আগামীকাল রোববার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। এই দিনটিকে লক্ষ্য করে সারা দেশে মানববন্ধনের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে থাকা অন্যান্য দল ও জোটগুলোও এই কর্মসূচি পালন করবে। কর্মসূচিতে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটাতে বিএনপির হাইকমান্ড দায়িত্বশীলদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে। কর্মসূচিতে দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও কারাবন্দী এবং গুম-খুনের শিকার হওয়া পরিবারের সদস্যরাও অংশগ্রহণ করবেন।
জানা গেছে, মানবাধিকার দিবসে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সার্বিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নিপীড়নের চিত্র গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে বিএনপি। দলটির নেতাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আগে থেকেই ওয়াকিবহাল গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিশেষ করে পশ্চিমারা তাদের ভূমিকা শিগগিরই আরো জোরালো করবে।
আগামীকাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা পর্যায়ে মানববন্ধনের কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও যুগপতে থাকা মিত্ররা। সরকার যে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন ঘটিয়ে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তা পশ্চিমাসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে ফের তুলে ধরবে তারা। একইসাথে হরতাল-অবরোধের সাময়িক বিকল্প হিসেবে এ ধরনের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়াতে চায় বিরোধীরা।
জানা গেছে, নির্বিঘে্ণ এ মানববন্ধন সম্পন্ন করতে পারলে ব্যাপক সমাগম হয়, এমন কর্মসূচি শিগগিরই আরো ঘোষণা করা হতে পারে। অন্যথায় ফের হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতে ফিরবে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা। এ জন্য গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের পরে অনুষ্ঠিতব্য দলের এই কর্মসূচিকে ঘিরে সরকারের আচরণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। এ দিন ঢাকায় মানববন্ধন হবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেলা ১১টায়। কর্মসূচিতে দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও কারাবন্দী এবং গুম-খুন পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপি ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে অন্যান্য জেলাগুলোও প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
জানা গেছে, ঢাকায় কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমানের মতো সিনিয়র নেতারা থাকবেন। তবে কৌশলের অংশ হিসেবে মামলা ও পরোয়ানা থাকা নেতাকর্মীরা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন।
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে যে মানবাধিকার নেই, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে সেটা প্রতিষ্ঠিত করাই এই কর্মসূচির লক্ষ্য।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘সরকারের দিক থেকে কোনো বাধা-বিপত্তি আসলে তা প্রতিহত করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে এই মানববন্ধন কর্মসূচি সফল করতে হবে। ঢাকাসহ সারা দেশের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বলব- যেসব পরিবার নিপীড়ন-নির্যাতন, গুম-খুনের শিকার হয়েছে- সে সব পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসে আপনারা মানববন্ধনে উপস্থিত করবেন।’
বিএনপি ছাড়াও গণতন্ত্র মঞ্চসহ যুগপতের শরিকরাও মানবাধিকার দিবসে মানববন্ধনের কর্মসূচি পালন করবে। গণতন্ত্র মঞ্চ ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় মানববন্ধন করবে। এ দিন ঢাকায় বেলা সাড়ে ১১টায় কাওরানবাজারে মানবাধিকার কমিশনের সামনে কর্মসূচি পালন করবে ছয় দলীয় এই জোট।
জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি বছরের মানবাধিকার দিবস বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়েছে। মানবাধিকারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে মানুষের ভোটের অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু সরকার এটার বিরুদ্ধে পুরোপুরি অবস্থান নিয়ে পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাই মানবাধিকার দিবসে আমরা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি মানুষের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকারসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম-খুন, গ্রেফতার, গায়েবি-ফরমায়েশি মামলায় জেলে দেয়ার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও তুলে ধরব। এসবের মধ্য দিয়ে সরকার যে শেষ রক্ষা করতে চায় সে বিষয়টি দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরা হবে। একতরফা নির্বাচন ঘিরে আমরা এর মধ্য দিয়ে জনমতকে সংগঠিত করার চেষ্টা করব।
তিনি আরো বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চাই। সেটা হলে পরবর্তীকালে সাময়িকভাবে গণমিছিল, সমাবেশের মতো কর্মসূচি আসতে পারে। তবে সরকার যদি আবারো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করে, কর্মসূচিকে ঘিরে সহিংসতা চালানোর চেষ্টা করে, তাহলে হরতাল-অবরোধ বা এ ধরনের কর্মসূচি আমাদের বিবেচনার মধ্যে থাকবে।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় দলের মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং তফসিল বাতিলের দাবিতে দশম দফায় ২০ দিন অবরোধ এবং তিন দফায় চার দিন হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে। সর্বশেষ দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি, যা গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টায় শেষ হয়।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় একদফার আন্দোলন জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আগামী ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর দিন থেকে ৭ জানুয়ারি ভোটের মধ্যবর্তী সময়কে দাবি আদায়ের ‘মোক্ষম সময়’ বিবেচনা করে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে দলটি। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তারিখে ভোট ঠেকানোই তাদের মূল লক্ষ্য। এ জন্য আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে নির্বাচন বয়কট করা সব দলকে এক মঞ্চে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি।
জানা গেছে, নির্বাচন ঘিরে আন্দোলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এক মাসের অধিক সময় ধরে চলা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতে সাময়িক বিরতি দিতে চায় বিএনপি। এজন্য গত ২৪ নভেম্বর থেকে হরতাল-অবরোধের ফাঁকে ফাঁকে ঢাকায় পেশাজীবী এবং কারাবন্দী ও গুম-খুন পরিবারের ব্যানারে একাধিক কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ। এসব কর্মসূচিতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান অংশগ্রহণ করেন। এবার দলের ব্যানারে আগামীকাল রোববার দেশব্যাপী মানববন্ধন করবে বিএনপি।
বিএনপি ও যুগপতের শরিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মানববন্ধনের কর্মসূচি নির্বিঘে্ণ পালিত হলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের বিকল্প কর্মসূচি আসতে পারে। এক্ষেত্রে ঢাকাসহ সারা দেশে গণমিছিল, সমাবেশের কর্মসূচি বিবেচনায় রয়েছে তাদের। এছাড়া আগামী ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বর দু’টি জাতীয় দিবসও পালন করা হবে। বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস পালনের বিষয়টি চিঠি দিয়ে গত বৃহস্পতিবার পুলিশকে অবহিত করেছে বিএনপি। আর মানববন্ধনের কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করা হলে ফের হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি আসতে পারে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।