বন্যার পানিতে সিলেট-সুনামগঞ্জে মানুষ যখন ডুবে যাচ্ছে, তখন সরকার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে ব্যস্ত আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার রাজধানীতে ঢাকা মহানগর বিএনপির ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সুনামগঞ্জ থেকে শুরু করে উত্তরে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম সমস্ত অঞ্চল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। ফারাক্কার বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে, যার কারণে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা সবগুলো নদীর পানি বাড়তে থাকবে।
‘এ দেশের মানুষকে ভাসিয়ে দেবে। বহুদিনের কষ্টে অর্জিত ফসলকে নষ্ট করবে, গবাদিপশুকে নষ্ট করবে, সমস্ত ঘরবাড়ি নষ্ট করবে। এই দুর্যোগের সময়, জনগণের কষ্টের সময় সরকার ব্যস্ত হয়ে আছে উৎসব নিয়ে।’ তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জন্য তারা (সরকার) এত ব্যস্ত যে মানুষের দিকে তাকানোর কোনো সময় নেই, মানুষের কষ্টের দিকে তাদের তাকানোর সময় নেই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বন্যা যাতে না আসতে পারে, আর বন্যায় যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু এই সরকার গত এক যুগে ভারতের সঙ্গে যেসব অভিন্ন নদী রয়েছে তার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি করতে সক্ষম হয়নি। আমাদের বহুদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি চুক্তির মলা দেখানো হচ্ছে। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত করা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘ফারাক্কার পানি, হঠাৎ করে যখন ভারত গেট খুলে দেয় তখন অনেক ঢল ঠেকানো সম্ভব হয় না। লালমনিরহাট-সুনামগঞ্জে একই ঘটনা ঘটছে। সম্পূর্ণভাবে এই সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এবং তার যে জনগণের প্রতি অবহেলা সেটা প্রমাণিত। জনগণের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হোক। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বন্যাদুর্গত এলাকায় যেসব বাঁধ এবং সেতু নির্মাণ করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে, এতে এত দুর্নীতি হয়েছে যে সমস্ত বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে, রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে; এই হচ্ছে অবস্থা।’
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে নতুন একটি গান শুরু হয়েছে, গানটা কী; পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে, সেখানে নাকি বড় একটি দুর্ঘটনা, নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। তাহলে এই দুর্ঘটনার আশঙ্কাটা কী, এটা জনগণের কাছে প্রকাশ করুন। নিজেরা দুর্ঘটনা ঘটার পরে তা বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেন।’
চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেই কনটেইনারের মালিক হচ্ছে আমেরিকার নেতা। তাকে গ্রেপ্তার না করে যারা শ্রমিকের কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জনগণ এখন আপনাদের প্রকৃত পরিচয় পেয়ে গেছে। ‘দ্রব্যমূল্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা এক বছরে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ যারা চুরি করেছে, লুট করছে, তারা টাকা সুইস ব্যাংকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কানাডায় বেগমপাড়া তৈরি করেছেন, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম তৈরি করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশে কোনো জবাবদিহিতা নেই। তাই চরমভাবে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে তারা দুর্নীতি করছে। জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয় না, তাই তারা যা খুশি তাই করছে।’ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। তারা সব সময় নিজেদের লোকদের জিতিয়ে আনার জন্য রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, ইলেকশন কমিশনকে ব্যবহার করে।
‘আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন না হয়, তাহলে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, আপনাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই, আপনারা পদত্যাগ করুন। একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।’
ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় এ সময় দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।