সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকম্পগুলোর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, উৎপত্তিস্থল বার্মিজ ফল্ট লাইনে চরম অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, যা আগামীতে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের বার্তা দিচ্ছে। এই ধারণা সত্যি হলে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কায় রয়েছে চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রামে গত পাঁচ মাসে পাঁচবার হালকা থেকে মাঝারি ভূমিকম্প হয়েছে। রিখটার স্কেলে এসব ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫-এর ওপরে। উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত বার্মিজ ফল্ট লাইনে, যা বন্দরনগরী থেকে খুব বেশি দূরে নয়।

ভূকম্পনগুলোর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, উৎপত্তিস্থল বার্মিজ ফল্ট লাইনে চরম অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, যা আগামীতে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের বার্তা দিচ্ছে। এই ধারণা সত্যি হলে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কায় রয়েছে চট্টগ্রাম।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ভূমিকম্প গবেষণা সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক আবদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, সাধারণত বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এই ঘটনাগুলোকে সতর্কসংকেত হিসেবে নিয়ে বড় বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুতি রাখা দরকার।

তিনি বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশটা ভূমিকম্পের তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থান করছে। এর মধ্যে ইউরেশীয় প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেট, যেটাকে আমরা সাবস্ট্রাকশন জোন বলি, এটা একটু বিপজ্জনক। যে কারণে অল্প মুভমেন্টে দেখা যায় বড় ধরনের আর্থকোয়াক হতে পারে। যেমনটা ২৬ নভেম্বর ভোরে হলো, ৬ দশমিক ১ মাত্রা। এটা কিন্তু মোটেও কম না।’

অধ্যাপক আবদুর জানান, ওই ভূমিকম্পের সময় চট্টগ্রাম ফোকাল পয়েন্ট থেকে ১৮০-১৮৫ কিলোমিটার দূরে ছিল, যার কারণে সেবার তেমন একটি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। শুধু দু-একটি ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এটি একটি ওয়ার্নিং। ভবিষ্যতে এই প্লেটের সংযোগস্থলে আরও বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকম্পগুলোর তেমন বার্তাই দিচ্ছে।

গত শুক্রবার বিকেল ৪টা ১২ মিনিটে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় সবশেষ মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের ফালাম শহরে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৪। ভূপৃষ্ট থেকে ৫৬ কিলোমিটার গভীরে ছিল এটির অবস্থান।

এর আগে ২৭ নভেম্বর বিকেলে হওয়া ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৩। উৎপত্তিস্থলও ছিল বার্মিজ ফল্টে। এর এক দিন আগে ২৬ নভেম্বর ভোরে অনুভূত হয় মাঝারি আকারের আরও একটি ভূমিকম্প।

রিখটার স্কেলে এটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ১, যার অবস্থান ছিল ভূপৃষ্ঠের ৩২ কিলোমিটার গভীরে। তিনটি ভূমিকম্পেরই উৎপত্তিস্থল ছিল চট্টগ্রাম থেকে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে।

এর আগে ভূমিকম্প হয় ৮ অক্টোবর। রিখটার স্কেলে ওটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১০ কিলোমিটার গভীরে। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ৩২ মিনিটে আতঙ্ক ছড়ানো ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এই ভূমিকম্পটি ছিল ৫ দশমিক ৬ মাত্রার।

আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, গত পাঁচ মাসে যে পাঁচটি ভূমিকম্প হয়েছে বার্মিজ ফল্টে, যেগুলো চট্টগ্রাম শহর থেকে গড়ে ২৫০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে অবস্থিত। ফলে আগামীতে একই স্থানে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সংগঠিত হওয়ার মতো পর্যাপ্ত শক্তি জমা রয়েছে। যদি তেমনটি হয় তাহলে চট্টগ্রাম শহরে জান ও মালের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।