প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের বিদায়ি রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সংসদ ভবন কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের পর সরকার সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন তদারকি করতে আসবেন এবং তারা স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করবেন। তিনি বলেন, দেশের নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন, এর ওপর এবং এর বাজেটের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে এবং গণতন্ত্রের বিকাশে কাজ করে। তিনি বলেন, ১০ লাখের বেশি মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশের জন্য বোঝা। তারা যেন নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে সেজন্য সব পশ্চিমা দেশের সমর্থন প্রত্যাশা করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কষ্টে ফেলেছে। এই যুদ্ধে শুধু অস্ত্র বিক্রেতারাই লাভবান হচ্ছে। বিশ্বের উচিত অবিলম্বে এই যুদ্ধ বন্ধ করা।
এ সময় সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেন, আমি বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং এই চিত্তাকর্ষক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করে মুগ্ধ হয়েছি। বাংলাদেশের উন্নয়নে সুইজারল্যান্ড সমর্থন অব্যাহত রাখবে। আমি সবসময় বাংলাদেশের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে থাকব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আমি আশা করি এ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এ সময় তিনি বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন, অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ ছাড়া গণতন্ত্রের মান, এর স্থিতিশীলতা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার নীতির প্রশংসা করেন তিনি।
সাক্ষাৎকালে অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রধান হাতিয়ার ডিজিটাল সংযোগ-প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল চাবিকাঠি হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের জন্য ডিজিটাল সংযোগ মূল ভিত্তি হিসাবে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা-২০২৩ এর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এক ভিডিও বার্তায় একথা বলেন। ভিডিও বার্তায় তিনি ডিজিটাল পণ্য বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৩ দিনের এই ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার আয়োজন করে। দেশের আইটি ও আইটিইএস পণ্য ও সেবাগুলো প্রদর্শনই এ মেলার লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তবতা। স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট জাতি গঠনই আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন-ইন্টারনেট, ভার্চুয়াল বাস্তবতা, উদ্দীপিত বাস্তবতা, রোবোটিকস অ্যান্ড বিগ-ডাটা সমন্বিত ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে চায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিল্পাঞ্চলে ফাইভ-জি সেবা নিশ্চিত করা হবে।
ডিজিটালাইজেশনে বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ প্রজন্ম এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন রাঙামাটি জেলার বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশন স্থাপন করেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বহুমুখী কার্যক্ষমতা সম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তার সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন করতে যাচ্ছে। কারণ, ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৩৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ক্ষমতা অর্জন করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যান্ডউইডথের সক্ষমতা ৭২০০ জিবিপিএসে উন্নীত করা হবে। তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনের পর এটি ১৩২০০ জিবিপিএসে উন্নীত হবে। তিনি উল্লেখ করেন, সৌদি আরব, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া ও ভারতকে ব্যান্ডউইডথ লিজ দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিবছর ৪.৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে।
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেলিকম খাতে প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২২টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে ১৪টি ক্যাটাগরিতে প্রথম প্রবর্তিত পোস্ট অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন অ্যাওয়ার্ড বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মুস্তাফা জব্বার, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ এবং ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান বক্তৃতা করেন।