নামাজের মাঝে কাতার সোজা করার গুরুত্ব অনেক বেশি। বিভিন্ন হাদিসে এর গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। নামাজের মাঝে কাতার সোজা করার অর্থ হচ্ছে, সব মুসল্লি একজন আরেকজনের বরাবরই দাঁড়াবে, কেউ কারো থেকে আগ-পিছ হবে না। দুই মুসল্লির মাঝে কোনো খালি জায়গা থাকবে না।
দুজনের মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকবে না। কাঁধ বরাবর কাঁধ ও পায়ের গোড়ালি সমান রেখে নামাজে দাঁড়াবে।
কাতারের প্রভাব সমাজে
কাতার সোজা করার প্রভাব সমাজে ফুটে ওঠে। সুন্দর সমাজ গঠন করার ক্ষেত্রে এর অসামান্য অবদান রয়েছে। যে সমাজ নামাজের কাতারের প্রতি বেশি যত্নবান হবে সে সমাজ তত সুন্দর ও সুসংহত থাকবে। নোমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের (নামাজের) কাতারগুলো সোজা করে দিতেন, মনে হতো তিনি যেন কামানের কাঠ সোজা করছেন। যতক্ষণ না বুঝতে পারতেন যে আমরা তার থেকে পুরোপুরি বিষয়টি বুঝতে পেরেছি। অতঃপর তিনি স্বস্থানে দাঁড়িয়ে তাকবিরে তাহরিমা বলতে যাবেন, এমন সময় দেখলেন এক ব্যক্তি কাতার থেকে সামনে এগিয়ে আছে, তখন তিনি বলেন, আল্লাহর বান্দাগণ তোমাদের লাইন সোজা কোরো, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করে দেবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৮৬৫)
কাতারের মাঝে শয়তানের অনুপ্রবেশ
যারা কাতারের মাঝখানে ফাঁকা রেখে নামাজ আদায় করে তাদের শয়তান খুব সহজেই ধোঁকা দিতে সক্ষম হয়। কারণ শয়তান এই ফাঁকা জায়গায় অবস্থান করে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা কাতারে পরস্পর মিশে দাঁড়াও। কাতারসমূহকে পরস্পর নিকটবর্তী রাখো এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও। যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তাঁর শপথ! আমি শয়তানকে দেখছি ছোট ছোট বকরির মতো কাতারের মধ্যে প্রবেশ করছে। (নাসায়ি, হাদিস : ৮১৫)
যেভাবে কাতার সোজা করবেন
এক. ইমাম সাহেব মুসল্লিদের উদ্দেশে ঘোষণা করবেন কাতার সোজা করার জন্য। এবং কাতার পূর্ণরূপে সোজা হওয়ার আগ পর্যন্ত নামাজ আরম্ভ করবেন না। হাদিসে এসেছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, নামাজের ইকামত হচ্ছে, এমন সময় আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের দিকে মুখ করে তাকালেন এবং বলেন, তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নাও আর মিলে দাঁড়াও। কেননা, আমি আমার পেছনে তোমাদের দেখতে পাই। ’ (বুখারি, হাদিস : ৭১৯)
দুই. যারা চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করে যদি দাঁড়াতে সক্ষম হয় সে ক্ষেত্রে চেয়ারকে পেছনে রেখে কাতার বরাবর দাঁড়াবে। যখন সেজদায় যাবে তখন চেয়ারে বসে যাবে। আর যদি শুরু থেকেই চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করে তাহলে চেয়ার কাতার বরাবর করে দাঁড়াবে।
তিন. মাঝখানে কোনো খালি জায়গা রাখবে না। পায়ের গোড়ালি সমান করে এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাতার সোজা করবে।
কাতার সোজা করার রহস্য
১. ফেরেশতাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা। কারণ নামাজ আদায়ের সময় ফেরেশতাগণও এভাবে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। জাবের ইবনে সামুরাহ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ফেরেশতাগণ যেরূপ তাদের প্রতিপালকের কাছে কাতারবদ্ধ হয়ে থাকে তোমরা কি সেরূপ কাতারবদ্ধ হবে না? আমরা বললাম, ফেরেশতাগণ তাদের প্রতিপালকের কাছে কিরূপে কাতারবদ্ধ হয়? তিনি বলেন, সর্বাগ্রে তারা প্রথম কাতার পূর্ণ করে, তারপর পর্যায়ক্রমে পরবর্তী কাতারগুলো এবং তারা কাতারে পরস্পর মিলে মিলে দাঁড়ায়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৬৬১)
২. আল্লাহ তাআলার হুকুম আদায়ের গুরুত্ব ফুটে ওঠে এভাবে দাঁড়ানোর মাধ্যমে।
৩. কাতার সোজা করা মুসলমানদের একে অপরের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় ও মজবুত করে দেয়।
নামাজের মাঝে ছোট-বড় যত করণীয় রয়েছে কোনোটাই অযথা দেওয়া হয়নি। পায়ের আঙুল মিলিয়ে রাখা এবং পৃথক রাখা, নামাজের মাঝে দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার জায়গায় স্থির রাখা, রুকু অবস্থায় পায়ের ওপর এবং সেজদা অবস্থায় নাকের ওপর রাখা; সবই হচ্ছে নামাজের মাঝে খুশুখুজু পূর্ণরূপে আসার জন্য।
আর যখন কোনো ব্যক্তি যখন নামাজের যাবতীয় হুকুম-আহকাম যত্ন সহকারে আদায় করবে, তখনই তার নামাজ আল্লাহর দরবারে কবুল হবে; যে নামাজ দুশ্চিন্তা, বিরক্তি, শয়তানি কুমন্ত্রণা ও প্ররোচনা থেকে আপনাকে নিয়ে যাবে স্রষ্টার প্রেমের বাগানে আর সৌভাগ্যের শীর্ষদেশে। আর তখনই উভয় জাহানের সফলতা আমাদের পদচুম্বন করবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।