বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভার কলেজ রোডস্থ গণকবরকে পিছে ফেলে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। ফলে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের বীরত্বগাথার শেষ স্মৃতিচিহ্নও আজ হুমকির মুখে।


জানা যায়, ৭১এ স্বাধীনতা যুদ্ধোকালীন পাকিস্তানী ও তাদের দোসর রাজাকার আল বদর বাহিনী ছাত্রনেতা রেজাউলসহ শতাধিক মুক্তিকামী বাঙালিকে হত্যা করে সরকারি কলেজ সংলগ্ন ছোনের খেতে মাটি চাপা দিয়ে রাখে। মূল বধ্যভূমির উপর মালিকানা শর্তে বসতবাড়ি নির্মাণ করেছে এক জামাত নেতা।

বাড়ি নির্মানের সময় খননকাজে শহীদদের অস্থিকঙ্কাল উঠে এলে বসতবাড়ির পাশেই তা পুনরায় সমাধিস্থ করে স্থানীয় বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ। পরবর্তীতে সেখানে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, সাবেক সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রহমানের উদ্যোগে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।


স্থানীয় প্রশাসন ২০২০ সালে পৌরসভার শিবপুর মৌজার ১২২৭ দাগের ৪৭ শতাংশ জমি অধিগ্রহণকরে গণকবরটি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের জন্য প্রস্তাবনা পাঠায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে, দুই বছর আগে প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।


গণকবরটি ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তিতে হওয়ায় সুরু একটি সড়ক ও সামান্য কিছু জায়গা ছেড়ে দিয়ে সম্প্রতি জমিটির মালিক উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় গ্রামের মো. খালিদ হাসান বহুতল ভবন নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গুরুপূর্ণ উপাদান মুছে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।


বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, আমরা প্রাথমিকভাবে গণকবরের জায়গাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। খুব শীঘ্রই সর্বজন স্বীকৃত একটি কমিটি গঠন করবো। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় রাজনীতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে সীদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বর্তমানে ওই জায়গায় কনেস্ট্রাকশনের কাজ বন্ধো করে রাখা হয়েছে।


উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম মারিয়া হক জানান, গণকবর ঘেঁষে পাকা স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে খবর পেয়ে ইউএনও স্যার, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সহ আমরা সরেজমিনে গিয়ে কাজটি বন্ধ রাখার আদেশ দিয়েছি।

২০২০ সালে গণকবরের জন্য ৪৭ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, যাতে স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র স্থাপন করা যায়। সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে ১৬ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের সুপারিশ করেছে। এ ব্যপারে সর্বজন স্বীকৃত একটি কমিটি গঠন করা হবে এ কমিটি যে ভাবে সুপারিশ করবে আমরা সে মত কাজ করবো।


বোয়ালমারী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক চন্দনা সম্পাদক, কবি কাজী হাসান ফিরোজ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের বোয়ালমারীতে যে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল, তার প্রমাণ কলেজরোডস্থ এই গণকবর বা বধ্যভূমি। যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেরও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে এ গণকবরটি সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। ইতোপূর্বে মূল গণকবরের উপর বসতবাড়ি, গণকবর ঘেঁষে শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে, যা লজ্জাজনক। বাড়ি নির্মানের সময় খননকাজে উঠে আসা শহীদদের হাড় কঙ্কাল পুনরায় মুক্তিযোদ্ধারা সমাধিস্থ করে যেখানে গণকবরের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল ভবন নির্মানের ফলে সেটিও সংকোচন হলে শহীদদের বীরত্বগাথার ইতিহাস মুছে যাবে। এটা সংরক্ষণের জোর দাবি জানাই।