শেষ হয়ে গেল বার্সেলোনায় মেসি অধ্যায়। গতকাল বিদায়ি সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি এই কিংবদন্তি। তিনি কেঁদেছেন, কাঁদিয়েছেনও। তবে বিদায় বেলায় অভিযোগের আঙুল তোলেননি কারো দিকে। বরং প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন অন্য কোনো ভূমিকায় ন্যু ক্যাম্পে ফেরার। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মেসি… কী বলব বুঝে উঠতে পারছি না। জীবনের এতগুলো বছর এখানে কাটানোর পর আমার জন্য অনেক বেশি কঠিন এই দিনটা।

এখানে থাকতেই চেয়েছিলাম আমি। এমন ভাবনাই ছিল, কিন্তু সব কিছু ছেড়ে যেতে হচ্ছে। এভাবে বিদায় নিতে হবে কখনো ভাবিনি। মনে হয় না কেউ ভেবেছে। এখানে এসেছিলাম ১৩ বছর বয়সে। ছেড়ে যাচ্ছি ২১ বছর পর। ক্লাবটাকে ভীষণ ভালোবাসি বলে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। বার্সেলোনায় যা করেছি তা নিয়ে গর্বিত। সমর্থকদের মাঠে দেখতে পাইনি দেড় বছর হলো। তাঁদের না দেখে বিদায় নিতে হওয়াটাও বেশি কষ্ট দিচ্ছে। তবে এটা আমার ঘর, আবার ফিরে আসব এখানে। সন্তানদেরও কথা দিয়েছি, ফিরে আসব এখানে। প্রশ্ন : বার্সায় কোনো একটি মুহূর্ত বেছে নিতে হলে কোনটি নেবেন? লিওনেল মেসি : এত মুহূর্তের মধ্যে কোনো একটি বেছে নেওয়া কঠিন। কত শত দারুণ মুহূর্ত কেটেছে, গেছে কঠিন সময়ও। শুধু একটি বেছে নিতে বললে বলব আমার অভিষেক। আমার প্রথম স্বপ্নপূরণ। সব কিছুর শুরু সেখান থেকেই। প্রশ্ন : দুই পক্ষই রাজি ছিলেন, এর পরও বার্সা ছাড়তে হলো।

কী হয়েছে আসলে? ক্লাবের : সব কিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে বলেই ভেবেছিলাম আমি। এরপর একেবারে শেষ বেলায় জানা গেল লা লিগার নিয়মের কারণে চুক্তি নবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রশ্ন : ক্লাবের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়নি? মেসি : ঠিক বলতে পারছি না ক্লাবের ভেতরে কী হয়েছে? লাপোর্তা জানিয়েছে, লা লিগার নিয়মের কারণে চুক্তি নবায়ন করা যায়নি। এখানে থাকার জন্য যা কিছু করা সম্ভব সবই করেছিলাম। আমি থাকতে চেয়েছিলাম। গত বছর চাইনি, সেটাও বলেছি। তবে এ বছর থাকতে চেয়েও পারিনি। প্রশ্ন : এখন তো নতুন চ্যালেঞ্জও নিতে হবে? মেসি : বিশ্বাসই হচ্ছে না এই জায়গাটা ছেড়ে যাচ্ছি। জীবন পুরো বদলে যাচ্ছে। এখন শূন্য থেকে শুরু করতে হবে সব কিছু। আমার পরিবারের জন্যও কঠিন হবে এই শহর ছেড়ে যাওয়াটা। এটা কঠিন চ্যালেঞ্জ হলেও মেনে নিতে হবে। প্রশ্ন : তাহলে কি পিএসজিতেই যাচ্ছেন? মেসি : পিএসজি একটা সম্ভাবনা। তবে সত্যিটা হচ্ছে আজ পর্যন্ত কিছুই চূড়ান্ত হয়নি কারো সঙ্গে। বিবৃতিটা (বার্সা ছাড়ার) আসার পর থেকে অনেক ফোন এসেছে। আগ্রহ দেখিয়েছে অনেক ক্লাব। এখন পর্যন্ত কারো সঙ্গে চূড়ান্ত কিছু হয়নি।

এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। প্রশ্ন : তাহলে নেইমার-দি মারিয়াসহ ইবিজাতে সেই ছবিটা? মেসি : কোপা আমেরিকার সময়ই ঠিক করেছিলাম দি মারিয়া, পারেদেসদের সঙ্গে দেখা করব (ইবিজাতে)। নেইমার ফোন করল, তাই সবার সঙ্গে দেখা হলো। ভেরাত্তিও ছিল। এটা শুধুই একটা ছবি প্রশ্ন : মানুষ কিভাবে মনে রাখবে আপনাকে? মেসি : সবাইকে সম্মান দেখিয়ে আর বিনয়ী হয়ে এই ক্লাবে বেড়ে উঠেছি, চাইব মানুষ আমাকে সেভাবেই মনে রাখুক। মাঠে যা করেছি সেটাও মনে রাখুক। প্রশ্ন : আপনাকে ছাড়া বার্সা মানিয়ে নেবে কিভাবে? মেসি : লাপোর্তাই বলেছেন, ক্লাব যে কারো চেয়ে বড়। এটা সত্যি। সমর্থকরা মানিয়ে নেবেন এর সঙ্গে, অতীতেও এমনটা হয়েছে। ক্লাবে দারুণ সব খেলোয়াড় আছে। ভালোভাবেই চলবে সব কিছু। আমার এখানে থাকা নিয়ে সব কিছু ঠিক হয়েই ছিল। সমর্থকদের সঙ্গে সব সময় সৎ থেকেছি। কখনোই ক্লাবের সমর্থকদের সঙ্গে প্রতারণার চেষ্টা করিনি। আমি থাকার জন্য যা করা সম্ভব করেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হলো না।

প্রশ্ন : আপনার সঙ্গে কেউ প্রতারণা করেছে কি? মেসি : আমি বেতন ৫০ শতাংশ কমিয়েছি। সেটা নিয়ে সমঝোতাও হয়েছিল দুই পক্ষের। এরপর তারা (বার্সা) আমার কাছে আর কিছু দাবি করেনি। অথচ সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে আরো ৩০ শতাংশ (সব মিলিয়ে ৮০ শতাংশ) কমানোর কথা বলা হয়েছিল। এগুলো সত্যি নয়। বার্সার যখন কিছু করার ছিল না তখনই আলোচনা থেমেছে। এরপর আমার ক্যারিয়ার নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হতো, যা এখন নেব। প্রশ্ন : চ্যাম্পিয়নস লিগ নিয়ে কোনো আক্ষেপ? মেসি : আমি আরো দু-একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে চেয়েছিলাম। আমাদের খেলোয়াড়দের দারুণ যে একটা প্রজন্ম ছিল তাতে আরো কয়েকটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততেই পারতাম। প্রশ্ন : বার্সায় বিদায়ি ম্যাচ খেলতে চান? মেসি : জানি না বিদায়ি ম্যাচ আয়োজন হবে কি না। আমি প্রস্তুত সমর্থকদের জন্য যেকোনো কিছু করতে।