রাকিবুল হাসান, মনপুরা প্রতিনিধি: ভোলার মনপুরা উপজেলায় প্রান্তিক কৃষকদের কাছে সরকারি নির্ধারিত মূল্য তালিকা থেকে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে।

সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও অধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে সার। এতে ক্ষুব্ধ ও হতাশ স্থানীয় কৃষকরা। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই খুরচা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছেন।

গত মাসের প্রথম সাপ্তাহ ইউরিয়া সারের কেজি প্রতি ছয় টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এরপর বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এতেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কৃষিতে ব্যবহৃত অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। না পারছেন কৃষি কাজ ছাড়তে, না পারছেন ধরে রাখতে। এমতাবস্থায় ভোলার মনপুরা উপজেলা বাজারগুলোতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চাইতে বেশি দামে বিক্রয় হচ্ছে সার।

এতে উপজেলা জুড়ে উৎকন্ঠা ও হতাশ বিরাজ করছে স্থানীয় কৃষদের মাঝে।যেমন খড়ার উপরে ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।সারা দেশে ডিজেল এর দাম বৃদ্ধি পাওয়া জমি চাষ করতে গুনতে হচ্ছে অধিক টাকা।

সেই সাথে সরকারি নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে সরকারি নির্ধারিত মূল্য থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

উপজেলার হাজিরহাট, ফকিরহাট, মাষ্টার হাট, বাংলাবাজার, সিরাজগঞ্জ, কোড়ালিয়া, চৌধুরী বাজার, চৌমুহনী সহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে,১১০০ টাকার ইউরিয়া সার বিক্রির হচ্ছে ১২৫০ থেকে ১৩৫০ টাকা, ৮০০ টাকা মূল্যের ডাই অ্যামোনিয়া ফসফেট (ডিএপি) সারের বস্তা ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, ১১০০ টাকার ট্রিপল সুপার ফসফেট বা টিএসপি সার বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা, এবং ৭৫০ টাকার এমওপি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা বস্তা দরে বিক্রি হচ্ছে।এতে কৃষকদের বস্তা প্রতি সার ক্রয়ে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত।

উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের কৃষক জলিল। ৫ বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করবেন। সে লক্ষ্যে খড়ার মাঝে অতিরিক্ত খরচে জমিতে সেচ দিয়ে মাঠ প্রস্তুত করছেন। জমিতে রাসায়নিক সার দেওয়ার জন্য তিনি বাজারে সার কিনতে আসেন। কিন্তু সারের দাম শুনে তিনি রীতিমতো হতাশ। সার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনেক বাগবিতন্ডা করেও পাননি সরকারি নির্ধারিত মূল্যে সার।

তিনি জানান,আমার ৩ বস্তা ইউরিয়া, ১ বস্তা টিএসপি ও ১ বস্তা পটাশ সারের প্রয়োজন হয়েছে প্রথম অবস্থায়।তবে দাম বেশি হওয়া বাধ্য হয়ে ১ বস্তা ইউরিয়া কিনেছেন ১২৫০ টাকা দরে, ১০ কেজি পটাশ কিনেছেন ২০ টাকা দরে আর ১০ কেজি টিএসপি কিনেছেন ২৯ টাকা দরে। অথচ, প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের সরকারি মূল্য ২২ টাকা, টিএসপি ২২ টাকা এবং পটাশ ১৫ টাকা করে কৃষকের কাছ থেকে নেওয়ার কথা। তবে সরকারি মূল এখন পযর্ন্ত কোন কৃষক সার সংগ্রহ করতে পারেন বলে জানান অনেক কৃষক।

স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, চলতি আমন মৌসুমে সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় উঠবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

বেশি সমস্যায় পরেছেন উপজেলার বর্গাচাষি ও ক্ষুদ্র কৃষকেরা। বর্গাচাষি মহিউদ্দিন বলেন, সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদনে বাড়তি ৩ হাজার টাকা খরচ পড়বে। প্রতি বিঘা জমিতে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে ফসল উৎপাদন করে ন্যায্যমূল্য না পেলে বড় ধরনের সংকটে পড়তে হবে।

