সোহানা পারভীন জনি, স্টাফ রিপোর্টার: পরিবারের স”ছলতা ফিরিয়ে আনতে সৌদি আরবে কাজের সন্ধানে গিয়ে নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের মিরাপাড়া গ্রামের কেরামত শেখের ছেলে নজিবুল্লাহ (২২) মৃত্যুকান্ডে অবশেষে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।মৃত্যুকান্ডের সাড়ে তিনমাস পর গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নজিবুল্লাহর লাশ সৌদি আরব থেকে নড়াইলে এসে পৌঁছায়। ২৩ সেপ্টেম্বর নড়াইল সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়।ময়না তদন্ত শেষে ওইদিন বিকাল সাড়ে ৫টায় পারিবারিক কবর¯’ানে তাকে দাফন করা হয়।
নজিবুল্লাহর মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়নি,তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এমন দাবি করে আসছিলেন নিহতের স্বজনরা।ময়না তদন্তের পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। গত ১২ জুন ঘটনা উল্লেখ করে এক নারীসহ তিনজনের নাম উল্লেখ পূর্বক নড়াইল সদর আমলী আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন নজিবুল্লাহ’র পিতা কেরামত শেখ।অভিযোগ তদন্তপূর্বক ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাওযায় গত ১৯ অক্টোবর মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে সদর থানায় মামলা দায়ের হয় বলে জানান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মাহমুদুর রহমান। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো: রকিব হোসেন গত ৬ নভেম্বর এ মামলায় পেনাল কোডের ৩০২/৩৪/১০৯ ধারা সংযোজনের জন্য আমলী আদালত নড়াইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বরাবর আবেদন করেন।
নিহতের স্বজন ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের স”ছলতা ফিরিয়ে আনতে এবং জীবনে সাফল্য লাভের আশায় নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের মিরাপাড়া গ্রামের কেরামত শেখের ছেলে নজিবুল্লাহ চলতি বছরের ১৭মার্চ সৌদি আরবে যান। ভালো বেতনে কাজের সন্ধানে গিয়ে আড়াই মাসের মাথায় লাশ হন তিনি। নজিবুল্লাহকে ভালো বেতনে চাকুরির প্রলোভন
দিয়ে সৌদি আরবে নিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করাসহ তাকে হত্যার অভিযোগ তোলেন পিতা কেরামত শেখ। নজিবুল্লাহকে বিদেশ পাঠাতে তিন দফায় দালাল চক্রের হাতে সাড়ে ৭লাখ টাকা তুলে দেন নজিবুল্লাহ’র গরীব পিতা কেরামত শেখ। পরিবারের সদস্যসহ গ্রামবাসী এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আসছেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে,নড়াইল সদর উপজেলার মিরাপাড়া গ্রামের জলিল মিনার ছেলে শাহাবুদ্দিন মিনা বাদী কেরামত শেখের স্ত্রীর ফুফাতো ভাই হওয়ার সুবাদে তিনি ছেলে নজিবুল্লাহকে ৬লাখ টাকার বিনিময়ে সৌদি আরবে পাঠানোর মৌখিক চুক্তি করেন।
শাহাবুদ্দিন মিনার ভগ্নিপতি নড়াইল সদর উপজেলার চাঁচড়া গ্রামের সাইফুল আব্দার সৌদি আরবে কর্মরত।কেরামত শেখ ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর লক্ষ্যে গত ২৫ ফেব্রæয়ারি সাইফুল আব্দারের স্ত্রী রাবেয়া বেগম ও সাইফুলের শ্যালক (রাবেয়ার চাচাতো ভাই) আমিনুর মিনার কাছে প্রথম দফায় ৩লাখ টাকা প্রদান করেন।গত ১মার্চ রাবেয়া ও আমিনুরের কাছে আরো ৩লাখ টাকা প্রদান করেন কেরামত শেখ। মোট ৬লাখ টাকা প্রদানের পর গত ১৭মার্চ নজিবুল্লাহ সৌদি আরবে পৌঁছান।পরবর্তীতে নজিবুল্লাহর কাগজপত্র (আকামা) ঠিক করে দেয়ার কথা বলে এবং সৌদি পুলিশের ভয় দেখিয়ে কেরামত শেখের কাছে আরো দেড়লাখ টাকা দাবি করেন শাহাবুদ্দিন মিনা।গরু বিক্রি করে ও ধার-দেনা করে দাবিকৃত দেড়লাখ টাকা প্রদান করেন কেরামত শেখ।গত ৪জুন বাদী কেরামত শেখ সৌদি আরবে অব¯’ানরত অন্যলোকের মাধ্যমে জানতে পারেন তার পুত্র
নজিবুল্লাহকে আটক রেখে এজাহারে উল্লেখিত আসামিরা মুক্তিপণ আদায় করেছে এবং ছেলের মৃতদেহ সৌদি আরবের হাসপাতাল মর্গে পড়ে আছে। এ মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরের পর থেকে ছেলেকে শেষবারের মতো দেখার জন্য প্রহর গুনতে থাকেন নজিবুল্লাহর বাবা-মা ও স্বজনরা। বাংলাদেশ সরকারের সদি”ছা ও চেষ্টায় গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নজিবুল্লাহর লাশ সৌদি আরব
থেকে নড়াইলে এসে পৌঁছায়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।