সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে আছে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট।আপাতত জনসম্পৃক্ত ইস্যুসহ দশ দফা দাবিতে চলমান এই আন্দোলন আরও এগিয়ে নিতে চায় বিএনপি।
যাকে নেতারা আন্দোলনের রুটিন কর্মসূচি বলছেন। এরপর ‘অলআউট’ কর্মসূচিতে যাবেন। এজন্য রোজার ঈদ ও কুরবানি ঈদের মাঝামাঝি সময় মে-জুনকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। এই সময়ে ঢাকা অভিমুখে রোডমার্চ, লংমার্চের মতো কঠোর কর্মসূচি দিয়ে সফলতা ঘরে আনতে চায়। এজন্য চার মাসব্যাপী কর্মসূচির রোডম্যাপ করা হয়েছে। যা এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাতে রয়েছে।
এদিকে কঠোর কর্মসূচির আগে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটের সঙ্গে আরও বোঝাপড়া করতে চায় বিএনপি। এজন্য অভিন্ন দাবিতে সাত দফার একটি যৌথ ঘোষণাপত্রের খসড়া তৈরি করেছে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ। বিএনপির ১০ দফা দাবি ও ২৭ দফা রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখার সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফার সমন্বয়ে নতুন এই ঘোষণাপত্র। এ নিয়ে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা দল, এলডিপি, জামায়াতে ইসলামী, গণফোরাম (মন্টু)সহ যুপপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য দল ও জোটের সঙ্গে বসবে বিএনপি। এরপর তা স্থায়ী কমিটিতে চূড়ান্ত করে চলতি মাসেই এই যৌথ ঘোষণাপত্র সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানোর কথা রয়েছে। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘কর্মসূচি চলছে। আরও কর্মসূচি আসবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের দুর্ভোগ মোচন এবং দেশ ও দেশের জনগণকে দুর্নীতি, অনাচার, লুট ও ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে বিএনপি। একই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক কারণে আটক নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে এ আন্দোলন। যা ক্রমান্বয়ে বেগবান হয়ে অবৈধ সরকারকে পদত্যাগে ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য করবে। মানুষ প্রস্তুত হয়ে গেছে। আন্দোলনের সফলতা সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলা-বাধার পরও নেতাকর্মীরা মাঠ ছেড়ে যাননি। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে নেতাকর্মীরা বেশি ঝুঁকি নিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। অনেক বেশি সাধারণ মানুষ অংশ নিচ্ছেন। নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের এ ধরনের সাহসিকতা বড় আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণে নীতিনির্ধারকদের উদ্বুদ্ধ করছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এ বছরের শেষের দিকে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। মূলত বিরোধীদের আন্দোলন দমাতে এই কৌশল নেওয়া হচ্ছে। তাই আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও দাবি আদায়ে আর সময় নিতে চায় না। আন্দোলনের মাধ্যমে মে-জুনেই এর একটি সুরাহা হবে।
জানা গেছে, মহানগরের পর উপজেলা, থানা এবং পৌরসভায় কর্মসূচি দেওয়া হবে। এরপর আবার জেলায় জেলায় কর্মসূচি শেষ করে মহানগরে কর্মসূচি পালন করা হবে। এভাবে কর্মসূচির সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে চূড়ান্ত আন্দোলনের পথে হাঁটতে চায় বিএনপি। পরে মে-জুনে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। এ নিয়ে সোমবার স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকেও আলোচনা হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরের পদযাত্রা কর্মসূচি ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা। বিশেষ করে মহানগরের নেতারা বিভেদ ভুলে পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। যা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। এখন থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নানা কর্মকৌশল নিয়েও আলোচনা করেন নেতারা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।