প্রতিবেদন টি করছেন: নিরব কুমার দাস…. ভারতের অধিকাংশ স্থানই তার অতীত ইতিহাস বর্ণনা করে। অনেক স্থান আবার ধর্মীয় ঘটনা, ইতিহাস-ঐতিহ্যের জানান দেয়। এমনই একটি স্থান হচ্ছে বৃন্দাবনের নিকট অবস্থিত নিধি বন বা নিধু বন। এই বনকে মধুবনও বলা হয়। এই বনকে অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পবিত্র ও ধর্মীয়ভাবে রহস্যজনক ভেবে থাকেন।
নিধি বন কেন রহস্যজনক বা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিকট তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র স্থান আজকের লেখায় সে সম্পর্কে কিছু তথ্য জানানোর চেষ্টা করব।
নিধি বনকে ‘কৃষ্ণের ভূমি’ বলা হয়। উপাসকগণ ও এলাকাবাসী বিশ্বাস করেন, এই বনে প্রতিরাতে শ্রী কৃষ্ণ ভ্রমণ করতে আসেন। এছাড়াও প্রতিরাতে তিনি গোপীর সাথে রাসলীলা করেন। এ কারণেই প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটায় আরতী অনুষ্ঠানের পর নিধি বনে প্রবেশ দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর সকালে দরজা খোলা হয়। এ সময় বনের ভিতরে কেউ থাকতে পারেন না। শুধু তাই নয়, সেখানকার পশুপাখির সংখ্যাও রাতের বেলা অনেক কমে যায়।
নিধি বনের ভেতর একটা প্রাসাদ রয়েছে যাকে বলা হয় ‘রঙ মহল’। সেখানে চন্দন কাঠের তৈরি একটি বিছানা রয়েছে। বিছানাটি প্রতিরাতে কৃষ্ণের জন্য সাঁজিয়ে রাখা হয়। এছাড়াও মহলের ভেতর পানি ভর্তি পাত্র, নিমের দাঁতন ও পান সাঁজিয়ে রাখা হয়। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, ভোর পাঁচটায় যখন রঙ মহলের দরজা খোলা হয় তখন বিছানার অবস্থা এমন দেখায় যেন রাতে কেউ সেখানে ঘুমিয়ে ছিল। এছাড়াও পানির পাত্রের পানি থাকে না কিংবা অর্ধেক খালি হয়ে থাকে। পাশাপাশি নিমের দাঁতন ব্যবহৃত হয় ও পান খেয়ে যায়।
নিধি বনে ঘটা রাসলীলা দেখার জন্য কেউ যদি বনের ভিতর লুকিয়ে থাকেন তবে তিনি অন্ধ, বোকা, বধির ও পাগল হয়ে যান। এজন্য রাত ৮টা বাজতেই বনের যাবতীয় পশুপাখি, বানর, ভক্ত, পূজারী সকলেই ঐ স্থান ত্যাগ করে থাকে। পশুপাখি নিধি বন ছেড়ে পার্শ্ববর্তী বনে চলে যায়। স্থানীয় লোকেরা বলেন, এখানে কেউ রাতের বেলা থাকলে তার সাংসারিক বন্ধন ছিন্ন হয়।
প্রায় আড়াই একর এলাকার জুড়ে নিধি বনের গাছপালা বিস্তৃত রয়েছে। সবুজ এই বনের কোনো গাছই সোজা নয়। প্যাঁচানো ছোটখাট গাছের প্রায় প্রতিটির কাণ্ডই নিচের দিকে হেলে রয়েছে। সেখানকার তুলসি গাছগুলোও জোড়ায় জোড়ায় রয়েছে। কথিত আছে রাতের বেলা গাছগুলো গোপীর রূপ ধারণ করে ও কৃষ্ণের সাথে রাসলীলায় অংশ নেয়। ভোর হতে না হতেই সেগুলো পুনরায় তুলসি গাছে রূপান্তরিত হয়। লোকমুখে প্রচলিত আছে, তুলসি গাছের কোনো অংশই কেউ নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন না। যদি কেউ নিয়ে যান তবে তাকে মারাত্মক খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হবে।
নিধি বনের আশেপাশে কিন্তু মানব বসতি রয়েছে। রয়েছে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়িও। এই সাধারণ লোকজন দিনের বেলায় দরজা-জানালা খোলা রেখে বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারেন। কিন্তু আরতি অনুষ্ঠানের পরপরই অর্থাৎ রাত ৮ টার পরপর দরজা-জানালা খোলার সাহস করেন না। যদি কেউ খোলা রাখেন বা রাতের বেলায় বনের দিকে তাকান তবে তিনিও অন্ধ ও পাগল হয়ে যাবেন।
ভারতের মথুরা জেলার বৃন্দাবন সত্যিই এক রহস্যময় স্থান। এই নিধি বনে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকের সমাগম ঘটে। বনের রহস্য সেখানে আগত সকল পর্যটককে ভাবনার জগতে ফেলে দেয়। তবে এই বনের রহস্য উন্মোচন করার সাহসিকতা দেখানোর মতো কাউকে পাওয়া যায় না। আবার অনেকেই মনে করেন এই রহস্য উন্মোচন করা সম্ভবও নয়।
তবে নিধি বন ও রঙ মহল সম্পর্কে এখনও অনেককিছু অনুসন্ধান করার বাকি রয়েছে। সাহস করে কেউ অনুসন্ধান করতে চাইলে যেতে পারেন নিধি বনে। যাবে নাকি কেউ অনুসন্ধান করতে?
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।