লালমনিরহাট জেলা সদর উপজেলার কুলাঘাটে অবস্থিত লালমনিরহাট – ফুলবাড়ী সড়কে কুলাঘাট রত্নাই নদীর ওপর থাকা স্ট্রীল ব্রীজটি যে দ্রুত সংস্কার করা দরকার। স্ট্রীল ব্রীজের স্ট্রীলের পাটাতনের কয়েকটি জায়গায় গর্তের সৃষ্টি হয়ে বছরের পর বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। অথচ তা মেরামতের কোনো উদ্যোগই নেইনি এখনো।
নদীর উপর স্ট্রীল ব্রীজ নির্মাণ করা হয় অনেক বছর আগে। নির্মাণের পর কয়েক বার সংস্কার করা হয়। কিন্তু সংস্কারের কিছুদিন যেতে না যেতেই ব্রীজে গর্তের সৃষ্টি হয়। তখন শুধু গর্তই মেরামত করা হয়। এরপর আরও কয়েক বার গর্ত মেরামত করেন। প্রায় চার বছর আগে “শেখ হাসিনা ধরলা সেতু” জনগণের জন্য খুলে দেয়া হয়। এতে করে লালমনিরহাট-ফুলবাড়ী-নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারী উপজেলার মানুষ ও যানবাহন যাতায়াত বেড়ে যায়। এখন পুনঃরায় গর্ত সৃষ্টি হলেও এখন তা মেরামত করতে কেউই এগিয়ে আসছে না। অথচ প্রতিদিন এই ব্রীজের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে হালকা ও ভারী অনেক যানবাহন চলাচল করে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
অবশ্য শুধু এই ব্রীজই নয়, দেশের আরও বহু স্থানে বহু ব্রীজ এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দিনের পর দিন সংস্কার হচ্ছে না। বড় বড় অনেক প্রকল্প হচ্ছে, অনেক অর্থ খরচ হচ্ছে। সেগুলোর প্রয়োজন নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু মানুষের প্রাত্যহিক চলাচল ও জীবন-জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কিত যে উন্নয়ন কার্যক্রম, তা কী করে উপেক্ষিত থাকে! এই যে ব্রীজটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটে, তবে এর দায় কে নেবে?
শুধু ব্রীজ নির্মাণ করলেই হবে না, এর রক্ষণাবেক্ষণ ও নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নতুন করে তৈরির বিষয়টিও উন্নয়ন প্রক্রিয়ার অংশ। নিয়মিত সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দেশের বহু ব্রীজের আয়ুষ্কাল যেমন কমছে, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজের ওপর ‘ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজ’ বা ‘ভারী যান চলাচল নিষেধ’, এমন সাইনবোর্ড ঝুলিয়েই অনেক সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনে করে তাদের দায়িত্ব শেষ। এখানে জবাবদিহির বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি।
নিয়ম অনুযায়ী, ১হাজার ৫০০মিটার বা ততোধিক দৈর্ঘ্যের ব্রীজের দায়িত্ব বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের। এর চেয়ে কম দৈর্ঘ্যের ব্রীজ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগ বা সওজের। আর গ্রাম এলাকার রাস্তা তৈরি এবং গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামতের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। এসব কর্তৃপক্ষকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন ও সেতুগুলোর ওপর তদারকি ও নজরদারি জোরদার করতে হবে।
আমরা আশা করব, স্ট্রীল ব্রীজসহ দেশের সব ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
উল্লেখ্য যে, উক্ত রোডে “সাবধান ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ৫টনের অধিক যানবাহন চলাচল নিষেধ। আদেশক্রমে- নির্বাহী প্রকৌশলী, সওজ, লালমনিরহাট” লেখা সাইন বোর্ড ঝুলে দিয়ে দায় এরিয়েছেন সওজ।
জানান, লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাটে রত্নাই নদীর ওপর অনেক পুরাতন ও জরাজীর্ণ বেইলী ব্রিজের কারণে শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর সুফল থেকে আমরা ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত। আমরা ঢাকা, রংপুর ও লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে পণ্য আনা নেওয়া করতে পারছি না, সে কারণে শেখ হাসিনা ধরলা সেতুটি আমাদের আশা পূরণ করছে না। আমরা ব্যবসায়ীরা এখনও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ছি। তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন দ্রুত সময়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলার বেইলী ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণ করার দাবি জানাচ্ছি।
লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আলহাজ্ব শেখ আব্দুল হামিদ বাবু বলেন, কুলাঘাটে রত্নাই বেইলী ব্রীজটির কারণে আমরা লালমনিরহাট সদর, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুনগামারী উপজেলার ব্যবসায়ীরা সুফল পাচ্ছি না। লালমনিরহাটবাসীর পক্ষে বারবার লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগকে চাপ দিয়ে আসছি কিন্তু কোন কাজে আসছে না। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি যেন দ্রুত গতিতে লালমনিরহাট সদরের কুলাঘাট রত্নাই নদীর ওপর নতুন একটি সেতু নির্মাণ করে শেখ হাসিনা ধরলা সেতুকে সার্বিক ব্যবহার উপযোগী করলে এই চার উপজেলার ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। লাভবান হবে এ অঞ্চলের সামাজিক অর্থনীতি।
যানবাহন চালকেরা   জানিয়েছে, শেখ হাসিনা ধরলা সেতু উদ্বোধনের ৪ বছর পেড়িয়ে গেলেও এই রত্নাই ব্রীজ ঠিক  করতে না পারায় ব্যবসায়ীরা ঠিক মতো পণ্য আনা নেওয়ায় করতে পারছে না এবং পণ্য  আনা- নেওয়াতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে।তাই যদি দ্রুত কুলাঘাটে রত্নাই নদীর ওপর একটি ব্রীজ নির্মাণ করেতাহলে শেখ হাসিনা ধরলা সেতুকে শতভাগ সুফলভোগী সেতুতে বলে পরিণত  হবে।