দেশের সিলেট অঞ্চলে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। শনিবার (২৯ মে) সিলেট অঞ্চলে চার ঘণ্টার মধ্যে অন্তত পাঁচবার মৃদু ভূকম্পন হয়েছে। তবে ভূমিকম্পে কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্পের ঝাঁকুনির ফলে সিলেট শহরে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। অনেকেই উঁচু ভবন থেকে রাস্তায় নেমে আসেন। কেউ কেউ ভয়ে নিরাপত্তার কথা ভেবে শহুরে কংক্রিটের দালান ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, শনিবার (২৯ মে) সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টার মধ্যে সিলেটে অন্তত পাঁচটি ভূকম্পন ধরা পড়েছে। এইগুলোর সবটির কেন্দ্রস্থল ছিলো ঢাকা থেকে ১৯৬ থেকে ২৩২ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত আর্থ অবজারভেটরির পরিচালক ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার গণমাধ্যমকে বলেন, সামান্য তিন মাত্রার হলেও ৩০-৪০ মিনিটের ব্যবধানে ঘন ভন ভূমিকম্প হওয়ায় সিলেটবাসী আতঙ্কিত হয়ে গেছে। এই ভূকম্পন একটা ইঙ্গিত বহন করে যে, এটা সক্রিয় এবং ভবিষ্যতে এখানে বড় মাত্রার ভূমিকম্প যে কোনো সময় হতে পারে।
তিনি বলেন, ঝুঁকি রয়েছে, সেজন্য আমরা হুমকির মুখেও রয়েছি। ভূমিকম্পের দুর্যোগ মোকাবেলায় মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে মহড়া ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভূতত্তবিদ হুমায়ুন বলেন, ১৯২২ সালে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল হবিগঞ্জ অঞ্চলে; ১৯১৮ সালেও ৭.৫ মাত্রার হয়েছিল। চার বছরের ব্যবধানে বড় ভকম্পন ছিল শত বছর আগে।
অধ্যাপক হুমায়ুন বলেন, সিলেটে মহড়া করা থাকলে এমন আতঙ্ক বিরাজ করতো না। করোনায় যেমন মাস্ক আবশ্যক, ভূমিকম্পের সচেতনতায় মহড়াও তেমন আবশ্যক। প্রস্তুতির বিষয়ে তিন শহরে মেয়রদের উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ভূমিকম্প কী: ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির কম্পন। ভূ অভ্যন্তরে যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখন ভূমি কম্পন হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলনই ভূমিকম্পন। হঠাৎ যদি ঘরের কোনো জিনিস দুলতে শুরু করে—যেমন, দেয়ালঘড়ি, টাঙানো ছবি বা খাটসহ অন্য যেকোন আসবাব—বুঝতে হবে ভূমিকম্প হচ্ছে। সহজ কথায় পৃথিবীর কেঁপে ওঠাই ভূমিকম্প।
সারা পৃথিবীতে বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু, যেগুলো আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে—প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু। আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী এবং ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
যে কারণে ভূমিকম্প হয়: ভূ-অভ্যন্তরে স্থিত গ্যাস যখন ভূ-পৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন সেই গ্যাসের অবস্থানটি ফাঁকা হয়ে পড়ে আর পৃথিবীর উপরের তলের চাপ ওই ফাঁকা স্থানে দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে।
তখনই ভূ-পৃষ্ঠে প্রবল কম্পনের অনুভব হয় যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত। সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে—ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন জনিত কারণে, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও শিলাচ্যুতি জনিত কারণে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।