দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল জ্বালানি ইউরেনিয়াম আমদানি শুরু হচ্ছে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে। রাশিয়া থেকে আমদানি করা হবে সেই জ্বালানি। আর এর নিরাপত্তা, পরিবহন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নানা অবকাঠামো তৈরির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ, যার পুরোটাই হবে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দেশনা মেনে।

অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাতে চলমান আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার ৬৬তম সাধারণ অধিবেশনে গতকাল বাংলাদেশ স্টলের সামনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব বলেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর। এরই মধ্যে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ভিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল আইএইএ সদর দফতরে সংস্থাটির মহাপরিচালক ও রূপপুরের বিনিয়োগকারী রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটমের মহাপরিচালক এবং প্রকল্প নির্মাণে সহায়তাকারী আরেক দেশ ভারতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছে ভিয়েনা

সফররত বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি রূপপুরের জ্বালানি আসা শুরু হয় তাহলে ওই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে দেশ। শৌকত আকবর বলেন, ‘রাশিয়ার প্রস্তাব ছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে রূপপুরের জ্বালানি সরবরাহ করা। এর জন্য এই সময়ের মধ্যে অ্যাকশন প্ল্যান, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, জনবল, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া তৈরি করার কথা বলেছে তারা। কিন্তু আমরা বলেছি, অক্টোবর না, সেপ্টেম্বরের মধ্যে করলে ভালো।

সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাতে কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় এর জন্য রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।’ তবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম আমদানি, পরিবহন ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে নানা নিয়ম-নীতি, তৈরি করতে হবে অবকাঠামো। আর সেটি তৈরি করতে হবে আইএইএর দেওয়া নীতিমালা অনুযায়ী। অবশ্য পরমাণুর শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিতে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করা বাংলাদেশও মেনে চলতে চায় আইএইএর নীতিমালা। রূপপুর প্রকল্পের পরিচালক বলেন, ‘জ্বালানি আমদানি ও পরিবহনের ক্ষেত্রে আইএইএর প্রজ্ঞাপন লাগবে। রাশান ফেডারেশনের যে রপ্তানি নীতি, তার আলোকে অনুমতি লাগবে। আমাদের লাইসেন্স লাগবে সংরক্ষণ, আমদানি ও পরিবহনের জন্য।

ফলে এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এ জন্য নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো, সাংগঠনিক অবকাঠামো, দক্ষতা ও জনবল তৈরি করতে হয়।’ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সবকিছু সম্পন্ন করার বিষয়ে আশাবাদী প্রকল্প পরিচালক। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি পরিবহনে যে আনুষঙ্গিক অবকাঠামো সেগুলো ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে সম্পন্ন করব, যাতে সেপ্টেম্বরে পরিবহনের ক্ষেত্রে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা তৈরি না হয়।’ জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে সবগুলো শর্ত পূরণে বাংলাদেশ কাজ শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।

শৌকত আকবর বলেন, ‘আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করেছি। এই পরিবহনের সঙ্গে দেশের অনেক মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সম্পৃক্ত থাকবে। নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে গোয়েন্দা তৎপরতা থাকবে। রূপপুর প্রকল্পের জন্য রাশিয়ায় আমাদের যে জনবলের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে তাদের জন্য প্রকল্প এলাকায় অন সাইট প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা হয়েছে। এতে আগামী দিনে কমিশনিংয়ের সময় আমাদের যে দক্ষ জনবল প্রয়োজন হবে তা সময়মতো কাজে লাগাতে পারব।’