শেখ মোস্তফা কামাল,স্টাফ রিপোর্টারঃ কেশবপুর পৌর শহরের ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো সিএনজি, ইজিবাইক, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান চালক ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের অবৈধ দখলের কারণে পথচারীদের চলাচলে নানাবিধ সমস্যা এবং দূর্ভোগ চরমে।
এছাড়াও যশোর-চুকনগর মহাসড়ক এবং সড়কের দু’পাশ অবৈধভাবে দখল করে সিএনজি ও ইজিবাইক স্ট্যান্ড গড়ে তুলায় এ যেন মরার উপরে খাঁড়ার ঘা। পৌর শহরে সড়কের উপর ও ফুটপাতে অবৈধভাবে দোকানপাট বসিয়ে ক্রেতা ও পথচারীদের জীবনের ঝুকির মধ্যে ফেলে ব্যবসায়ীরা চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা। যেকোন মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। মহাসড়ক ও ফুটপাতের উপর থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ওইসব অবৈধ স্থাপনা এবং দোকানপাট উচ্ছেদের জন্য সচেতন মহলের অনেকেই উপজেলা প্রশাসন ও পৌর মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করার পাশাপাশি দ্রুত সময়ে অপসারণের জোরালো দাবি জানান।
বাংলাদেশ সড়ক ও মহাসড়ক আইন অনুযায়ী, কোন সড়ক বা মহাসড়ক অবৈধভাবে দখল করে কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণ এবং চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করা যাবে না। অথচ আইনের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের কতিপয় নেতারা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কেশবপুর পৌর শহরের থানার সামনে মহাসড়ক ও জনপথ দখল করে অবৈধভাবে সিএনজি ও ইজিবাইক স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে। চালকেরা মহাসড়কের উপর যন্ত্রতন্ত্র গাড়ি পার্কিং করা এবং যাত্রী উঠানামা করামোর জন্য যানজটের সৃষ্টি দৃশ্যমান। যেকোন সময় মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা বিরাজ করছে সচেতন মহল। শুধু তাই নয়! হকারেরা মহাসড়ক ও পৌর শহরের সকল ফুটপাত দখল করে পান, বিড়ি, সিগারেটের দোকান, ভাজাপোড়ার দোকান, চায়ের দোকান, চটপটির, পিঠার দোকান, জামাকাপড়ের দোকান বসিয়ে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এই সব দোকানগুলোতে বেচাকেনা এবং ক্রেতাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের আড্ডায় বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের চলাচলে নানাবিধ সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়ক ও ফুটপাত অবৈধ দখলবাজদের রিরুদ্ধে পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় জনমনে নানা গুঞ্জন। তবে, যানজট ও জনদূর্ভোগ এড়াতে সড়ক বিভাগ কর্তৃপক্ষ বলছে, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল দখলবাজদের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
কেশবপুর পৌর শহরের থানার মোড় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জনসমাগমের ব্যস্ততম পয়েন্ট। পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের পৌর শহরের প্রবেশ মুখ হচ্ছে থানার মোড়। পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন যানবাহনে থানার মোড় হয়ে যশোর-চুকনগর মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে থাকে। এমন একটি ব্যস্ততম মহাসড়ক ও দুপাশে ফুটপাত দখল করার কারণে সাধারণ মানুষের যাতায়াত করতে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও যেন না দেখার ভান করছে।পথচারীদের স্বাভাবিক চলাচলের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ ফুটপাত করে দিলেও সেটিও দখল করে নিয়েছে সিএনজি, ইজিবাইক চালক ও স্থানীয় এক শ্রেণির সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে থানার মোড়ে গিয়ে একাধিক সিএনজি চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কের উপরে হাসানপুর, বগা ও সাগরদাঁড়ি রুটের প্রায় দেড় শতাধিক গাড়ি রয়েছে তার মধ্যে প্রায় ৩০/৪০টি গাড়ি পার্কিং করে রেখেছে। পাশে আটন্ডা শ্রীফলা, ভান্ডারখোলা রুটের প্রায় ১২০টি গাড়ি চলাচল করে। দুটি স্থানের সকল গাড়ি প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সিরিয়ালের জন্য যশোর-চুকনগর মহাসড়ক এবং শহরের কাঁচা বাজারে প্রবেশ সড়কের উপরে পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য ইঞ্জিনচালিত ভ্যান, হরেক রকমের দোকানপাট। কেউবা সড়ক দখল করে আবার কেউবা ফুটপাত দখল করে। এ দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে, এ যেন সড়ক ও ফুটপাত দখলের চলছে মহোৎসব।
সড়ক ও ফুটপাত দখলের বিষয়ে কেশবপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, ফুটপাত দখল করায় প্রতিদিন কলেজে যাওয়া আসা করতে আমাদের খুবই সমস্যা হয়। অনেকটা সময় সিএনজি ও ইজিবাইকে যাত্রী উঠানামা করার সময় যাত্রীদের সাথে শিক্ষার্থীদের সাথে ধাক্কা লাগে। ফুটপাত দখলমুক্ত ও শহরে যানজটের নিরসনে খুব দ্রুত উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, শহরের দুপাশের ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা করার কারণে আমাদের চলাচলে নানা সমস্যা হচ্ছে। ফুটপাত দখলমুক্ত করলে আমরা স্বাভাবিকভাবে স্কুলে যাতায়াত করতে পারবো।
পথচারী উপজেলার বাগদা গ্রামের জাহিদ হাসান বলেন, প্রতিদিন এখানে শত শত সিএনজি, ইজিবাইক, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান সড়কের উপর দাঁড়িয়ে থাকায় পথচারীদের চলাচলে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। খুব দ্রুত সময়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা সিএনজি স্ট্যান্ড ও ফুটপাতের সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করা দরকার বলে আমি মনে করছি।
প্রতাপপুর গ্রামের পথচারী রিপন ও হাসানপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, মা-বোন ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চলাচলে বেশি সমস্যা। এমনকি ফুটপাতে অবৈধ পান বিড়ির দোকানে বকাটের আড্ডায় মেতে ওঠে। তাতে করে ছাত্রীদের নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়।
আলতাপোল গ্রামের পথচারী শাহানাজ পারভীন বলেন, ফুটপাত দখল করে রাখায় আমার মেয়েকে প্রতিনিয়ত স্কুলে যাওয়া আসা করতে খুবই কষ্ট হয়। ইজিবাইক, সিএনজি চালক ও অবৈধ ব্যবসায়ীদের ফুটপাত দখলে থাকায় অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে নেমে হাটাচলা করতে হয়।
খর্নিয়া হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ হামিদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সড়ক দূর্ঘটনা ও যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ সবসময় তৎপর রয়েছে। অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে। যারা অবৈধভাবে মহাসড়ক দখল করে সিএনজি, ইজিবাইক স্টেশন এবং সড়কের উপর দোকান বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, পৌর শহরের যানজট নিরসনে ও দ্রব্যমূল্যে দাম নিয়ত্রণ রাখতে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে নির্বাহী অফিসারের সভাকক্ষে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সড়কের উপর যন্ত্রতন্ত্র গাড়ী পার্কিং ও ফুটপাতের দু’পাশে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করাসহ সকল স্থাপনা অপসারণের সিন্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী রবিবারের মধ্যে ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে ফুটপাত থেকে তাদের অবৈধ স্থাপনা বা দোকানপাট সরিয়ে না নিলে সোমবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হবে। এছাড়াও খোলা বাজারে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তুহিন হোসেন বলেন, পৌর শহরের যানজট নিরসন ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার লক্ষে অবৈধ দখলবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।