ঢাকার শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের আলোচিত ৫ মে’র ঘটনার এক সপ্তাহ আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন মহাসচিব ও বর্তমান আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
 
৫ দিনের রিমান্ড শেষে সোমবার (১৯ এপ্রিল) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও হেফাজতের তৎকালীন ঢাকা মহানগর কমিটির প্রচার সম্পাদক মুফতি ফখরুল ইসলাম।
 
এর আগে গত ১৪ এপ্রিল লালবাগ এলাকা থেকে মুফতি ফখরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রিমান্ড শেষে সোমবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
 
জবানবন্দিতে মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে’র সেই ঘটনায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াতের একাধিক শীর্ষ নেতা অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন। এতে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরাও।
 
 
৫ মে’র ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে আমি কারাঙ্গীরচর মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও এলাকার ৮-১০ হাজার হেফাজত কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে লালবাগ-চকবাজার হয়ে নয়াবাজারে আসি। জোহরের নামাজ পর্যন্ত আমরা ৮-১০ হাজার লোকসহ এখানেই ছিলাম। জোহরের নামাজ আদায়ের পর দুপুর ২টার দিকে হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ সাহেব ফোন দিয়ে সবাইকে নিয়ে শাপলা চত্বরে যাওয়ার জন্য বলে।’
 
জবানবন্দিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, শাপলা চত্বরে যাওয়ার সময় গোলাপশাহ মাজারের (গুলিস্থান) সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুপুর ৩টার দিকে তার নেতৃত্বে ৫-৭ হাজার শাপলা চত্বরে পৌঁছান। শাপলা চত্বরে গিয়ে তিনি মাওলানা আব্দুল্লাহ রব ইউসুফি, জুনায়েদ আল হাবিব, মামুনুল হক, মাওলানা জাফর উল্লাহ, আবুল হাসনাতমহ অনেককেই দেখতে পান। এর মধ্যে ৪৩ জনের নাম জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন তিনি। মামুনুল হকসহ অন্যান্য হেফাজত নেতারা তাদের ১৩ দফা দাবি আদায় না করতে পারলে সরকার পতনের আন্দোলন করা হবে বলে তাকে জানিয়েছিলেন।
 
 
তিনি আরও বলেন, ‘মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী তাকে বলেছেন, আন্দোলনের বিষয়ে দু’জন বিএনপি নেতা ও এক জামায়াত নেতা তাদের অর্থ সহযোগিতা করছে। এছাড়া ২৮ এপ্রিল (২০১৩) বাবুনগরীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক হয়। বৈঠকে হেফাজতের প্রোগ্রাম শাপলা চত্বরে স্থায়ী হলে বিএনপি ও জামায়াতও যোগ দেবে বলে আলোচনা হয়।’
 
২০১৩ সালের ৫ মে’র একদিন আগে ঢাকায় এক সমাবেশ থেকে হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়ে নেতাকর্মীদের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া। কিন্তু দলের একটি অংশ দ্বিমত পোষণ করায় সাংগঠনিকভাবে হেফাজতের অবরোধে অংশ নিতে পারেনি বিএনপি। বিচ্ছিন্নভাবে বিএনপি নেতাকর্মীরা হেফাজতের আন্দোলনে অংশ নেয়।
 
মুফতি ফখরুল জানান, তিনি কামরাঙ্গীরচর জামিয়া নূরীয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। হেফাজতে ইসলামের বর্তমান কমিটির আগের কমিটির ঢাকা মহানগরীর প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও মারকাজুল আজিজ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত।