- এ বছর তালিকা হবে বিতর্কিত এমপি-মন্ত্রীদের
- খোঁজা হবে উজ্জ্বল ভাবমর্যাদার নেতাদের
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিতর্কিত এমপি-মন্ত্রীদের লাগাম টানবে আওয়ামী লীগ। যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দলের ভেতর উপদল সৃষ্টি করেছেন, দুর্নীতি করেছেন, দুর্নীতিতে সহায়তা করেছেন, দিয়েছেন আশ্রয়-প্রশ্রয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়নবাণিজ্য করেছেন এবং আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ইতোমধ্যে তাদের তালিকা সরকারপ্রধান ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে পৌঁছে গেছে। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির অর্ধশত এমপি-মন্ত্রীর কপাল পুড়বে তা অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে আরও সুসংগঠিত ও গ্রহণযোগ্য করতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ, কোন্দল, বিভেদ-বিভাজন ভেঙে দিতে ইতোমধ্যে নিদের্শনা দিয়েছেন তিনি। নেত্রীর নির্দেশনার পর বসে নেই দলটির বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
তারা তৃণমূলে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটের সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে বিতর্কিত ও অজনপ্রিয়দের বাদ দিয়ে দলের দুর্দিনের পরীক্ষিতদের দায়িত্বশীল পদ-পদবিতে নিয়ে আসছেন।আওয়ামী লীগের টার্গেট শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ গঠনের মধ্যে দিয়ে ফের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসা।
সূত্রে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য থাকবে ২১০টি আসন। বাকি ৯০টি আসন মহাজোটের জন্য রাখার পরিকল্পনা হতে পারে। ২১০টি আসনকে লক্ষ্যমাত্রা রেখেই নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুত করবে দলটি। এ জন্য দেশের প্রায় অর্ধশতাধিক এমপি-মন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যক্রম মনিটরিং করছেন ক্ষমতাসীন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা।
যে সব এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকাবিরোধী কার্যক্রম ও বিদ্রোহীদের ইন্ধন দেয়া, মাঠপর্যায়ের কর্মীদের ক্ষমতার প্রভাব দেখানো, পরিবারের লোকজন দিয়ে স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ, ত্যাগীদের অমূল্যায়ন, বলয়-বিভেদ সৃষ্টি এবং দল ভারী করতে হাইব্রিড নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করার অভিযোগ রয়েছে— এসব অভিযোগ চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
এছাড়া কোথায় কোথায় জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সাথে এমপিদের দূরত্ব বেড়েছে তা খোঁজ নেয়া হচ্ছে এবং সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। বিতর্কিতদের জায়গায় খোঁজা হবে তরুণ, ত্যাগী ও সৎ নেতাদের।
তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হবে তৃণমূল নেতাদের মতামতকে। নৌকার মনোনয়ন পেয়ে যারা সাংগঠনিকসহ সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে নিষ্ক্রিয়, এমন নেতাদেরও তালিকায় যুক্ত করা হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যে সব এমপি দলের অভ্যন্তরে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন ওই সব এমপিদের নাম উল্লেখ করে সাংগঠনিক রিপোর্ট তৈরি করা হবে এবং তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সমাপ্ত হওয়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় এবং দলের প্রভাবশালীরা যারা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, বিদ্রোহীদের ইন্ধন দিয়েছেন— তাদের মদতে অনেক স্থানে ভোটের মাঠে নৌকার পরাজয় হয়েছে। তাদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগের সংঘাত, সহিংসতা, মারামারি, খুনোখুনি ও হামলা-মামলা। অভিমানে অনেকে রাজনীতি ছেড়ে নীরব হয়ে গেছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাঠে প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন অনেক এমপি-মন্ত্রী ও জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা।
দলীয় নেতার হাতে কর্মী খুনের ঘটনাও ঘটেছে। বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতা বিরোধীদের আওয়ামী লীগে এনে যেমন পুনর্বাসন করেছেন অনেক এমপি, ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন, আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে পৃথক বলয় গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করায় বেশ কিছু এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়েছিল কেন্দ্রে। তৃণমূলে এমন বেহাল অবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ খোদ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ফলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অভিযুক্তদের আর মনোনয়ন দেবেন না তিনি। কারণ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত এমপিদের বাদ দিয়ে উজ্জ্বল ভাবমর্যাদার প্রার্থীর হাতে নৌকা তুলে দিতে পারলে জয়ের ব্যাপারে অনেকখানি নির্ভার থাকা যাবে। বিতর্কিত এমপিদের পরিবর্তন না করে আবারো মনোনয়ন দেয়া হলে দলের ভাবমর্যাদা যেমন নষ্ট হবে, তেমনি ওই প্রার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান বলেন, ‘দলের মধ্যে কোথায় কোথায় বিভেদ আছে সেগুলো সমাধানের জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের নির্দেশনার পর কার্যক্রমও শুরু করেছি। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে এগুলো সমাধান হয়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিতর্কিতরা কোনোভাবেই ছাড় পাবেন না। তাদের সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। যে সব এমপি-মন্ত্রীর কারণে নেতায় নেতায় বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে তাদের আর কোনোভাবেই নৌকার মনোনয়ন দেয়া হবে না।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘তৃণমূলে সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে সৃষ্ট বিভেদ, বিভাজন ও বিভক্তির লাগাম টানা হচ্ছে। দলের অভ্যন্তরে সুযোগসন্ধানী ও অনুপ্রবেশকারীদের ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। যাদের কারণে নেতাকর্মীদের মাঝে দূরত্ব বেড়েছে; তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিকল্প নেই। তাই শক্তিশালী তৃণমূল গঠনের মধ্যে দিয়ে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের মাঠে নৌকার নিরষ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করা হবে।’
তথ্যসূত্র: আমার সংবাদ
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।