মহানবী (সা.)-এর সময় থেকে পবিত্র কাবাঘর ধোয়ার ঐতিহ্য চলে আসছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর দুবার কাবাঘর ধোয়া হতো। একবার মহররম মাসে, আরেকবার রমজান মাস শুরুর আগমুহূর্তে। মূলত মহানবী (সা.)-এর রীতি অনুসরণ করে তখন থেকেই সম্মানিত এই কার্যক্রম পালিত হয়ে আসছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে তা পালন করে। গতকাল সোমবার (২৩ আগস্ট) পবিত্র কাবাঘর ধোয়ার কার্যক্রম পালিত হয়। এতে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের পক্ষে তাঁর উপদেষ্টা ও মক্কার গভর্নর প্রিন্স খালেদ বিন ফয়সাল এতে অংশ নেন। কাবাঘরের দ্বাররক্ষী শায়খ সালেহ আল শায়বা এবং পবিত্র দুই মসজিদ পরিচালনা পর্ষদের প্রধান শায়খ ড. আবদুর রহমান আল সুদাইস কার্যক্রমের নেতৃত্বে থাকেন।
কাবাঘর ধোয়ায় যা ব্যবহার হয় : আনুষ্ঠানিকতার আগের দিন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কাবাঘর ধোয়ার তরল (লিকুইড) বস্তু প্রস্তুত করেন। তরল পদার্থে গোলাপ ফুলের পানি, উদ, ইতার (পারফিউম) মিশানো হয়। অত্যন্ত উঁচুমানের এ উপাদানগুলোর দামও খুব চড়া। ধোয়ার কার্যক্রমে যাঁরা অংশ নেন : পবিত্র কাবাঘর ধোয়ার কার্যক্রমে অংশ নিতে উপস্থিত সাধারণ মুসল্লিদের প্রবল আগ্রহ থাকে। ধোয়ার আনুষ্ঠানিকতার সময় নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁদের দূরে সরিয়ে দেন। এতে পবিত্র স্থানের নীতি লঙ্ঘিত হয় মনে করে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে থাকেন। নিরাপত্তার কথা ভেবে শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন। কারণ এ কাজে উপস্থিত সবার অংশগ্রহণ প্রায় অসম্ভব।
তা ছাড়া এতে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা আছে। কাবাঘর ধোয়ার কাজে সব মুসলিমের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ও সমস্যা সমাধানে পবিত্র দুই মসজিদ পরিচালনা পর্ষদ একটি উদ্যোগ নেয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ সব মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূতদের ধোয়ার কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁদের অংশগ্রহণকে সব মুসলিমের অংশগ্রহণ হিসেবে মনে করা হয়। আনুষ্ঠানিকতার সময় : দীর্ঘদিন ধরে পবিত্র কাবাঘর ধোয়ার কার্যক্রম ১৫ মহররম অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। রমজান মাসের আগে শাবান মাসেও আরেকবার ধোয়া হতো। পরবর্তী সময়ে শাবান মাসে ধোয়ার আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ রাখা হয়। অনুষ্ঠানের দিন সাধারণ লোকদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে পবিত্র কাবা চত্বর ঘিরে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। প্রথমে মসজিদুল হারামের ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা, এরপর আমন্ত্রিত স্থানীয় প্রবীণ ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা কাবাঘর পরিদর্শন করেন। অতঃপর কাবাঘর পরিদর্শনে আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথিরা আসেন। নামাজ পড়ে ধোয়ার কাজ : স্থানীয় সময় সকাল ১০টা নাগাদ মক্কার গভর্নর ও হারামাইন পরিচালনা পর্ষদের প্রধান কাবা চত্বরে এসে প্রথমে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন।
তাহিয়াতুল মসজিদ তথা মসজিদে প্রবেশের সুন্নত হিসেবে তা আদায় করা হয়। এরপর অন্য কর্মীদের নিয়ে কাবাঘর ধোয়ার কার্যক্রম শুরু করেন। এতে প্রায় ১৫-২৫ মিনিট সময় লাগে। অতিথিদের তাওয়াফ : পরিষ্কার কার্যক্রমের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সাতবার পবিত্র কাবা তাওয়াফ করেন। মাকামে ইবরাহিমের পেছনে তাঁরা দুই রাকাত নামাজ পড়েন। এরপর মহানবী (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে অতিথিদের মধ্যে বাটিতে করে জমজমের পানি বিতরণ করা হয়। এভাবে কাবাঘর ধোয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
সূত্র : হারামাইন ওয়েবসাইট
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।