ডা. আজাদ খান, স্টাফ রিপোর্টার জামালপুর: বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা ‘র আয়োজনে বুধবার (২৪ আগষ্ট) সকালে
জামালপুর জেলা পরিষদের হলরুমে নদী, খাল, বিল সংরক্ষণে করণীয় প্রেক্ষিতঃ বানিয়াবাজার খাল শীর্ষক সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে।
উক্ত সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খন্দকার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ জামালপুর। সভাপতিত্ব করেন এমএইচ মজনু মোল্লা, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বাংলাদেশ সাপোর্টার্স ফোরাম ও সিনিয়র সাংবাদিক।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহিদুল ইসলাম খান, এএসপি, জামালপুর, মিজানুর রহমান, সহকারী পরিচালক জেলা মৎস্য অধিদপ্তর, জামালপুর, মাসুদ রানা, সহকারী পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, জামালপুর, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সুজাত আলী, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, জামালপুর।
আরো উপস্হিত ছিলেন-
মোঃ হাফিজুর রহমান পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা জামালপুর পৌরসভা, বিজু আহমেদ, কাউন্সিলর ৩নং ওয়ার্ড, জামালপুর পৌরসভা, রাশেদা ফারুকী, সভানেত্রী অগ্রগামী দুস্হ মহিলা সংস্থা, ফুলবাড়িয়া জামালপুর, মানবাধিকার এবং গণমাধ্যম কর্মী ও বাংলাদেশ প্রেসক্লাব জামালপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মোঃ শফিকুল ইসলাম আজাদ খান,
মোঃ রফিকুল ইসলাম সরকার, নির্বাহী পরিচালক এসডিও, মমতা, আনিসুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক, সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, মোঃ রাফিউর রহমান ডাক্তার, বেলা নেটওয়ার্ক মেম্বার- জান্নাতুল মাওয়া, সাহানাজ বেগম, বিবি হাওয়া, মোসাম্মৎ মুস্তাকীমা, মল্লিকা রানী দাস, মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, শামীমা বেগম রুবি।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন মোঃ এনামুল হক, প্রধান নির্বাহী, সমাজ উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (এসপিকে) ও নেটওয়ার্ক সদস্য বেলা। কিনোট পেপার উপস্থাপন করেন সাজ্জাদ হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, জেজেকেএম গার্লস হাই স্কুল এন্ড কলেজ, ইসলামপুর, জামালপুর।
বেলা ’র ধারনাপত্র ও বানিয়াবাজার খালের অতিত/বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন বেলা’ র বিভাগীয় (ঢাকা ময়মনসিংহ) সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ।
ভু্ূমিকাঃ পুরাতন ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা জামালপুর শহরের পূর্ব পার্শ বরাবর উত্তর হতে দক্ষিণে প্রবাহমান হয়ে পূর্ব ও দক্ষিণ জামালপুর শহরের পানি প্রবাহের প্রধান খাল হলো বানিয়াবাজার খাল, বানিয়াবাজার খাল ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নদী বানার নদীর উৎসমুখের পশ্চিম প্রান্তে উৎপত্তি হয়ে শহরের কুইরা বিলের মাধ্যমে শহর রক্ষা বাঁধ স্লুইসগেইট হয়ে ঝিনাইনদীতে পতিত হয়েছে।
বর্তমানে এই খালের অবস্থা সংকটাপন্ন। এই খালের প্রবাহ ছিল ১৫ কিঃমিঃ পর্যন্ত, বর্তমানে এই খালের দৈর্ঘ ২কিঃ মিঃ হতে পারে। আমাদের জামালপুর শহরের বানিয়াবাজার, মুকুন্দবাড়ী, বন্দেরবাড়ী পর্যন্ত খালটি প্রবাহ পাওয়া যায়।
