দানিং ড্রেস পরে বাইরে যাওয়ার সময় ১১ বছর বয়সী সামারার কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছে। সে মাকে ঠিক বলতেও পারছে না। সামারার মা নিজেই বিষয়টি বুঝতে পারলেন যেদিন দেখলেন সামারা তার সবচেয়ে পছন্দের জামাটি আর পরতে চাচ্ছে না। তখনই তার মনে হলো, সামারা তাহলে বড় হয়েই গেলো! এবার মেয়ের জন্য প্রথম ব্রা কেনার সময় হয়েছে। সামারার মতো স্কুলে পড়ুয়া টিনেজার মেয়েদের জন্য এটা খুব কমন একটি সমস্যা। আজকের আর্টিকেলে জানাবো টিনেজার মেয়েরা কোন বয়সে ব্রা পরার সিদ্ধান্ত নিবে সে সম্পর্কে।

টিনেজার মেয়েরা কীভাবে বুঝবে ব্রা এর প্রয়োজন আছে কিনা?
মানবদেহে পিউবার্টি (এ স্টেজে মেয়েরা ১০-১৪ এবং ছেলেরা ১২-১৬ বছর বয়সে সেক্সুয়ালি ম্যাচিউর হয়) এমন একটি স্টেজ যখন শরীরে অনেক বড় পরিবর্তন আসে। ছেলে-মেয়েরা হুট করেই বড় হয়ে যায়, মুখে ব্রণ হয়, টিনেজার মেয়েরা তাদের প্রথম পিরিয়ডের মুখোমুখি হয়, মেয়েদের চেস্ট বড় হতে থাকে।

বড় হওয়ার ঠিক এ মুহুর্তেই মেয়েদের প্রথম ব্রা ব্যবহার করার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু ঠিক কোন সময় বা কোন ঘটনাগুলোর মুখোমুখি হলে টিনেজার মেয়েরা বুঝতে পারে তাদের ব্রা পরতে হবে? চলুন জেনে নেই এ বিষয়ে-

টিনেজার মেয়েদের জন্য ব্রা

১) ব্রেস্ট ডেভেলপ হলে
আপনি যদি বুঝতে পারেন আপনার চেস্ট বড় হচ্ছে, সাথে একটু ডিফারেন্টও- তখন বুঝতে হবে এবার প্রতিদিনের পোশাকের সাথে নিত্য সঙ্গী হতে চলেছে ব্রা। শরীর যখন পিউবার্টির মধ্য দিয়ে যায়, তখন শরীরে ইস্ট্রোজেন নামক এক ধরনের হরমোন তৈরি হয়। এই হরমোনের কারণেই ব্রেস্ট ধীরে ধীরে বড় হয়।

২) বন্ধুদের দেখে আগ্রহী হওয়া
টিনেজ মেয়েদের মধ্যে অনেকেই ব্রা পরে। যদি আপনার বান্ধবীরাও ব্রা পরে তাহলে আপনিও পরার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। শারীরিক গঠন অনুযায়ী যদি ব্রা পরার সময় নাও হয়, চাইলে প্রথম দিকে ক্রপ টপ ব্যবহার করা যায়। তবে যদি ঠিক সে মুহুর্তে আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকেন, তবে আরও কিছুদিন সময় নিন। বাইরে যাওয়ার সময় আনকমফোর্ট লাগলে তখনই পরুন।

৩) স্তনে যদি ব্যথা হয়
স্তন বড় হওয়ার সাথে সাথে ব্যথা হতে পারে। এ সময় শরীরের হরমোনগুলোর কারণে স্তনের আশেপাশের স্কিনে টান লাগে, স্তনে থাকা ফ্লুইডের লেভেল চেঞ্জ হয়ে যায়। মূলত এসব কারণেই ব্যথা হয়। যদি এ ধরনের কোনো ব্যথা বা অস্বস্তি হয়, তবে একদম ভড়কে যাওয়ার কিছু নেই। এ সময়েই ব্রা পরার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।

৪) খেলাধুলার সময় অস্বস্তি হলে
অনেক মেয়েই টিনেজ বয়সে খেলাধুলা বা ব্যায়াম করে। দৌড়াদৌড়ি, খেলা বা ব্যায়ামসহ যে কোনো ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিজ করার সময় স্তন বেশি মুভ করতে পারে। এমন হলে ব্রা কেনার উপযুক্ত সময় হয়ত সেটাই। বাইরের অ্যাক্টিভিটিজগুলো করার সময় চাইলে স্পোর্টস ব্রা ব্যবহার করা যায়।

সত্যি বলতে টিনেজার মেয়েরা কখন প্রথম ব্রা পরবে তার কোনো ম্যাজিকাল এইজ বা সময় নেই। উপরে লেখা কোনো ঘটনার মুখোমুখি হলে ব্রা কেনার কথা ভাবতে হবে। লাইফের বেশ বড় একটি চেঞ্জ এটি ব্যবহারের মাধ্যমে শুরু হয় বলে প্রথম দিকে কিছুটা আনকমফোর্টেবল লাগতে পারে। এমন হলে মা-বাবা, বড় বোন অথবা ক্লোজ কারও সাথেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলা যায়।

মা ও মেয়ে

মায়েরা টিনেজ মেয়ের প্রথম ব্রা কবে কিনবেন?
সাধারণত মেয়েদের জন্য প্রথম ব্রা কেনার বয়স ১০-১১ বছর। মায়েরা সরাসরি না বললেও মেয়ের কথা বা আচরণেও বোঝা যায় সে ব্রা ব্যবহার করতে চাচ্ছে কিনা। কীভাবে বুঝবেন আপনার মেয়ে ব্রা কিনতে চাচ্ছে বা পরতে চাচ্ছে কিনা-

মেয়ে যদি ব্রা কেনার কথা নিজে থেকে বলে
যদি মেয়ের বান্ধবীরা ব্রা পরে
যদি চেস্ট নিয়ে সে ডিজকমফোর্ট ফিল করে
কীভাবে বুঝবেন আপনার মেয়ের ব্রা প্রয়োজন কিনা
?

