মামুনুর রশীদ ,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজানি ঢলে পানি বৃদ্ধি হয়েছে কুড়িগ্রামের দুধকুমর নদে। বর্ধিত পানি দুকুল ছাপিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। যার ফলে প্লাবিত হয়েছে দুপাড়ের নিম্নাঞ্চল। সেই সাথে ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে নদের ভাঙ্গন। গত কয়েক দিনে ভাঙ্গনের ফলে গৃহহারা হয়েছেন এই নদের দুইপাড়ের অসংখ্য মানুষ। জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়ন দুধকুমর পাড় ঘুরে দেখা গেছে গত ৭ দিনে শুধুমাত্র এই ইউনিয়নেই নদী ভাঙ্গনে বাড়িভিটা হারিয়েছে ২০ টি পরিবার। ভাঙ্গন এখনও অব্যাহত রয়েছে। ইউনিয়নের শত শত বিঘা জমি এখন নদীগর্ভে বিলীন। এছাড়াও সুপারি বাগান, বাশঝাড় সহ অসংখ্য বড় বড় গাছ নদীতে ভেসে গেছে। এই ব্যাপারে রায়গঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাহেজ আলী মিয়া বলেন, আমার ২০ বিঘা জমি নদীত পড়ি গেল।
নিজের বাড়িটাও ভাঙি সরে নিলং। এবার অবস্থা খুব খারাপ। ৯ নং ওয়ার্ডে বাহেজ আলী মিয়া সহ আরও ১০ টি পরিবার বাড়িভিটা হারিয়েছেন নদীতে। ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড দামাল গ্রামে ৮ টি বাড়ি ইতিমধ্যেই ভেঙ্গে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। দামালগ্রাম দুধকুমর পাড়ের বাসিন্দা ছাত্তার মিয়া জানান, বাড়ি যা ভাঙ্গা হইছে আর নদীর পানি যেমনে বাড়তেছে। তাতে আজ কালের মধ্যেই আরও ছয়টা বাড়ি নদীর পেটে যাইবো। তাছাড়া নদের পানি বৃদ্ধিতে বেশ কিছু বাড়িতে পানি চলে এসেছে। যার ফলে ওই পরিবার গুলো গৃহপালিত পশুপাখি নিয়েও দুর্ভোগে পড়েছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় পোষা গরু-ছাগলের খাবার জোগার করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় গবাদিপশু ও হাস-মুরগীর থাকার জায়গার সংকট দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্দোগে বেশ কিছু জিওব্যাগ বালু ভরে নদের পাড়ে ফেলা হয়েছে। যার অনেক গুলোই আবার স্রোতের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে। রায়গঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, জিওব্যাগ কোথাও কোথাও ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। এছাড়াও উপজেলার বেরুবাড়ি ইউনিয়নের ফান্দের চরে আরও ১৫ টি বাড়ি ভাঙ্গার খবর পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে রায়গঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ.স.ম. আব্দুল্লাহ আল ওয়ালিদ মাসুম জানান, গত দুই মাসে আমার ইউনিয়নে ৫০ টিরও বেশি পরিবার দুধকুমার নদের ভাঙ্গনে গৃহহারা হয়েছে। তাদের তালিকা উপজেলা অফিসে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আহমেদ মাসুম জানান, ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, দুধকুমরে পানি বাড়লেও তা এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করে নি। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওমর ফারুক মোহাম্মদ মোক্তার হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। কিছু করা যায় কি না দেখছি।