পবিত্র রমজান মাসে দেশের আলেম-ওলামাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। নিরপরাধ আলেম-ওলামাদের ওপর পরিচালিত অন্যায় জুলুম আল্লাহ বরদাশত করবেন না। সারাদিন রোজা রেখে ইফতার করারও সুযোগ পাচ্ছেন না তারা। হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির আমির জুনাইদ বাবুনগরী।
 
 
তিনি বলেন, রমজান মাসেও আলেমদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেহেরি খেতে বাসায় আসলেও তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাতে ঘরে ঘরে তল্লাশির নামে নারীদের কষ্ট দেয়া হচ্ছে।
 
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার বড় মসজিদ বাইতুল করিমে জুমা পূর্ব আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। জুনায়েদ বাবুনগরীর ব্যক্তিগত সহকারী ইন্ আমুল হাসান ফারুকি স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
 
জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, এই রোজা-রমজানের দিনে নিরপরাধ আলেম-ওলামাদের উপর অন্যায়ভাবে জুলুম আল্লাহ বরদাশত করবেন না। সারাদিন রোজা রেখে ইফতার করবে তার সুযোগ দিচ্ছেন না।
 
তারাবির নামাজ থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, সারারাত বাহিরে বাহিরে লুকিয়ে থেকে সেহরি খেতে আসে, ওখান থেকেও নিয়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। রাতে ঘরে ঘরে তল্লাশির নামে মহিলাদের কষ্ট দিচ্ছে। নিরাপরাদ সাধারণ জনগণকে ও হয়রানি করা হচ্ছে।
 
 
বাবুনগরী বলেন, সরকার, প্রশাসন, জনগণ সবাইকে নসিহত করছি। আল্লাহকে ভয় করুন। তার আজাবকে ভয় করুন। এই জুলুমের শেষ একদিন হবে, পৃথিবীতে কোন জালিম চিরস্থায়ী হয়নি।
 
শুক্রবার হাটহাজারী মাদ্রাসার মসজিদে বাবুনগরী বলেন, চলমান সংকট নিরসনে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যেখানে যা করা দরকার ওলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শক্রমে তাই করা হচ্ছে। আপনারা ধৈর্য হারা হবেন না। সবর করুন।
 
বিপদ-আপদ থেকে সুরক্ষিত থাকতে এই রমজানে মুসল্লি ও ইতিকাফকারীদের দোয়ায়ে ইউনুসের খতম, সালাতুত তাসবিহর নামাজ, তাহাজ্জুদের নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির আজকার, দোয়া দুরুদ ইত্যাদি আমল করার আহ্বান জানান বাবুনগরী।
 
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলাম। ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় আক্রমণ করে ভাঙচুর চালায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
 
 
সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা সদর ভূমি অফিসে ভাঙচুর চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়।
 
চট্টগ্রাম ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজত। বাহ্মণবাড়িয়ায় অর্ধশতাধিক স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়।
 
এর মধ্যে হেফাজতের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে তাণ্ডবের এই ঘটনায় এবং আগের করা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
 
৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে এক নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় লোকজন। পরে খবর পেয়ে হেফাজত সমর্থক ও মাদ্রাসার ছাত্ররা সেখানে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে তাকে নিয়ে যায়।
 
ঘটনার পর তা গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার পায়। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে স্ত্রীর সঙ্গে মামুনুলের একটি অডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
 
অডিওর কথোপকথনের বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবারের ফেইসবুক লাইভে এসে মামুনুল বলেন, স্ত্রীকে খুশি করতে ‘প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে সত্যকে গোপন করার অবকাশ রয়েছ।’
 
১১ এপ্রিল হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের জরুরি সভা শেষে মামুনুল হকের বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুনগরী বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।