টি.এম.মুনছুর হেলাল, রায়গন্জ উপজেলা প্রতিনিধি:উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি প্রতিদিনই দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। একই সঙ্গে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যা কবলিত হয়ে পড়ছে নিম্নাঞ্চলে নতুন নতুন এলাকা। এতে বিপাকে পড়েছেন জেলার গো-খামারিরা। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জেলার নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙন।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টের গেজ রিডার আব্দুল লতিফ ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টের গেজ রিডার ওমর আলী জানান, গত ২৪ ঘন্টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্ট যমুনা নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সোমবার সকাল ৬ টায় বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ নিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল এবং একই সময় কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার মাত্র ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে, পানি উঠতে শুরু করেছে বসতবাড়িতেও। বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমিতে পানি ওঠায় বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিতরা। জেলার বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোয় শুরু হয়নি ত্রান তৎপরতা। গত রবিবার (১৫ আগস্ট) থেকে শুরু করে আজ সোমবার (২৩ আগস্ট) পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল ইতোমধ্যেই বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এ সকল এলাকার বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি উঠে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন দুর্গতরা। বন্যা কবলিত এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে রোপা আমন ক্ষেত ও বীজতলা, আখ, পাট, তিল ও সবজিবাগানসহ বিভিন্ন ফসল। এদিকে, পানি বাড়ায় তলিয়ে গেছে শাহজাদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ গো-চারণভূমি ও সবুজ ঘাস। ফলে ২ লক্ষাধিক গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গো-খামারিরা। খামারিদের বাড়ির ছোট ছোট খামারগুলোতে গাদাগাদি করে রাখায় গবাদি পশুগুলো নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

বর্ষাকালে সবুজ ঘাস না থাকায় খড়, ভুসি, খৈলসহ প্যাকেটজাত খাবারে নির্ভরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে ব্যয়, কমেছে দুগ্ধ উৎপাদন। অপরদিকে জেলার কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলের নাটুয়ারপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, তেকানি, মুনসুরনগর ও খাসরাজবাড়ি ইউনিয়ন এবং চৌহালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শুরু হওয়া ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও বসতভিটা। নদীর পার থেকে ঘড়-বাড়ি সড়িয়ে নিচ্ছেন ভাঙন কবলিতরা। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, আরও একদিন যমুনা নদীর পানি বাড়বে। তবে বিপদসীমা অতিক্রম নাও করতে পারে। দু-তিনদিন পর থেকে পানি কমতে থাকবে। সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, যমুনা নদীতে পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর রাখছি। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে।