে ভয়ে। রোগের ইতিহাস প্রকাশ হয়ে গেলে যদি টিকা না পাওয়া যায়! ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে মাংসপেশিতে ইঞ্জেকশন দেওয়া একেবারেই নিষেধ। কারণ যে জায়গায় ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় সেই জায়গাটি কালচে হয়ে যেতে পারে ত্রুটির কারণে।
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে প্লাটিলেট কমে যাওয়াতে এমনিতেই রক্তক্ষরণ হতে পারে। ফলে ইঞ্জেকশান দেওয়ার কারণে সেটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। যেহেতু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জ্বর মোটামুটি তৃতীয় দিন থেকে চলে যায় ফলে অনেকেই টিকা নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতে পারেন। সেটি করা বিপজ্জনক। পূর্ণ শারীরিক সুস্থতা ব্যতীত টিকা নেওয়াটা এই মুহূর্তে কোনোমতেই উচিত নয়। টিকা সামনের দিনগুলোতেও পাওয়া যাবে বলে সরকার আশাবাদী এবং সেই চেষ্টা অব্যাহত। তাই ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বিরত থাকা উচিত সবার।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।