বাণিজ্যমন্ত্রীর বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই ফরিদপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। রোববার জেলা-উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা কম দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
গত চার-পাঁচ দিন আগেও পেঁয়াজ মণপ্রতি তিন হাজার থেকে তিন হাজার দুইশ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে তা এখন দুই হাজার দুইশ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম না কমলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। শুক্রবার রংপুরে বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর ফরিদপুরে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় ফরিদপুরে পেঁয়াজের হাট-বাজারগুলোতে কয়েক দফায় বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম।
আমদানির ঘোষণার আগেই এমন দরপতনে হতাশ হয়েছেন চাষিরা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময় পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়ে স্বস্তি ফিরে পেয়েছিলেন তারা।
তবে পেঁয়াজের দাম কমায় খুশি ভোক্তারা। প্রতি মণ পেঁয়াজ গড়ে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা দরে থাকলে সবার জন্যই ভালো বলে দাবি করেছেন চাষি, ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা।
ফরিদপুর শহরের চকবাজারে প্রতি বুধ ও রোববার হাট বসে। এ হাটে আশপাশের উপজেলা হতে পেঁয়াজ আসে। এ হাটে বর্তমানে প্রতি মণ পেঁয়াজ দুই হাজার একশ থেকে দুই হাজার দুইশ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে; যা গেল চার-পাঁচ দিনের তুলনায় ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা কম।
প্রায় কাছাকাছি চিত্র নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায়। নগরকান্দা সদরে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে। হাটে পাইকারি দরে বিক্রি হয় পেঁয়াজ। পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায় উৎপাদিত পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ফরিদপুর, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা মেটায়। এ হাটে বর্তমানে প্রতি মণ পেঁয়াজ দুই হাজার থেকে দুই হাজার একশ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে নগরকান্দার কৃষক সলেমান বলেন, দীর্ঘদিন পর ভালো দাম পেয়ে খুশি আমরা। পেঁয়াজ আমদানি বন্ধসহ বাজারদর ঠিক থাকলে আগামীতে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বাড়বে চাষিদের। এবার প্রায় ১৪০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছিলাম। দাম বাড়ায় ৪০ মণের মতো বিক্রি করেছি। বাকিগুলো রেখে দিয়েছি। এ রকম দাম থাকলে চাষিদের জন্য ভালো। ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের জন্য সহনীয় হয়।
সালথার পেঁয়াজ চাষি রহিম সেক বলেন, গত তিন-চার দিন আগে ভালো দাম পেয়ে কয়েক হাট মিলে দেড়শ মণ বিক্রি করে দিয়েছি। আজকের হাটে ৩০ মণ বিক্রির জন্য এনেছি; কিন্তু মণপ্রতি প্রায় হাজার টাকা কমে গেছে। তবে এখনো যে দাম আছে তা মোটামুটি। এর চেয়ে দাম কমলে লোকসান হবে কৃষকদের।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারীর সাতৈর বাজার বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী মো. আতিয়ার রহমান বলেন, এ মুহূর্তে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হলে খুচরা বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে দাবি পাইকারদের। আবার দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম বাড়ায় হতাশ ভোক্তারা। পাইকার ব্যবসায়ীদের মতে, বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ঢুকলে দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ফরিদপুরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করা হচ্ছে। অবৈধ ব্যবসায়ী, অধিক মুনাফালোভী ও বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার পরিস্থিতির বিষয়েও আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফরিদপুরে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলায় মোট ৪০ হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। ২০২১-২২ অর্থ বছরে মোট ৪০ হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। আর চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে ৩৫ হাজার ৮৭৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এবার ফলনও বাম্পার হয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।