প্রথম রাউন্ডে টানা তিন ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা স্কটল্যান্ডের ব্যাটিং মুখ থুবড়ে পড়ল মূল পর্বে এসে। মুজিব উর রহমান ও রশিদ খানের স্পিনের জবাবই খুঁজে পেল না স্কটিশরা। দুর্দান্ত জয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করল আফগানিস্তান। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার সুপার টুয়েলভে দুই দলের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের জয় ১৩০ রানে। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে আফগানরা করে আসরের সর্বোচ্চ ১৯০ রান।
স্কটল্যান্ড গুটিয়ে যায় কেবল ৬০ রানেই, এই সংস্করণে যা তাদের সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় জয় এটি। ২০১৩ সালে শারজাহতেই কেনিয়ার বিপক্ষে ১০৬ রানে জয় ছিল তাদের আগের রেকর্ড। ২০ ওভারের বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটি যৌথভাবে দ্বিতীয় বড় জয়। ২০০৯ আসরে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেই ১৩০ রানে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই ম্যাচের ৮১ রান এতদিন ছিল স্কটিশদের সর্বনিম্ন স্কোর। সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডটা শ্রীলঙ্কার; ২০০৭ সালে প্রথম আসরে তারা ১৭২ রানে কেনিয়াকে হারিয়েছিল।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা অফ স্পিনার মুজিব। লেগ স্পিনার রশিদ স্রেফ ৯ রানে নেন ৪টি। ছক্কার ঝড়ে জয়ের ভিত গড়ে দেন মূলত ব্যাটসম্যানরা। ওপেনিংয়ে ৩৩ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৪৪ রান করেন হজরতউল্লাহ জাজাই। ৪ ছক্কা ও একটি চারে ৩৭ বলে ৪৬ রান রহমানউল্লাহ গুরবাজের। চারে নেমে নাজিবউল্লাহ জাদরান ৩৪ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় করেন ৫৯। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে আফগানিস্তান। প্রথম ওভারে ৬ বল খেলে জাজাই নিতে পারেন স্রেফ একটি সিঙ্গেল। পরের ওভারেই ওঠে ঝড়।
অফ স্পিনার মিচেল লিস্ককে চার-ছক্কা মারেন জাজাই। মাঝে ছক্কায় ওড়ান মোহাম্মদ শাহজাদও। জাজাই পরে ১০১ মিটার ছক্কায় ব্র্যাড হুইলকে আছড়ে ফেলেন গ্যালারিতে। শাহজাদের উইকেট হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে আফগানিস্তান তোলে ৫৫ রান। আসরে পাওয়ার প্লে-তে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে যৌথভাবে যা সর্বোচ্চ। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফিরে দুই বছর পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা শাহজাদ ১৫ বলে করেন ২২। জাজাইয়ের ঝড় থামান মার্ক ওয়াট। বাঁহাতি স্পিনারের ইয়র্কারে বোল্ড বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এরপর আফগানরা এগিয়ে যায় গুরবাজ ও নাজিবউল্লাহর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে। দুজনই মারেন বড় বড় সব ছক্কা।
নাজিবউল্লাহর একটি ১০০ মিটার, আরেকটি ১০৩ মিটার! গুরবাজ থামেন ফিফটির কাছে গিয়ে। ভাঙে ৫২ বলে ৮৭ রানের জুটি। নাজিবউল্লাহ ফিফটি পূর্ণ করেন ৩০ বলে। ইনিংসের শেষ বলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ৫৯ রানের ইনিংসটি। আফগানরা পায় বিশ্বকাপে তাদের সর্বোচ্চ রান। বড় রান তাড়ায় প্রথম ওভারে মোহাম্মদ নবিকে পরপর চার-ছক্কা মারেন জর্জ মানজি। ৩ ওভারে স্কটল্যান্ড তোলে ২৭ রান। এরপরই পাল্টে যায় চিত্র। চতুর্থ ওভারে মুজিব পাঁচ বলের মধ্যে তুলে নেন ৩ উইকেট। অফ স্পিনারের গুগলিতে বোল্ড কাইল কোয়েটজার (১০)।
ক্যালাম ম্যাকলয়েড ও রিচি বেরিংটন হন এলবিডব্লিউ। পরের ওভারে পেসার নাভিন উল হকের বলে উইকেটের পেছনে শাহজাদের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন ম্যাথু ক্রস। রানের খাতা খুলতে পারেননি এই তিন জনের কেউ, দুজন গোল্ডেন ডাক! মুজিবের পরের ওভারে ছক্কা মারার পরই বোল্ড হয়ে যান মানজিও। স্কটল্যান্ডের রান তখন ৫ উইকেটে ৩৬। নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এই নিয়ে তৃতীয়বার পাওয়ার প্লেতে প্রতিপক্ষের পাঁচ উইকেট নিল আফগানিস্তান। বিশ্বকাপে এমন ঘটনা ঘটল ৯ বার। আক্রমণে এসেই রশিদ শিকার ধরেন লিস্ককে গুগলিতে এলবিডব্লিউ করে। নিজের কোটার শেষ ওভারে ওয়াটকে বোল্ড করে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন মুজিব।
মুস্তাফিজুর রহমানের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট নিলেন মুজিব (২০ বছর ২১১ দিন)। ২০১৬ আসরে নিউ জিলান্ডের বিপক্ষে রেকর্ড গড়ার সময় বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজের বয়স ছিল ২০ বছর ২০২ দিন। মুজিবের ২০ রানে ৫ উইকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে পঞ্চম সেরা বোলিং। ২০১৯ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৫ রানে ৪ উইকেট এতদিন ছিল তার নিজের সেরা বোলিং। বাকি তিন উইকেট নিয়ে রশিদ গুটিয়ে দেন স্কটল্যান্ডের ইনিংস। তাদের ৬০ রান বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে যৌথভাবে চতুর্থ সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৯০/৪ (জাজাই ৪৪, শাহজাদ ২২, গুরবাজ ৪৬, নাজিবউল্লাহ ৫৯, নবি ১১*; হুইল ৪-০-৪২-০, লিস্ক ১-০-১৮-০, শারিফ ৪-০-৩৩-২, ডেভি ৪-০-৪১-১, ওয়াট ৪-০-২৩-১, গ্রিভস ৩-০-৩০-০)
স্কটল্যান্ড: ১০.২ ওভারে ৬০ (মানজি ২৫, কোয়েটজার ১০, ম্যাকলয়েড ০, বেরিংটন ০, ক্রস ০, লিস্ক ০, গ্রিভস ১২, ওয়াট ১, ডেভি ৪, শারিফ ৩*, হুইল ০; নবি ১-০-১১-০, মুজিব ৪-০-২০-৫, নাভিন ২-০-১২-১, রশিদ ২.২-০-৯-৪, জানাত ১-০-৬-০)
ফল: আফগানিস্তান ১৩০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুজিব উর রহমান।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।