পবিত্র কুরআনের ১০৮ তম সুরা হল সুরা কাওসার। মক্কায় নাজিল হওয়া এ সুরার মোট বাক্য বা আয়াত সংখ্যা তিন।
এই সূরায় কাফিরদের বিদ্রূপের উত্তর, রাসূল (সা.)-কে সান্ত্বনা, ঈদের নামায ও কুরবানির আদেশ, মহানবীর শত্রুদের ধ্বংস হওয়া এবং কাফিরদের নিন্দা ইত্যাদি বর্ণনা রয়েছে।
নামাজ আদায়ের পাশাপাশি কুরবানির প্রতি গুরুত্ব দেয়ার মাধ্যমে দরিদ্রদের সাহায্য করার ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
আল্লামা ইবনে হাজর হাইসামী থেকে রাসূলের (সা.) একটি বাণীর কথা শোনা যায়। ওই বর্ণনা অনুযায়ী মহানবী (সা) হযরত আলীকে বলেছেন, ‘হে আলী! তুমি ও তোমার অনুসারীরা হাউজে কাওসারের পরিতৃপ্ত ও উজ্জ্বল চেহারাধারী হবে, আর তোমার শত্রুরা তৃষ্ণার্ত ও হলুদ চেহারাধারী হবে এবং সেখান থেকে বিতাড়িত হবে।’ (সাওয়ায়েকে মুহরিকা দ্রষ্টব্য)
কাওসারের অর্থ কল্যাণের প্রাচুর্য। মক্কার কাফিররা রাসুলের(সা.) পুত্রসন্তান না থাকার কারণে বিদ্রূপ করত এবং এতে তিনি মানসিক কষ্ট পেতেন। তাই তাদের বিদ্রূপের জবাব দিতে ও মহানবীকে সান্ত্বনা দিতে আল্লাহ এই সুরা নাজিল করেছেন। যার অর্থ এই যে, আমি তোমার বংশে অসাধারণ প্রাচুর্য বা বরকত দান করেছি।
সে কারণে বর্তমানে সম্ভবত এমন কোন স্থান নেই যেখানে তাঁর সন্তান অর্থাৎ সাইয়্যেদ নেই। আর বহু সুন্নি আলেমের বর্ণিত একটি হাদিস হল, মহানবী (সা) বলেছেন, আল্লাহ সকল নবীর বংশ তাঁদেরই ঔরসে রেখেছেন, আর আমার বংশ আলীর ঔরসে রেখেছেন।’ (শারহে মুসলিম, ত্বাহা হোসাইন)
নানা সাক্ষ্য-প্রমাণ ও মত অনুযায়ী নবী-রাসুলদের পর মানবজাতিকে সুপথ দেখানোর ঐশী দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছিল মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইতের ওপর যাঁরা ইমাম হিসেবে বিশ্ব-খ্যাত। সর্বশেষ নবী ও রাসুল হিসেবে হযরত মুহাম্মাদ (সা) অনেক যন্ত্রণা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আর এ জন্যই তিনি বলেছেন, কোনো নবীকেই আমার মত কষ্ট দেয়া হয়নি।
কিন্তু তিনি কখনও একত্ববাদের প্রচার ও এক খোদার ইবাদতের দিকে আহ্বান বন্ধ করেননি। তিনি মানুষকে উন্নত নৈতিক চরিত্র ও সৌভাগ্যের পথ দেখিয়ে বিশ্বে গভীর পরিবর্তন এনেছেন। অতীতের সব নবী-রাসুল বলেছেন যে, শেষ নবী ও রাসুলের যুগে ধর্ম পরিপূর্ণতা পাবে। আর এই ধর্ম তথা মহানবীর রেসালাত পরিপূর্ণতা পায় তাঁরই স্থলাভিষিক্ত হিসেবে হযরত আলীর ইমামত ঘোষণার মধ্য দিয়ে। মহানবী (সা) নিজেই ঈদে গাদিরের ঘটনায় এই ইমামতের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
‘কাওসার’ অর্থ ব্যাপক কল্যাণ ও বরকত। বেশিরভাগ মুফাসসিরের মতে এখানে কাওসার বলতে হযরত ফাতিমার (সা.আ) অস্তিত্বকে বোঝানো হয়েছে। অতি উন্নত নৈতিক গুণ ও ধার্মিকতার অধিকারী হযরত ফাতিমা ইসলামের বিকাশে কার্যকর ও প্রভাবশালী ভূমিকা রেখেছিলেন। মহানবীর (সা) বক্তব্য অনুযায়ী মহীয়সী নারী ফাতিমা দুই জাহানের নারীকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
কারো কারো মতে কাওসার অর্থ নবুওত। আবার কারো কারো মতে কাওসার মানে অনেক সঙ্গী ও সহযোগী। কারো কারো মতে কাওসার বলতে মহানবীর (সা) কন্যা ফাতিমার মাধ্যমে নবী বংশের ব্যাপক বিস্তারকে বোঝানো হয়েছে যারা ইসলামের মূল্যবোধগুলোকে রক্ষা করে খাঁটি ইসলামকে তুলে ধরেছেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে।
প্রখ্যাত সুন্নি মুফাস্সির ফাখরে রাজির মতে, সুরা কাওসারের তাৎপর্য হল মহানবীর বংশধর দীর্ঘকাল টিকে থাকবে। মহানবীর (সা) বংশধর ছাড়া আর কার বংশে ইমাম হাসান, ইমাম হুসাইন, ইমাম যাইনুল আবেদিন, ইমাম বাকির, ইমাম সাদিক ও ইমাম রেজার মত (তাঁদের সবার ওপর অশেষ দরুদ ও সালাম) এত বেশি সংখ্যক মহামানব সৃষ্টি হয়েছে?
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।