কলম কথা ডেস্কঃ
আসমান, জমিন, গ্রহ, নক্ষত্র সবই মহান আল্লাহর সৃষ্টি। প্রতিটি জিনিসকেই তিনি সৃষ্টি করেছেন অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিতেই রয়েছে নিপুণ শৈল্পিকতার ছোঁয়া। তাঁর অণু থেকে অণু পরিমাণ সৃষ্টিতেও রয়েছে সূক্ষ্ম শিল্পের ছাপ।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর আপনি পর্বতমালা দেখছেন, মনে করছেন, সেটা আচল, অথচ ওগুলো হবে মেঘপুঞ্জের ন্যায় চলমান। এটা আল্লাহরই সৃষ্টি-নৈপুণ্য, যিনি সব কিছুকেই করেছেন সুষম।’ (সুরা নামল, আয়াত : ৮৮)
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে ভালোবাসেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬৬)
আল্লাহ যেমন সুন্দর সৃষ্টি করেছেন, তেমনি তাঁর বান্দাদের সুন্দর-অসুন্দর যাচাই করার মতো জ্ঞান-বুদ্ধিও দিয়েছেন। তাঁর সৃষ্টিতেই রেখে দিয়েছেন সুন্দর ও নিখুঁত বিষয়কে যাচাই করার মানদণ্ড। তেমনই একটি চমৎকার মানদণ্ড হলো, গোল্ডেন রেশিও। যাকে বাংলা ভাষায় সোনালি অনুপাত বলা হয়। এটি মূলত একটি গাণিতিক সূত্র, গণিতের ভাষায় একে ‘ফাই’ (phi)-ও বলা হয়।
এই পৃথিবী, গ্রহ, নক্ষত্র এবং বিশ্ব—সব কিছুই আবর্তিত হয় এক সুশৃঙ্খল নিয়মের মধ্য দিয়ে। আর সব সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে নিখুঁত সামঞ্জস্যতা, যা মহান আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সৃজন করেছেন উত্তমরূপে।’ (সুরা : সাজদাহ, আয়াত : ৭)
অর্থাৎ মহান আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টিই অবকাঠামোগতভাবে নিখুঁত।
এটি সুন্দরভাবে অনুধাবন করার জন্য একটি গাণিতিক সূত্র প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই বিশ্বের প্রতিটি বস্তুর নিখুঁত অবকাঠামোগত মান হচ্ছে ১.৬১৮, যাকে গোল্ডেন রেশিও বলা হয়। পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত গণিতবিদ গোল্ডেন রেশিওর এই স্বর্গীয় মান নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁরা এর প্রায়োগিক ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছেন। বিভিন্ন গবেষকের মতে, গাছপালা, ফল-ফুল, বিভিন্ন প্রাণী, মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, এমনকি ঊর্ধ্ব জগতের বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি (ছায়াপথ)-এর বাহুগুলোর মধ্যেও ‘গোল্ডেন রেশিও’ বা সোনালি অনুপাত রক্ষা করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ।
আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ সৃষ্টির ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে স্থিতিশীল করেছেন এবং আসমানকে করেছেন ছাদ এবং তিনি তোমাদের আকৃতি দিয়েছেন অতঃপর তোমাদের আকৃতিকে করেছেন সুন্দর।’ (সুরা : গাফির, আয়াত : ৬৪)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই আমরা সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে।’ (সুরা ত্বিন, আয়াত : ৪)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ মানুষকে গঠনগত দিক থেকে নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করেছেন। তাদের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই সাজিয়েছেন নির্ভুলভাবে। স্বভাবগতভাবে একজন শিল্পী এই আয়াতগুলো পড়ার পর চিন্তা করবে, আচ্ছা, মহান আল্লাহ যাদের সৃষ্টির সেরা বলে সম্মানিত করেছেন, সে মানব জাতিকে তৈরি করার ক্ষেত্রে কি সোনালি অনুপাতের উপস্থিতি রেখেছেন? এর উত্তর হলো, হ্যাঁ। মহান আল্লাহ মানবজাতিকে এত নিখুঁত করে সৃষ্টি করেছেন যে তাদের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও গোল্ডেন রেশিওর উপস্থিতি পাওয়া যায়।
যেমন—মানুষের দেহের সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য নাভির নিচ থেকে বাকি অংশের দৈর্ঘ্যের অনুপাত ১.৬১৮, অর্থাৎ গোল্ডেন রেশিও। আবার কাঁধ থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং হাঁটু থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত দূরত্বের অনুপাতও গোল্ডেন রেশিও। আমাদের আঙুলের অগ্রভাগ থেকে কনুইয়ের দৈর্ঘ্য এবং কবজি থেকে কনুইয়ের দৈর্ঘ্যের অনুপাতও একই।
শুধু কি তাই? মানুষের সৌন্দর্যের মূল কেন্দ্র হলো তার মুখমণ্ডল। মানুষের মুখমণ্ডলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাতেও মিলবে গোল্ডেন রেশিও। গবেষকরা বলেছেন, মুখমণ্ডলের বিভিন্ন অংশের অনুপাত গোল্ডেন রেশিওর যত কাছাকাছি হবে সেই চেহারাকেই আমরা তত আকর্ষণীয় মনে করে থাকি। কারণ গোল্ডেন রেশিও মেনে চলা যেকোনো কিছুর প্রতি মানব মনের চিরায়ত দুর্বলতা আছে। তা ছাড়া মানুষের চেহারায় গোল্ডেন রেক্টেংগেল ও গোল্ডেন স্পাইরাল খাপে খাপে বসে যায়।
আমাদের ডিএনএর গঠনও গোল্ডেন রেশিও মেনে চলে। গোল্ডেন নাম্বার.নেট থেকে জানা যায় ডিএনএ-এর প্রত্যেক পূর্ণ চক্রের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১.৬১৮। কানের ভেতর ককলিয়া নামের যে অংশটি আছে সেটাও গোল্ডেন স্পাইরালের সঙ্গে মিলে যায়। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টিই যেন মানবজাতিকে ডেকে বলেন, ‘অতএব (হে জিন ও মানুষ) তোমরা তোমাদের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?’ (সুরা : আর-রহমান, আয়াত : ১৩)
মহান আল্লাহ আমাদের শুভবুদ্ধি ও হিদায়াত দান করুন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।