বর্তমান সরকারকে আর সুযোগ দিতে চায় না বিএনপি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামতে চায় দলটি। তাই আন্দোলনের ‘কর্মকৌশল’ ঠিক করছে বিএনপি। এজন্য মতামত নিতে শুক্রবার সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে দলটির হাইকমান্ড। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
 
 
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই প্রথম বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্বের ধারাবাহিক বৈঠক শুরু হয়েছে। ঈদুল ফিতর পর্যন্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ভাইস-চেয়ারম্যান ও সম্পাদকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক হবে। শুক্রবার বিকালে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ চেয়ারপারসনের ১৩ উপদেষ্টা অংশ নেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতারা জানান, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নামে আলেম-ওলামা এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের যেভাবে দমন-পীড়ন, হয়রানি ও গ্রেফতার করছে সে সবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
এ নিয়ে দলের সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করার পক্ষে কেউ কেউ মত দেন। অধিকাংশ নেতা বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সর্বাত্মক আন্দোলনের বিকল্প নেই। এ জন্য ডান-বাম সবাইকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু সেই ঐক্যে এমন কাউকে রাখা যাবে না যিনি জিয়াউর রহমানের নাম উচ্চারণ করতে চান না। একটি বিশেষ দলের প্রতি যার দুর্বলতা আছে তাকে নিয়ে ঐক্য গড়লে সেই ঐক্য স্থায়িত্ব লাভ করবে না। তবে তারেক রহমানসহ বেশিরভাগ নেতা ঐক্যের জায়গায় ডান-বাম সবাইকে নিয়ে করার পক্ষে মত দেন।

দলের চেয়ে দেশের স্বার্থকে তারা বেশি প্রাধান্য দিতে চান। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেই বড় ধরনের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার পরামর্শ দেন উপদেষ্টারা। এছাড়া কয়েকজন উপদেষ্টার বক্তব্যে উঠে আসে- বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল ও শক্তিশালী করতে হবে। বৈঠকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা হয়। তার সুস্বাস্থ্য কামনার পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য বিশেষ দোয়া করতে বলা হয়।
 
বিএনপির দপ্তরের চলতি দায়িত্বে থাকা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি, করোনা মহামারির অবস্থা নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে ধারাবাহিক ভার্চুয়াল বৈঠক হচ্ছে। প্রতিদিন ১৪-১৫ জন সিনিয়র নেতা এ বৈঠকে থাকবেন।
 
সূত্র জানায়, প্রথম বৈঠক শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টায় শুরু হয়ে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলে। এতে ১৫ জন উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ১৩ জন অংশ নেন। আজ বেলা সাড়ে ৩টায় বৈঠক শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বৈঠকের সময়সূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রতিটি বৈঠকেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভাপতিত্ব করবেন। থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও স্থায়ী কমিটির এক বা একাধিক সদস্য।
 
জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব যুগান্তরকে বলেন, সবার সঙ্গে এখন যে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু হয়েছে তা অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। এতে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। আমরাও আমাদের মতামত দেব। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর যুগান্তরকে বলেন, আমাকে গুলশান কার্যালয় থেকে ফোন করে জানানো হয়েছে ৩০ এপ্রিল ভার্চুয়ালি বৈঠক রয়েছে। আইডি ও পাসওয়ার্ড যথাসময়ে পাঠানো হবে। তবে বৈঠকের এজেন্ডা সম্পর্কে তিনি জানেন না।
 
শুক্রবারের বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা উকিল আব্দুস সাত্তার এমপি, আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, মশিউর রহমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবেদিন ফারুক, মনিরুল হক চৌধুরী, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, ফজলুল হক আসপিয়া, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, আবদুল কাইয়ুম, এসএম জহিরুল ইসলাম, ইসমাইল জবিউল্লাহ অংশ নেন। বৈঠক সঞ্চালনা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
 
বৈঠকে অংশ নেওয়া সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি বলেন, দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি, সাংগঠনিক অবস্থা ও করোনা মহামারি নিয়ে দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা যুগান্তরকে বলেন, চলমান হেফাজত ইস্যু নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। সরকার হেফাজতের নামে যে আলেম-ওলামাদের গ্রেফতার হয়রানি করছে তার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। একইসঙ্গে হেফাজত ইস্যুতে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সরকারের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার ভূমিকা পালনেরও পরামর্শ দেন কেউ কেউ। আরেক উপদেষ্টা জানান, করোনাসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশেও বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। দল গোছানোর জন্য বিএনপির হাইকমান্ডের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে তৃণমূল বিএনপিকে শক্তিশালী করতে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।