গতবছর বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ কমছিলো ৩-৪ হাজার টাকা। কিছুটা উৎপাদন খরচ মিটানো গিয়েছে। এবার ডিজেল ব্যবসায়ীরা যেমন সিন্ডিকেট করেছেন এখন সার ব্যবসায়ীরাও সিন্ডিকেট করছেন।সারের নির্ধারিত মূল্য থেকে অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেন তারা।

মনপুরা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে।

তবে সচেতন মহল বলেন, কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদের সুবিধার্থে সারের মূল্য নির্ধারণ করলেও শুধু সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস ও প্রশাসনের মনিটরিংয়ের অভাবে ডিলাররা কৃষকদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো সারের মূল্য আদায় করছেন।

তবে বাজারে সরকারি মূল্য তালিকা থেকে অধিক হারে সার বিক্রি করলেও কৃষি বিভাগের তৎপরতা লক্ষ কারা যায়নি।এতে করে উচ্চ মূল্যে সার কিনে জমিতে প্রয়োগ করতে হয়েছে কৃষকদের।

চাষিদের ভাষ্য, কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে থাকেন এসব সরকারি সারের ডিলারগন। বর্ধিত দামে সার বিক্রির বিষয়টি সঠিকভাবে মনিটরিং না করায় এই অনিয়ম এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে । আর এ কারণেই ফসল উৎপাদনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় তিনটি সার পেতে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে প্রায় দেড়গুন দাম ।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে,সার বিক্রেতারা সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চড়া মূল্যে কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করছেন। লাল কাপড়ে সরকারি নির্ধারিত মূল্যের তালিকা টাঙিয়ে সার বিক্রির নির্দেশনা থাকলেও কোথাও তা চোখে পড়েনি। ফলে সার বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দামে সার বিক্রি করছেন।

তবে কৃষি অফিসার এর দাবি প্রত্যেক সার বিক্রেতা কে নির্দেশনা দেওয়া আছে লাল কাপড়ে মূল্য তালিকা প্রদর্শন করতে।
উপজেলা কিছু রিটেইলার এর দোকানে লাল কাপড়ে মূল তালিকা টানানো থাকলেও হচ্ছে না সেই দামে বিক্রয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুরচা ব্যবসায়ী, বলেন বিসিআইসির ডিলার আমাদের কে খুচরা বিক্রয় মূল্য দামে সার আমাদের পয়েন্টে দেন।সেই ক্ষেত্রে আমরা কি করে সরকারি মূল তালিকা সার বিক্রি করবো।তাই বাধ্য হয়ে সরকারি মূল তালিকা বাহিরে বিক্রি করি। তবে ডিলারেরা আমাদের কে কোন বিক্রয় রশিদ দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ রিটেইলারদের।

তবে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেয়া উচিত স্থানীয় প্রশাসনের এমনটি দাবি করেন মনোয়ারা বেগম মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুর আলম শাহীন।

সরকারি সার অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রয়ের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হাসনাইন বলেন,উল্লেখ্য বিষয়ে আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি, ‘নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির বিষয়টিও আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে সার ডিলার বা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ক্যাপশনঃ-প্রতি হেক্টরে আমন চাষ করতে ইউরিয়া লাগে ১৮০ কেজি।সেই হিসেবে উপজেলা ৯ হাজার হেক্টর আমন আবাদ করতে ইউরিয়া প্রয়োজন ১৬ লক্ষ ২০ হাজার কেজি।যাহা সরকারি মূল্য বিক্রয়ের দাম হয় ৩ কোটি ৫৬ লক্ষ ৪০ হাজার।

অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে ৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। শুধু মাত্র ইউরিয়া সার থেকে নেওয়া হচ্ছে ৪ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত।