পাপাচার সমাজে অন্ধকার নামিয়ে আনে। এর প্রচার-প্রসার মানুষের ঈমানে আঘাত হানে। মানুষের লজ্জাশীলতা কমিয়ে দেয়। ইসলামে সব ধরনের অশ্লীলতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, আমার পালনকর্তা হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা, আর পাপ ও অসংগত বিরোধিতা এবং কোনো কিছুকে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, যার কোনো সনদ তিনি পাঠাননি। আর আল্লাহ সম্পর্কে এমন কিছু বলা, যা তোমরা জানো না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩৩)
পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কয়েকটি নিকৃষ্ট বিষয় থেকে দূরে থাকার আদেশ করেছেন। তার মধ্যে অশ্লীলতা অন্যতম। মহান আল্লাহ অশ্লীলতা পছন্দ করেন না, তেমনি অশ্লীলতা ছড়ানোও পছন্দ করেন না। অশ্লীল কাজ সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া জঘন্য অপরাধ। কারো গোপনীয় চরিত্র বা স্থিরচিত্র প্রকাশ করাও জঘন্যতম অশ্লীল কাজ।
ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার পছন্দ করে, তাদের জন্য ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ১৯) নাউজুবিল্লাহ! মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অন্যের অশ্লীল কাজকর্ম প্রচার করে বেড়ায়, আবার কেউ নিজে অশ্লীল কাজ করে তা সমাজে ছড়িয়ে দিতে চায়। এটি অশ্লীলতা ছড়ানোর সবচেয়ে নিকৃষ্ট পদ্ধতি। কেউ ব্যক্তি পর্যায়ে বন্ধুদের কাছে তা বলে বেড়ায়, কেউ আবার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে গোটা পৃথিবীতে তার পাপের শোডাউন করে।
অশ্লীল কাজ করে তা প্রচার করে বেড়ানো এতটা জঘন্য যে রাসুল (সা.) তাকে ক্ষমার অযোগ্য বলে ঘোষনা দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমার সব উম্মতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ছাড়া। আর নিশ্চয়ই এটা বড় অন্যায় যে কোনো ব্যক্তি রাতের বেলা অপরাধ করল, যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক, আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি।
অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার ওপর আল্লাহর দেওয়া আবরণ খুলে ফেলল।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৯) ইবনে হাজর (রহ.)-এর মতে (মুজাহির), ‘প্রকাশকারী’ মানে হলো, যারা নিজের গুনাহ মানুষের কাছে প্রচার করে বেড়ায়। যেগুলো আল্লাহ গোপন করে রেখেছিলেন। (ফাতহুল বারি) মানুষের মধ্যে অশ্লীলতায় লিপ্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া, সমাজে অশ্লীলতা ছড়ানো কিয়ামতের আলামত। রাসুল (সা.) এ বিষয়ে তাঁর প্রিয় উম্মতকে সতর্ক করেছেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন যে কিয়ামতের পূর্বক্ষণে নগ্নতা ও অশ্লীলতার ব্যাপক প্রচার ঘটবে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই এসব কিয়ামতের আলামত যে একসময় কৃপণতা ও অশ্লীলতা প্রকাশ পাবে। খিয়ানতকারীকে আমানতদার মনে করা হবে। আমানতদারকে খিয়ানতকারী মনে করা হবে। নারীদের নতুন নতুন পোশাকের উদ্ভব ঘটবে, যেগুলো পরিধান করে নারীরা বস্ত্রাবৃত হয়েও নগ্ন থাকবে।
নিকৃষ্ট লোকেরা অভিজাত লোকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে।’ (তাবরানি আওসাত, হাদিস : ৭৪৮৯) তাই প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব, সর্বাবস্থায় নিজেকে অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা। নিজেদের চালচলন, পোশাক সব কিছুকে অশ্লীলতামুক্ত রাখা। মহান আল্লাহ সবাইকে এ ধরনের পাপ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।