প্রি-টিন বা টিনেজ মেয়েরা খুব সহজেই নিজের পছন্দসই বা সাইজ অনুযায়ী আন্ডারগার্মেন্টসের কথা বলতে পারে না। যদি এমনটি হয়, তাহলে অভিভাবক হিসেবে আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে। যদি মেয়ে নিজ থেকেই ব্রা কেনার কথা বলে তাহলে বুঝতে হবে তার ব্রেস্ট বাডস ডেভেলপ হচ্ছে। অর্থাৎ ব্রেস্ট টিস্যু ডেভেলপ হচ্ছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এমনটি সাধারণত ৮-১৪ বছর বয়সের মধ্যে হয়। তাই মেয়েদের ঠিক কোন বয়সে প্রথম ব্রা পড়া উচিত তার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। যে বয়স থেকে মেয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবে সে বয়স থেকেই ব্রা পরা যায়। সবচেয়ে ভালো হয় মেয়েকে জিজ্ঞেস করে নিলে। সে পরতে রাজি কিনা, কবে থেকে পরতে চায়, কোনো হেল্প লাগবে কিনা, কোনো পছন্দ আছে কিনা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারলে অভিভাবকেরও ব্রা কেনার বিষয়টি সহজ হয়ে যাবে।

মেয়েকে জিজ্ঞেস করার পর সে যদি দোকানে গিয়ে ব্রা কিনতে না চায় তবে মাপ অনুযায়ী অনলাইনেও অর্ডার করতে পারেন। মনে রাখবেন, এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলা কোনো ট্যাবু নয়, বরং তাকে কনফিডেন্ট হিসেবে গড়ে তোলার একটি ধাপ।

সঠিক মাপের ব্রা

খেয়াল রাখতে হবে যেসব দিকে
১) ব্রা’র টেপ বা স্ট্রিং লেভেল বডির চারপাশ কভার করছে কিনা, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। নইলে ব্রা ফিট হবে না।

২) পছন্দসই ব্রা বাছাই এর পর সেটি যেন বেশি টাইট না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। টাইট হলে স্কিনে দাগ হয়ে যাবে।

৩) বডির মেজারমেন্ট অনুযায়ী সঠিক মাপের ব্রা বেছে নিতে হবে। ছোট বা বড় হলে পরতে একদমই কমফোর্ট ফিল হবে না।

৪) যদি মেজারমেন্ট করতে অসুবিধা হয় তাহলে মা বা ক্লোজ কারো হেল্প নেওয়া যায়।

ব্রা ব্যবহারের খুঁটিনাটি
প্রথম ব্রা ব্যবহারের সময় বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়। যেমন- কীভাবে ব্যবহার করবো ঘুমানোর সময়ও পরতে হবে কিনা, কীভাবে যত্ন নিবো এমন নানা প্রশ্ন। আমি চেষ্টা করছি সহজে কিছু পয়েন্ট বলে দেওয়ার।

১) যদি আপনার ব্রেস্ট টিস্যুর গ্রোথ বেশি হয়, তাহলে স্পোর্টস, টিউব কাপ বা ক্রপ টপের বদলে A কাপ সাইজের ব্রা বেছে নেওয়া যায়। এমন হলে অবশ্যই সফট কাপযুক্ত ব্রা বেছে নিতে হবে।

টিনেজার ব্রা

২) ব্রেস্টের মাপ বোঝার জন্য প্রতি চার সপ্তাহ অর্থাৎ এক মাস পরপর মাপ দিতে হবে। যদি খুব বেশি পরিবর্তন না হয়, তাহলে টিনেজ ব্রা গুলোই রেগুলার ব্যবহার করা যাবে।

৩) রাতে ঘুমানোর আগে ব্রা খুলে রাখতে হবে। কিছু ব্রা প্যাডিং হয়, সেগুলো পরে রাতে ঘুমালে ব্রেস্টের ডেভেলপমেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। তাই সচেতন থাকতে হবে এ বিষয়েও।

৪) ইউজ করার পর ব্রা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। হার্শ কেমিক্যালযুক্ত কোনো প্রোডাক্ট নয়, বরং মাইল্ড ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিলেই হবে।

৫) ইনার ওয়্যার যদি প্রোপারলি ফিট না হয়, তাহলে ব্রেস্ট এর শেইপ চেঞ্জ হয়ে যেতে পারে। এমন হয় বলেই অনেক মেয়েরই স্তন ঝুলে যায়, ব্যাকপেইন হয়। তাই সঠিক মাপের ব্রা চুজ করা খুবই ইম্পরট্যান্ট।

৬) শপ হোক বা অনলাইন, ব্রা সিলেকশনে ম্যাটারিয়ালের দিকে খেয়াল রাখা খুবই জরুরি। ভুল ম্যাটারিয়াল দিয়ে তৈরি ব্রা বেশিক্ষণ পরে থাকলে ইচিং, ইনফেকশন, স্যাঁতস্যাঁতে ফিল হতে পারে। কাজে মন বসানো যাবে না। সব সময় অস্বস্তি লাগবে।

তথ্যসূত্র : সাজগোজ.কম