এই খালটির উপর কুঁড়িটির অধিক সেতু রয়েছে। অপরিকল্পিত ভাবে খালের পাড়ে বাড়ীঘর, দোকানপাট সহ খালের উপর নির্মিত হয়েছে বহুতল ভবন। আমাদের পরিবেশ রক্ষার্থে খালের ভূমিকা অনস্বিকার্য। এই খালকে বাচাতে না পারলে শহরের বিস্তীর্ন এলাকা অপরিকল্পিত নগরায়নের কুফল ভোগ করতে বাধ্য হবে। নগরবাসীকে আবার জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য মহাপরিকল্পনা ও বাজেট প্রয়োজন হবে। অথচ প্রাকৃতিক খালের এই জলাধার বাচাতে পারলে শহরের একটা বড় এলাকা এর সুবিধার আওতায় আসতে পাবে।
বানিয়াবাজার খাল ব্যবস্থাপনাঃ ব্রহ্মপুত্র নদের উৎস হতে উৎপত্তি হয়ে এই খাল জামালপুর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের ভিতরদিয়ে প্রবাহিত হয়ে নদের পানি এলাকাতে প্রবাহিত করে বিস্তির্ন এলাকায় ফসল উৎপাদনে কাজে লাগতো। বানিয়াবাজার খাল এলাকার কুইড়া বিল হতে বিরাট এলাকার জমাট পানি নিস্কাশন করে জলাবদ্ধতা নিরশন করে ফসল ও মৎস উৎপাদনে বিরাট ভূমিকা পালন করতো। সেই খাল বর্তমানে জামালপুর পৌরসভার নিয়ন্ত্রনে একটি প্রবাহমান নালা হিসাবে প্রবাহিত হচ্ছে।
বানিয়াবাজার, মুকুন্দবাড়ী ও বন্দেরপাড়া এলাকার জমাট পানি এই খাল দ্বারা প্রবাহিত হচ্ছে। ১৯৮৮ সালের বন্যার পর এলাকার মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে পৌরসভার সহায়তায় এর উৎসমুখে একটি স্লুইসগেট লাগানো হয়। খালের উপর দিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চল চলে গেছে। এই মহাসড়কের সেতুর উত্তর পার্শের খালের পাড় সুসজ্জিত করা হয়েছে। দক্ষিন পার্শের খালের এক কিলোমিটারের উপর কুড়িটি সেতু বা পথচলার সাকু তৈরী করা হয়েছে।
এই এলাকায় খালের প্রবাহ নির্বিগ্ন করা সম্ভব হয়নাই।খালের প্রবাহ উৎস মুখ বর্তমানে ২০মিটার হলেও মহাসড়কের দক্ষিন পার্শে খাল ১০মিটার এর অধিক নয়। এখন খালের গাইট পিলার নাই, খালের প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। খালের উপর অপরিকল্পিত সেতু নির্মনের ফলে প্রবাহে ব্যপক সমস্যা হচ্ছে। দখল ও দূষণ রোধ করার যথাযথ পদক্ষেপ নাই। খাল ব্যবস্থাপনা ও বর্তমান অবস্থাঃ খালটি যথাযথ পরিচর্যার অভাবে বিপন্নপ্রায় অবস্থায় অবতির্ণ হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় খালটির সংস্কার প্রয়োজন।
সংস্কার না করলে খালের দখল রোধকরা সম্ভব হবে না, দখল রোধকরা না গেলে পৌর এলাকার ৫, ৬, ৭ নং ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের আবার ব্যবস্থা গ্রহনে জমি অধিগ্রহন সহ প্রকল্প বাস্তবায়নে জাতীয় সম্পদ বিনষ্ট হবে। খালের অস্বিত্ব বিনষ্টের জন্য খাল দূষণ ইতিমধ্যেই আরম্ভ হয়েছে, খালে পৌরবর্জ্য ডাম্পিং, পাড় দখল সহ স্থাপনা নির্মানের ফলে বানিয়াবাজার খাল আজ মৃতপ্রায়। জাতীয় স্বার্থে আমাদের বানিয়াবাজার খালের প্রবাহ ঠিক রাখা এবং দখল দূষণ রোধ করে একটি চমৎকার জলাধার তৈরী করা সম্ভব হলে জামালপুর পৌরসভার পূর্বাংশ জলাবদ্ধতা নিরসন সহ এলাকায় বিনোদনের জন্য একটি চমৎকার স্থাপনা তৈরী করা সম্ভব।
পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের নগরের জলাধার নিজেদের স্বার্থে নিজেদেরই রক্ষা করতে হবে। স্থানীয় নেত্রীবৃন্দকে উল্লেখিত বিষয়টিতে মনোনিবেশ করতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমি আমার খালকে ভালবাসী অথচ আমার প্রতিবেশি তা করেনা বিধায় আমরা সুস্থ্য সুন্দর সমাজ গড়তে পারবোনা। সকলেমিলে একসাথে মর্যাদার সাথে কাজটি করতে পারলে সুন্দর, সুস্থ্য, পরিবেশবান্ধব, আধুনিক একটা নগর আমরা গড়ে তুলতে সক্ষম হব।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।