আত্মাকে আরবি ভাষায় ‘রুহ’ বলা হয়। প্রতিটি জীবের শরীরে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আত্মা বিদ্যমান থাকে। ওই সময়টুকুকে আমরা ‘হায়াত’ বলে জানি। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর স্মরণ করো, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বলেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি শুকনো ঠনঠনে কালচে মাটি থেকে। অতঃপর যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার পক্ষ থেকে রুহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ২৯) আত্মা আসলে কী, তা বোঝা মানুষের জন্য দুষ্কর।

 

তাই পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ আত্মার সরল সংজ্ঞা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা তোমাকে আত্মা সম্পর্কে প্রশ্ন করে। তুমি বলো, আত্মা আমার প্রতিপালকের আদেশবিশেষ। আর তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে।’ (সুরা, আয়াত : ৮৫) আত্মা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রাণীর দেহে অবস্থান করে মহান আল্লাহর এই আদেশ যতক্ষণ একটি প্রাণীর দেহে বিদ্যমান থাকবে, ততক্ষণ ওই প্রাণী জীবিত থাকবে। এর এক মাইক্রো সেকেন্ড আগেও কেউ তাকে মারতে পারবে না এবং আর এক সেকেন্ড কেউ তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না।

 

পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো মৃত্যু হতে পারে না, যেহেতু সেটার মেয়াদ সুনির্ধারিত।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৫) আত্মার জগৎ মানবদেহে প্রবেশ করানোর আগে আত্মাগুলো আত্মার জগতে থাকে। সেখানে যার আত্মার সঙ্গে যার আত্মার পরিচয় থাকে, তাদের সঙ্গে দুনিয়াতে বন্ধুত্ব ও প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আত্মা স্বভাবজাত সমাজবদ্ধ। সেখানে যেসব রুহ পরস্পর পরিচিতি লাভ করেছিল দুনিয়াতে সেগুলো সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকে।

আর সেখানে যেগুলো অপরিচিত ছিল, এখানেও তারা অপরিচিত। (মুসলিম, হাদিস : ৬৬০২) মানুষের কর্ম আত্মাকে পবিত্র বা অপবিত্র করে মানুষের কৃতকর্মের ওপর ভিত্তি করে আত্মা পবিত্র বা অপবিত্র হয়। মানুষ যদি ঈমান আনে, নেক আমল করে, আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলে, তাহলে তাদের আত্মা পবিত্র থাকে, আর যদি তা না করে, তাহলে তাদের আত্মা অপবিত্র হয়ে যায়। এবং তা নিকৃষ্ট আত্মাতে পরিণত হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, মৃত্যুর সময় মানুষের কাছে ফেরেশতা আগমন করে।

অতএব মুমূর্ষু ব্যক্তি নেককার হলে তারা বলেন, হে পবিত্র আত্মা, পবিত্র দেহ থেকে প্রশংসিত অবস্থায় বের হয়ে এসো এবং আল্লাহর রহমত ও সুঘ্রাণের সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমার রব তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট নন। রুহ বের হয়ে আসা পর্যন্ত তারা এভাবে আহ্বান জানাতে থাকে। অতঃপর রুহ বের হয়ে এলে তারা তা নিয়ে আসমানে আরোহণ করেন। এ রুহের জন্য আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়। জিজ্ঞেস করা হয়, সে কে?

ফেরেশতারা বলেন, অমুক ব্যক্তি। তখন বলা হয়, পবিত্র আত্মাকে স্বাগতম, যা ছিল পবিত্র দেহে। প্রশংসিত অবস্থায় তুমি প্রবেশ করো। আল্লাহর রহমত ও সুঘ্রাণের সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমার রব তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট নন। তাকে অবিরত এ সংবাদ প্রদান করা হয়—ততক্ষণ অবধি, যখন তা মহামহিম আল্লাহ যে আসমানে অবস্থান করেন সেখানে পৌঁছে যায়।

মুমূর্ষু ব্যক্তি পাপাচারী হলে ফেরেশতা বলেন, হে নিকৃষ্ট দেহের নিকৃষ্ট আত্মা, নিন্দিত অবস্থায় বের হয়ে আসো এবং উত্তপ্ত গরম পানি ও রক্ত-পুঁজের দুঃসংবাদ গ্রহণ করো এবং অনুরূপ বহু বিষাক্ত বস্তুর। রুহ বের হয়ে আসা পর্যন্ত তারা এভাবে আহ্বান জানাতে থাকেন। অতঃপর তাঁরা রুহসহ ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেন। কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হয় না। জিজ্ঞেস করা হয়, এ ব্যক্তি কে? বলা হয়, অমুক। তখন বলা হয়, নিকৃষ্ট দেহের নিকৃষ্ট আত্মার জন্য নেই কোনো সাদর সম্ভাষণ। তুই নিন্দিত অবস্থায় ফিরে যা।

কারণ তোর জন্য আকাশের দ্বার খোলা হবে না। অতঃপর একে আসমান থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং তা কবরে ফিরে আসে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৬২) এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে মানুষের কৃতকর্মের ওপর ভিত্তি করে আত্মা পবিত্র-অপবিত্র হয়। যাদের আত্মা পবিত্র, পরকালীন যাত্রায় তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়, আর যাদের আত্মা অপবিত্র তাদের পরকালীন যাত্রা অত্যন্ত অপমানজনক হয়, নাউজুবিল্লাহ।

কাজেই বেশি বেশি নেক আমলের মাধ্যমে আত্মার পরিচর্যা করা জরুরি। বেশি বেশি নেক আমল আত্মা পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করে তোলে। পবিত্র আত্মার অধিকারীদের যে সংবর্ধনা দেওয়া হবে, তার ভাষ্য পবিত্র কোরআনে এভাবে এসেছে, ‘মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে প্রশান্ত

আত্মা, তুমি তোমার রবের কাছে ফিরে এসো সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। আর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুরা : ফাজর, আয়াত : ২৭-৩০) মহান আল্লাহ সবাইকে আত্মার পবিত্রতা অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।