১৯৭১ সালে বাংলাদেশিদের ওপর চালানো গণহত্যা ও নৃশংসতার জন্য এখনো ক্ষমা চায়নি পাকিস্তান। এছাড়া তাদের চালানো এ হত্যাযজ্ঞকেও এখনো গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো। যার মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাষ্ট্র।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন বিখ্যাত লেখক ও প্রাবন্ধিক মিখাইল রুবিন বলেছেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চালানো হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত এবং এখনই এটি উত্তম সময়।

আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (এইআই) এর জ্যেষ্ঠ ফেলো মিখাইল রুবিন ১৯৪৫ নামে একটি পোর্টালে বাংলাদেশ নিয়ে একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে তারা যদি বাংলাদেশের ওপর চালানো পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় তাহলে এটি ‘পাকিস্তান বিরোধী’ পদক্ষেপ হবে। কিন্তু আসলে এটিকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে আন্তর্জাতিক আইন মানার একটি দায়িত্বশীল দেশে পরিণত হবে পাকিস্তান। আর এর ফলাফল হবে সুদূরপ্রসারী। ফলে এ বিষয়টির দিকে নজর দিতে মার্কিন রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মিখাইল রুবিন তার প্রবন্ধে আরো লিখেছেন, বাংলাদেশে যখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল তখন সব জানত যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। কিন্তু তারা কিছুই করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোলোকাস্ট, আর্মেনিয়ার গণহত্যা এবং ইউক্রেনের হলোডোমারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে কি ঘটেছিল এ নিয়ে নীরব রয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশি নারীদের ধর্ষণ, বাসস্থানত্যাগে বাধ্য করার বিষয়টিও নিজের প্রবন্ধে তুলে এনেছেন রুবিন।

তিনি আরো লিখেছেন, পাঞ্জাবিরা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীসহ সব জায়গায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে এবং ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে অবস্থিত বর্তমান বাংলাদেশ ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বৈষম্য করতে থাকে। বৈষম্য বাড়তে থাকলে ও ২৬ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট নামে হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং তার নিরাপত্তা পরামর্শক হ্যানরি কিসিঞ্জারের কথা উল্লেখ করেছেন রুবিন। তিনি জানিয়েছেন, রিচার্ড নিক্সন ওই সময় ভারত বিরোধী ছিলেন। চীন ও ভারতকে কব্জায় রাখতে পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার নীতি নিয়েছিলেন হ্যানরি কিসিঞ্জার। তবে হ্যানরি আবার চীনের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখতে চেয়েছিলেন। এ কারণে ১৯৭১ সালে গোপনে চীনে এসেছিলেন তিনি। চীনের সঙ্গে তিনি আঁতাত করায় পাকিস্তানের চালানো ধ্বংসযজ্ঞ বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত হয়নি।

মার্কিন লেখক রুবিন তার প্রবন্ধে ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন কাউন্সিল জেনারেল আর্চার ব্লাডের কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আর্চার ব্লাড বাংলাদেশের ওপর চালানো পাকিস্তানিদের বর্বরতার খবর টেলিগ্রামে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যা হোয়াইট হাউজেও জানানো হয়েছিল। তবে এ ঘটনার পর আর্চার ব্লাডকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত নিয়ে যান নিক্সন এবং কিসিঞ্জার। সত্য বলার কারণে তার কূটনীতিক ক্যারিয়ারও শেষ হয়ে যায়। সূত্র: এএনআই