পৃথিবীর বিভিন্ন উদ্ভাবন জীবনকে করেছে সহজ ও সাবলীল। এরই ধারাবাহিকতায় বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন ইউরোপের একদল বিজ্ঞানী। তাঁরা দেখিয়েছেন, লেজার রশ্মির ব্যবহারের মাধ্যমে বজ্রবিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

১৭৫২ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী বেঞ্জামিক ফ্রাঙ্কলিন দেখান, ভবনে শুধু একটিমাত্র ধাতব রডের ব্যবহার কীভাবে বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। এখন পর্যন্ত এটিই বজ্রপাত ঠেকাতে বিশ্বব্যাপী অধিকতর প্রচলিত পন্থা। তবে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, লেজার রশ্মির ব্যবহার করেও বজ্রপাত ঠেকানো সম্ভব।

এ প্রযুক্তির মাধ্যমে শত শত ফুট ওপরে বজ্রপাতকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ নিয়ে ল্যাবরেটরিতে গবেষণা চলেছে বহু দশক ধরে। গবেষণায় লেজার রশ্মির বজ্রপাত ঠেকাতে সক্ষমতার প্রমাণও মেলেছে। বিজ্ঞানীরা সুইজারল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্যান্তিস পর্বতে পরীক্ষা চালিয়ে দেখেন, টাওয়ারের পাশে গাড়ির আকৃতির একটি উচ্চ ক্ষমতার লেজারযন্ত্র স্থাপন করেন। ঝোড়ো আবহাওয়ার সময় এর রশ্মি আকাশে ছুড়তে থাকেন।

তারা দেখলেন, বায়ুমণ্ডল এ রশ্মি দ্রুতই শোষণ ও বর্জন করছে। এতে বায়ুমণ্ডলে গরম ও কম ঘনত্বের একটি প্রণালি তৈরি হচ্ছে। এ প্রণালিটি বজ্রবিদ্যুৎ তার গতিপথ হিসেবে বেছে নিচ্ছে। এতে বিদ্যুতের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে।

যেভাবে বজ্যপাত নিয়ন্ত্রণ করে লেজার রশ্মি

বজ্রপাতের মাধ্যমে মেঘ বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ নির্গমন করে। দুই থেকে তিন মাইল এলাকাজুড়ে এ বিদ্যুৎ চমকায়। বজ্রপাতের সময় তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ উৎপন্ন হয়, যা সূর্যের পৃষ্ঠদেশ থেকে পাঁচ গুণ বেশি তপ্ত। প্রতি বছর বিশ্বে ১০০ কোটির বেশি বজ্রপাত হয়।

এতে হতাহত হন লাখো মানুষ। ক্ষতি হয় কোটি কোটি ডলারের। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, লেজারভিত্তিক এ বজ্রপাত সুরক্ষা ব্যবস্থা বিমানবন্দর ও আকাশচুম্বী ভবনগুলোতে ব্যাপকভাবে কাজ দেবে।

উদ্ভাবক


দ্য গার্ডিয়ান খবরের বরাতে গবেষক দলের প্রধান ফ্রান্সের প্যালাইসেউ অঞ্চলের ইকোল পলিটেকনিকের পদার্থবিদ ওরিলিয়েন হোয়ার্ড বলেন, প্রায় সব জায়গায়ই বজ্রপাত ঠেকাতে ধাতব রড ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এর সুরক্ষা ক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকে কয়েক মিটারের মধ্যে।

যদি লেজারে যথেষ্ট শক্তি থাকে, তবে এ সুরক্ষাকে কয়েকশ মিটার পর্যন্ত ব্যাপ্ত করা যেতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ারের পদার্থবিদ জোসেফ ডুয়ার এ উদ্ভাবনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি এটাকে ‘বড় ধরনের অগ্রগতি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ধাতব রডের পরিবর্তে মানুষ লেজারের মাধ্যমে বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে বহুদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। লেজারের মাধ্যমে বজ্রবিদুতের নিয়ন্ত্রণ একটি চমৎকার ধারণা।