অতীতের আন্দোলন ব্যর্থতার পেছনে ঢাকা মহানগরকে দায়ী করে আসছে বিএনপির তৃণমূল। এজন্য মহানগরকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় দলটির হাইকমান্ড। ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি করা হয়।

কিন্তু ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশসহ পরবর্তী সময়ে গণমিছিল, গন-অবস্থান ও বিক্ষোভ সমাবেশে প্রত্যাশা অনুযায়ী মহানগর নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল না। এ নিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটিতেও সমালোচনা হয়। ঢাকা মহানগরকেন্দ্রিক কর্মসূচি পালন করার ব্যাপারে মত দেন নীতিনির্ধারকরা।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে মহানগরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ‘পদযাত্রা’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। চারদিনের এ কর্মসূচির মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে চায় ঢাকা মহানগর। এজন্য ব্যাপক প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। সব বিভেদ ভুলে নেতাকর্মীদের এ কর্মসূচি সফল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শনিবার মহানগর উত্তর বিএনপি রাজধানীর বাড্ডা থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত এবং ৩১ জানুয়ারি গাবতলী টার্মিনাল থেকে শুরু করে মিরপুর-১নং হয়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। একইভাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি ৩০ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত এবং ১ ফেব্রুয়ারি মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। প্রতিটি পদযাত্রা দুপুর ২টায় শুরু হবে।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ১০ দফা দাবি আদায়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি চার দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে। আশা করি, এই কর্মসূচি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হবে এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবি আরও বেগবান হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ কর্মসূচি মহানগর বিএনপির। অন্যান্য দলকেও বলব, তারা অংশগ্রহণ করতে চাইলে যুগপৎভাবে করবেন।

পদযাত্রা কর্মসূচি সফল করতে দফার দফার বৈঠক করছেন মহানগর নেতারা। বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যৌথ সভা হয়। সূত্র জানায়, সভায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ মহানগরের অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা পদযাত্রা কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেবে বলে জানান। মহানগর বিএনপি নেতারাও অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি নেতাকর্মী থাকবে বলে অঙ্গীকার করেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক জানান, মহানগরের সব ওয়ার্ড কমিটি ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। বুধবার উত্তরের ২৬ থানার কমিটিও ঘোষণা করা হয়। দক্ষিণেরও ২৪ থানার কমিটি যে কোনো সময় দেওয়া হবে। এসব কমিটি গঠন নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকলেও পদযাত্রা কর্মসূচিতে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই অংশ নেবেন। বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশনা হচ্ছে, যেসব নেতা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না, তাদের তালিকা করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

‘আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে’ ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ সব বিভাগীয় সদরে সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে। এর আগেই ঢাকা মহানগর বিএনপি চার দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি দিল।

বিএনপির দুজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঢাকা মহানগরকে আরও শক্তিশালী দেখতে চান। সম্প্রতি মহানগরের এক শীর্ষ নেতা লন্ডনে গিয়েছিলেন। তাকে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মূলত জেলার নেতারা মনে করেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অতীতে যে আন্দোলন হয়েছে, সেখানে তৃণমূলের কোনো ব্যর্থতা ছিল না। শুধু ঢাকা মহানগরের কারণে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলেও সফলতা ঘরে আসেনি।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, আগের মতোই পদযাত্রা কর্মসূচিও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করব। এ কর্মসূচির বিষয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশকে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি, পুলিশ অনুমতি দেবে। কারণ, বরাবরই বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ফুটপাত দিয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করব। আশা করছি, দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও এতে অংশ নেবেন।