অমল কৃষ্ণ পালিত,যশোর প্রতিনিধি: চলে গেলেন যশোরের সাংবাদিকতার ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র দৈনিক স্ফুলিঙ্গ পত্রিকার সম্পাদক মিয়া আব্দুস সাত্তার। আজ শুক্রবার (২৩শে ডিসেম্বর) ভোরে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহে অইন্ন্না ইলাহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। দীর্ঘদিন যাবত শারিরীক অসুস্থতায় তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন।
মিয়া আব্দুস সাত্তার নিজেই ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মিয়া আব্দুস সাত্তারের সম্পাদনায় শত্রুমুক্ত যশোর থেকে ১৯৭১ এর ৯ ডিসেম্বর প্রথম প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক ‘স্ফুলিঙ্গ’। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা। যশোর শত্রু মুক্ত হওয়ার পর মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রকাশিত সাপ্তাহিক স্ফুলিঙ্গ ১৯৭৬ সালে দৈনিক পত্রিকায় রূপ নেয়। তিনি যশোরের স্থানীয় সংবাদপত্র জগতের প্রথম পথপ্রদর্শক। যশোরসহ এতদাঞ্চলের সাংবাদিক তৈরিতে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত অনেক সাংবাদিকের হাতেখড়িই দৈনিক স্ফুলিঙ্গ থেকে।
মিয়া আব্দুস সাত্তার ১৯৩৮ সালের ৪ এপ্রিল ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলাধীন সোনাতুন্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মরহুম এসএম আদিল উদ্দিন এবং মা মরহুমা মাজিদুন নেছা। ৪ ভাইয়ের মধ্যে মিয়া আব্দুস সাত্তার ছোট। গ্রামের পাঠশালায় তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু। কর্মচঞ্চল এই মানুষটি শখের বশে জড়িয়ে পড়েন সাংবাদিকতায়। ১৯৫৮ সালে ফরিদপুর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক জাগরণ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন দৈনিক সংবাদ-এর ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি, ইউপিপি এর ফরিদপুর সংবাদদাতা। যশোরের নওয়াপাড়া থেকে প্রকাশিত মাসিক মুকুল এর সম্পাদনা সহকারী হিসেবে মিয়া আব্দুস সাত্তারের যশোর আগমন।
পরে আত্মীয়তার সূত্র ধরে যশোরের নতুন উপশহরে স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন। এছাড়া, তিনি দৈনিক পয়গান, ইস্টার্ণ নিউজ এজেন্সি (এনা) এর যশোর প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সাপ্তাহিক গণদাবী’র বার্তা সম্পাদক, সাপ্তাহিক ইশারা’র যুগ্ম সম্পাদক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। এর বাইরে মিয়া আব্দুস সাত্তার দৈনিক বঙ্গবার্তা, সাপ্তাহিক মুক্তি’র যশোর প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৭ সালে গ্রামের কাগজের দেড় যুগ পূর্তিতে তাকে গুনীজন সম্মাননা প্রদান করা হয়।তাঁর নেতৃত্বে দৈনিক স্ফুলিঙ্গ যশোরসহ এতদাঞ্চলের সাংবাদিকতায় এক ভিন্নমাত্রা যোগ করে। যশোরের সংবাদপত্রের আজকের জয়যাত্রায় দৈনিক স্ফুলিঙ্গ এবং মিয়া আব্দুস সাত্তারের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।