বগুড়ার নামুজা বাজার এলাকায় নামুজা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত সাবেক শাখা ম্যানেজারের বেতন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আত্মসাত ও গ্রাহকদের কাছে নেয়া অর্থের গড়মিল ও বিভিন্ন ক্ষাত থেকে গ্রাহকের অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে ।

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) পাওনা টাকার দাবিতে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ম্যানেজার এস এম সাবিবুর রহমান জুয়েল।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছর রবিবার (৯মার্চ) চাকুরী হতে অব্যহতির আবেদন করেন ভুক্তভোগী, অব্যহতির দরখাস্তকারী প্রতিষ্ঠানের সকল শর্ত পুরণ করে চাকুরী থেকে অবসরে যান। তবে তার আগের বছর ২০২০ সালের মে মাসের বেতন ২১,০৫৬ টাকা, গত বছর ২০২১ সালের মার্চ ও এপ্রিল মাসের বেতন যথাক্রমে ২১,৮০৮ টাকা ও ৬ দিনের বেতন ৪,৩৫২ টাকাসহ আনুসাঙ্গীক টিএডিএ সহ প্রায় ৭০০ টাকা, চাকুরীর জামানত ২০,০০০ টাকা, প্রভিডেন্ট ফান্ডে এর জমা কৃত ৮০,৯১০টাকা, প্রভিডেন্ট ফান্ড এর লভ্যাংশ-১৬,২০৬টাকা,ষ্ট্যাপ কল্যান তহবিল ৩,৮৯৯টাকা সর্বমােট ১,৬৮,৯৪১/-টাকা এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী সিকিউরিটি হিসাবে জমা স্বাক্ষরকৃত ফাঁকা চেক যা মিউচুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংক লিমিটেড এর হিসাব নং-০৪১০৩১০১৮৭৮২, চেকের পাতা নং-SBA ৬৬০৮৪৪২ ও SBA ৬৬০৮4৪৪ পরিশােধ করেনি সংস্থাটি।


এদিকে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম অনুযায়ী চাকুরী থেকে অব্যহতির দিন হতে পরবর্তী ২ মাসের মধ্যে পরিশােধ করে দেয়ার কথা থাকলেও ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুযায়ী নামুজা অর্থনেতিক উন্নয়ন সংস্থা তা করেনি বরং দেনা পাওনা পরিশোধ করতে গড়িমসি করে।

অন্যদিকে ভুক্তভোগী এ বিষয়ে বলেন, ‘আজ দেব কাল দেব বলে প্রতিষ্ঠানটি ২মাসের জায়গায় ১বছর পার করে দিয়েছে, ০৯/১০/২০২১ তারিখে প্রতিষ্ঠানটির কাছে থেকে পাওনা চাইতে গেলে তারা (নিডো) দিতে অস্বীকার করে। পরে তাদের(প্রতিষ্ঠানটির) বিরুদ্ধে আমি গত ১০/১০/২০২১ ইং তারিখে ১৫(পনের) দিনের সময় দিয়ে লিগ্যাল নােটিশ পাঠায় এবং তারা তাতেও কোনো সাড়া না দিলে শ্রম আদালতে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩২ এর ১ ধারায় মামলা দায়ের করি।’

তিনি কলম কথাকে আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান, নিডোর একাউন্ট ও ফিন্যান্স পরিচালক হারেছ উদ্দীন এই সংস্থাটির গ্রাহকদের বিপুল পরিমান অর্থ অবৈধ পথে নিজেদের কাজে ব্যবহার করে এবং গ্রাহকদের সঞ্চয় এর লভ্যাংশের একটি বড় অংশ লোপাট করতেন। এসব দুর্নীতি ও অনিয়ম দেখে আমি স্ব ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠানটি থেকে অব্যাহতি নিয়ে বের হয়ে আসি আর তার ক্ষোভে প্রতিষ্ঠানটি আমাকে নিস্ব করে দিয়েছে। এখন আমি কোন চাকুরী না করে আমার স্থানীয় বাসা রাজশাহীর পবায় একটি খামার করে গবাদি পশুর ব্যাবসা করতে চাই কিন্তু টাকা গুলো না পাওয়ার কারণে কিছুই করতে পারছি না। বর্তমানে আমি খুব অসহায় জীবনযাপন করছি।’

এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে আমাদের সাথে কথা হয় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান নামুজা অর্থনেতিক উন্নয়ন সংস্থা (নিডো)’র নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম এর সাথে তিনি এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি (ভুক্তভোগী) আমার প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন তবে কেনো বা কি কারণে তিনি চাকুরী ছেড়ে চলে গেছেন সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না তবে তার পাওনা টাকা আমরা পরিশোধ করতে আগ্রহী তবে তার আগে আমাদের অফিস তার কাছে যে অর্থ / হিসাব পাবে যা তার নামে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে সেই হিসাব এবং অর্থ আমাদের বুঝিয়ে দিলেই আমরাও তার (ভুক্তভোগী)’র সকল পাওনা পরিশোধ করে দিবো।’

তিনি আরও বলেন, যে সকল দূর্নীতি ও অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে তা সঠিক নয়।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালকের অভিযোগ এর বিষয়ে ভুক্তভোগী কলম কথাকে  বলেন, ‘আমি চাকুরী থেকে অব্যাহতির আগেই আমার শাখার সকল হিসাব বুঝিয়ে দিয়েছি যার লিখিত ও তৎকালীন আমার শাখায় কর্মরত কর্মকতা ও কর্মচারীর সাক্ষরকৃত প্রত্যায়ন আমার কাছে রয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম অনুযায়ী আমার হিসাব ভুল থাকলে আজ এক বছর পর এমন অভিযোগ না করে দুই মাসের বেধে দেওয়া সময়েই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হতো, তাই বোঝা যাচ্ছে এই অভিযোগ সব ভিত্তিহীন।’

শ্রম আদালতে মামলাটি চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর আইনজীবী এ্যডভোকেট সাজ্জাদ হোসেন প্রামাণিক।