মামুনুর রশিদ মামুন, কুড়িগ্রামঃ না ফেরার দেশে চলে গেলেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত হওয়া, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা পরিষদের (৫ম) বারের মতো নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন সফল সভাপতি হিসাবে দীর্ঘদিন থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
৭১’র এই সৈনিকের ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তার বীরত্বভূষণ নম্বর ১৭২। তিনি সোমবার ভোরে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা।
তিনি বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে পাক বাহিনীকে পরাস্ত করেছিলেন। ১১ নং সেক্টেরের অধিনে হাতিয়ায় সম্মুখ যুদ্ধে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল তার। ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ও বাঙ্গলীকে পাক-হানাদার বাহিনীর কবল থেকে রক্ষা করতে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন।
তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’র ৭ মার্চের ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম ‘সৈয়দপুরে তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙ্গালী সৈনিকদের সঙ্গে পাক আর্মির বেলুচ রেজিমেন্টের সংঘাতের পর তৃতীয় বেঙ্গলের এক প্লাটুনের বেশি সেনা রকেট লাঞ্চার, এমএমজিসহ ভারি অস্ত্র নিয়ে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী হয়ে নদীপথে রৌমারী চলে আসেন।
সেখানে সাদাকাত হোসেন ছক্কু মিয়া ও নুরুল ইসলাম পাপু মিয়ার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সুবেদার আলতাফের নেতৃত্বে শুরু হয় প্রশিক্ষণ। তিনি, গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে এখান থেকে বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেন। পাক বাহিনী মুক্তাঞ্চলের খবর জানতে পেরে ট্রেনে চিলমারী এসে শক্ত অবস্থা গড়ে তোলেন, সেই খবর শুনে তাদের সেই ডিফেন্স ভাঙ্গতে সুবেদার আলতাফের নেতৃত্বে চিলমারী আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল।
দু’দিন পর পাকরা ব্রহ্মপুত্র নদ অতিক্রম করে কোদালকাটির ভেলাবাড়ী স্কুলে অবস্থান নিয়েছিলেন। মোহনগঞ্জে তাদের কিছু সহযোগী ছিল। আলতাফ সুবেদারের নেতৃত্বে তিনি শপথ নেন কিছুতেই পাক বাহিনীকে এগোতে দিবেন না। রাতে দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। ৭ দিন ধরে চলে এ যুদ্ধ। যা ‘কোদালকাটির যুদ্ধ’ হিসেবে পরিচিত। পাক-বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। পরদিন যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে বহুজনের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান তারা। কুকুর সেগুলো নিয়ে টানাহেঁচড়া করছিল।
শহীদ হন ২১ জন মুক্তিযোদ্ধা। বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশ গ্রহন শেষে উলিপুর হাতিয়া অপারেশনে শওকত আলী বীরবিক্রম প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। দেশে স্বাধীনের পর তিনি রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সফল চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তিতে উপজেলা চেয়ারম্যান পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে টানা ৫ম বারের মতো উপজেলা পরিষদের সফল চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সফল সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
৬ সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে ডাক্তার ঁকও দুই ছেলে প্রকৌশলী। স্ত্রী খালেদা খানম একজন গৃহীনী। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম, সোমবার ভোরে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মৃত্যু বরন করেছেন। তার প্রথম জানাজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় চিলমারী সরকারী কলেজ মাঠে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে।
দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ থাকার পর সর্বশেষ ২৮ জুলাই এয়ার এম্বুলেন্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়া হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে মৃত্যু বরন করেন। তাঁর এই মৃত্যুতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন (এম পি),
সাবেক এমপি গোলাম হাবিব, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান, আওয়ামী লীগের সকল সংগঠন ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন, চিলমারী প্রেসক্লাব, উপজেলা প্রেসক্লাব, প্রেসক্লাব চিলমারীসহ অনেকে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।