আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘ফ্যাসিবাদী দুঃসময়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণসংগ্রাম জোরদার করুন’ স্লোগান নিয়ে নতুন রাজনৈতিক জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

আজ সোমবার (৮ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১২টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে নতুন এ জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

সাতটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত এ গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলো হলো- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডির) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে মঞ্চের আত্মপ্রকাশের এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরীয়া, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।

আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নাগরির ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, রাষ্ট্রক্ষমতা এখানে দ্রুত অর্থবিত্ত গড়ে তোলার বাহনে পরিণত হয়েছে। আয় ও সম্পদের বৈষম্যের কারণে সমাজে ধনী-গরিবের সীমাহীন বৈষম্য তৈরি হয়েছে। গত কয়েক দশকে এখানকার শাসকগোষ্ঠী ও সরকারগুলোর ধারাবাহিক ব্যর্থতা, চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট ও চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আমাদের সম্ভাবনাময় দেশ এবং জনগোষ্ঠী চরম দুর্দশা ও বিপদে নিমজ্জিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ৫০ বছর পার করলেও এখনো পর্যন্ত দেশে কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি হয়নি বলে উল্লেখ করে মান্না বলেন, এমনকি শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো গণতান্ত্রিক পথ পর্যন্ত আর অবশিষ্ট নাই। ব্রিটিশ উপনৈবেশিক শাসন ও পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান পর্বের একব্যক্তি কেন্দ্রিক স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাংলাদেশেও বহাল থেকেছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার নিজেদের দুর্নীতি, লুটপাট আর সীমাহীন ব্যর্থতার দায় চাপাচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপর। অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ও গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির দাম, বাড়ি-ভাড়া, পরিবহন-ভাড়ার চাপে কোটি কোটি মানুষ দিশেহারা। দেশের মানুষের এক বড় অংশের খাদ্যগ্রহণ কমে গেছে। নতুন করে মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো হাজির হয়েছে লোডশেডিং আর বিদ্যুৎ বিভ্রাট। তার ওপর সরকার চোরাগুপ্তা কায়দায় মধ্যরাতে ডিজেল কেরোসিনসহ জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করেছে।

জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও কল্যাণকামী ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষে ৭টি রাজনৈতিক দল ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি করেন মান্না।

গণতন্ত্র মঞ্চের লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে মান্না বলেন, আমাদের লক্ষ্যগুলো হচ্ছে- বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো অবকাশ নেই। সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচন নয় বরং তারা আরও একটি একতরফা তামাশার নির্বাচনের ছক তৈরি করছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে। এই অবস্থায় জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এবং অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে এবং একটি রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

তিনি আরও জানান, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হবে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এই লক্ষ্যে তারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করবে, প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক রদবদল করবে। একজন নাগরিকের নির্বাচিত করার ও নির্বাচিত হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে দল নিবন্ধন আইন, নির্বাচন আইন ও বিধিমালার যথাযথ সংস্কার করবে এবং ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালটবাক্সে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।

মান্না বলেন, এক ব্যক্তির হাতে জবাবদিহিহীনভাবে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার ব্যবস্থার বদলে রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ যথা সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা। সরকারের জবাবদিহিতার কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ন্যায়পাল ও সাংবিধানিক আদালত প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠনের আইন প্রণয়ন।

তিনি আরও বলেন, সংসদ সদস্যদের মতামত দেওয়ার অধিকার খর্বকারী বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার করে সরকার গঠনে আস্থাভোট ও বাজেট পাস ছাড়া সব বিলে স্বাধীন মতামত ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার নিশ্চিত করা। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা গণতন্ত্র মঞ্চের লক্ষ্য বলে উল্লেখ মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ ব্যক্তির মতপ্রকাশ, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপন্থি উপনিবেশিক ও নিবর্তনমূলক সব আইন বাতিল করা।

‘বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাবে না’ এই নীতির ওপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্যখাতে রাষ্ট্রীয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা লক্ষ্য রয়েছে বলে জানিয়ে মান্না বলেন, বেসরকারি খাতে মুনাফার লাগাম টেনে ধরার মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার।

উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের সব কাজ এবং নাগরিক সেবা পেতে ঝামেলামুক্ত ‘একটেবিল নীতি’ বা ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ কার্যকর করা হবে জানিয়ে মান্না বলেন, বিদ্যুৎ খাতসহ সর্বত্র দুর্নীতি বন্ধ, কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, পাটকলসহ সব বন্ধ কলকারখানা চালু, সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বাসা ভাড়ার যৌক্তিক সীমা নির্ধারণ।

এসব ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে জনগণের রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলে দেশে এক নতুন সংগ্রামের সূচনা করতে চান বলেও মন্তব্য করেন মাহমুদুর রহমান মান্না।