২০২৩ সাল সম্ভবত মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার বিশাল অংশজুড়ে টানা তাপপ্রবাহ, এলনিনো আবহাওয়া প্যাটার্নের প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ হতে থাকা পানি এবং আটলান্টিক মহাসাগরের তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
সোমবার (১৭ জুলাই) এক বিবৃতিতে এই আশঙ্কা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু গবেষণা বিষয়ক অলাভজনক সংস্থা বার্কলে আর্থ। সংস্থাটির জলবায়ুবিজ্ঞানী জেক হাউসফাদার বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে প্রতিমাসের বৈশ্বিক তাপমাত্রার রেকর্ড রাখছি।
সম্প্রতি এই পরিসংখ্যানে বিশ্লেষণ করে আমরা জানতে পেরেছি, চলতি ২০২৩ সাল সম্ভবত মানবসভ্যতার উষ্ণতম বছর হতে চলছে। আমাদের পরিসংখ্যান বলছে— এমন (ইতিহাসের উষ্ণতম বছর) হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে শতকরা ৮০ শতাংশেরও বেশি। ’
বিশ্বজুড়ে শিল্পকারখানাভিত্তিক উৎপাদন শুরু হয় ১৮৫০ সালের কিছু আগে থেকে। জাতিসংঘের জলবায়ু প্রতিবেদন অনুসারে, তারপর থেকে এ পর্যন্ত গত ১৭৩ বছরে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বার্কলে আর্থের এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছে ফ্রান্সের জলবায়ু গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর সাইন্টিফিক রিসার্চ। সংস্থার জলবায়ু বিজ্ঞানী ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ক্যামিল্লে পারমেসান মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘বিজ্ঞানীরা গত ২০ বছর ধরেই এই আশঙ্কা করছেন। এই অবস্থার জন্য দায়ী মূলত আমরা। আমাদের বেপরোয়া শিল্পায়ন, বনজঙ্গল ধ্বংস ও লাগমহীন কার্বন নিঃসরণ বিশ্বকে আজ এই অবস্থায় দিকে ঠেলে দিয়েছে। ’
বিশ্বজুড়ে শিল্পকারখানাভিত্তিক উৎপাদন শুরু হয় ১৮৫০ সালের কিছু আগে থেকে। জাতিসংঘের জলবায়ু প্রতিবেদন অনুসারে, তারপর থেকে এ পর্যন্ত গত ১৭৩ বছরে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গড় তাপমাত্রার এই পরিমাণ বৃদ্ধি ইতোমধ্যে বিশ্বের জলবায়ুর ভারসাম্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং বিলুপ্তির ঝুঁকিতে ফেলেছে অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতিকে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বছরের পর বছর ধরে অতিমাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, বনাঞ্চল ধ্বংস এবং বাতাসে নিয়মিত স্বাভাবিকমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি হারে কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃস্বরণকে দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা গত ২০ বছর ধরেই এই আশঙ্কা করছেন। এই অবস্থার জন্য দায়ী মূলত আমরা। আমাদের বেপরোয়া শিল্পায়ন, বনজঙ্গল ধ্বংস ও লাগমহীন কার্বন নিঃসরণ বিশ্বকে আজ এই অবস্থায় দিকে ঠেলে দিয়েছে।
জলবায়ুবিদরা বলেছেন, ১৮০০ সালের পর থেকে বিশ্বে সর্বোচ্চ উষ্ণ যেসব দিনের অতীত রেকর্ড রয়েছে— সেসবের মধ্যে অন্তত ১০টি দিনের রেকর্ড এ বছর গ্রীষ্মেই ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ব্লুমবার্গকে জেক হাউসফাদার বলেন,‘প্রত্যেক ১০ বছর পর পর এলনিনো আবহাওয়া প্যাটার্ন ফিরে আসে এবং তা কম-বেশি ৫ থেকে ৬ বছর স্থায়ী হয়। এ সময় প্রশান্ত মহাসাগরের বিশাল এলাকাজুড়ে উষ্ণ জলস্রোতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে বৈশ্বিক আবহাওয়াতেও তার প্রভাব পড়ে। ’
তিনি আরও বলেছেন, ‘প্রকৃতির নিয়ম মেনে এর আগেও অসংখ্যবার এলনিনো আবহাওয়া প্যাটার্ন এসেছে, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি মতো সংকট কখনও সৃষ্টি হয়নি। এখন আমরা বিশ্বজুড়ে অতিবর্ষণ, খরা, বন্যা, ঝড়, তাপপ্রবাহ ইত্যাদি আবহাওয়াগত বিপর্যয় অতিমাত্রায় বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি— তার প্রধানত মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে ঘটছে। ’
‘এবং আমরা যদি অতিদ্রুত নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না আনতে পারি, সেক্ষেত্রে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। ’ যোগ করেন জেক হাউসফাদার।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।