মোঃ শাহ্ জালাল, নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর-চুকনগর- সাতক্ষীরা সড়কের মাঝে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় গাছ রেখেই শুরু হয়েছে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ। ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ প্রায় ৭০ ভাগ সম্পন্ন হলেও ওই গাছ অপসারণ করা হয়নি।

অফিস সূত্রে জানাযায় সড়ক ও জনপদ বিভাগ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতেই যশোর জেলা পরিষদের ওই গাছ রেখেই সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সড়কের গাছ অপসারণ না করায় নাগরিক সমাজ, সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করছে।

যশোরের রাজারহাট থেকে চুকনগর পর্যন্ত এ সড়কটির দৈর্ঘ্য ৩৮ দশমিক ২৬৫ কিলোমিটার। সড়কটি যশোর সদরের রাজারহাট থেকে জেলার মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা হয়ে খুলনা-সাথক্ষীরা মহাসড়কের চুকনগরে গিয়ে মিশেছে। সাথক্ষীরা ভোমরা বন্দরের আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে ট্রাক, ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহন ও অন্যান্য শত শত যানবাহন এ সড়ক দিয়ে বিভিন্ন জেলায় চলাচল করে। জন গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের সংস্কার ও প্রশস্তকরণে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করে এর উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। এ কাজের সময়সীমা ছিল গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতেই গাছ রেখেই সড়কের কাজ চলমান রাখা হয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সড়কের মধ্যে বড় বড় মেহগনি গাছ রেখেই সড়ক সংস্কার ও প্রশস্ত করণের কাজ চলমান থাকায় বিভিন্ন সময়ে ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। রাতে চলাচলকারী মানুষের জন্য সড়কের ওই গাছ বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপজেলার ট্রাকচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, সড়কের মধ্যে গাছ থাকায় রাতে চলাচলের সময় দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। রাতের অন্ধকারে গাছ ঠিকমতো দেখা না যাওয়ায় রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন গাছে ধাক্কা দিচ্ছে। মাইক্রোবাস চালক গনি মিয়া বলেন রাস্তায় থাকা বড় বড় মেহগনি গাছের কারণে ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি চালাতে হচ্ছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, যশোর-চুকনগর সড়কটি ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত করা হচ্ছে। সড়কের মধ্যে থাকা ওই গাছগুলি জেলা পরিষদের। সড়ক থেকে গাছ অপসারণের জন্য জেলা পরিষদ দরপত্র আহ্বান করেছেন বলে জানিয়েছেন। যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ-উজ-জামান বলেন, সড়কের ওই গাছ বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলেও ঠিকাদাররা অংশগ্রহণ না করায় পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে

অন্য দিকে যশোর-চুকনগর সড়কের মণিরামপুর পৌর শহরে বর্তমান যানজট সমস্যা চরম সীমায় পৌঁছে গেছে। মণিরামপুর বাজারের বুকচিরে চলে গেছে যশোর-সাতক্ষীরা এই মহাসড়ক। মণিরামপুর পৌর শহরের ভিতর সরু রাস্তা নেই কোন ফুটপাত, তার ওপর রাস্তার উভয় পার্শ্বে অপরিকল্পিত দোকানপাট, যত্রতত্র অটো, ইজিবাইক, ভ্যান ষ্ট্যান্ড। আর ষ্ট্যান্ড ছাড়াই যেখানে-সেখানে যশোর-কেশবপুর-চুকনাগর গামী বাসগুলোর লোক উঠানামা করে । শহরের গুরুত্বপূর্ন মোড়গুলোতে নেই কোন ট্রাফিক পুলিশ। মনিরামপুর বাজারের উত্তর মাথা থেকে দক্ষিণ মাথা পর্যন্ত ভ্যানে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পার হতে এখন সময় লাগে ৩৫- ৪০ মিনিট।

ভূক্তভোগী এক পথচারী অভি তার ফেসবুকে দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেন এটা আমাদের জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আমি মণিরামপুরে উত্তর মাথা থেকে দক্ষিণ মাথা পর্যন্ত এসেছি একটা জরুরী কাজে যেখানে ৫ মিনিটের রাস্তা সেখানে প্রায় ৪০ মিনিট অতিক্রম হয়ে গেলো আমি এখানো থানা মোড় পার হতে পারলাম না।

মণিরামপুরবাসীর প্রাণের দাবী পৌর শহরের বুকচিরে যাওয়া উত্তর মাথা থেকে দক্ষিণ মাথা মহাসড়কটি উভয় পার্শ্বে দ্রুত প্রশস্তকরণ এবং শহরের পার্শ্ব দিয়ে একটি বাইপাস সড়ক নির্মান। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভোটের সময় সড়ক নির্মান ও রাস্তা বর্ধিতকরার প্রতিশ্রুতি দেয়। বাইপাস সড়ক নির্মানের জন্য কখনও শহরের পশ্চিম পার্শ্ব আবার কখনও শহরের পূর্ব পার্শ্ব কয়েকবার মাপামাপি করতে দেখা গেলেও কার্যকারিতা হয়নি।